টাওয়ার ভ্যানে ধাক্কা লোকালের, জখম ৮

দুর্ঘটনার জেরে লোকালটির যাত্রীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়ায়। বন্ধ হয়ে যায় ডাউন লাইনের ট্রেন চলাচল। ট্রেনের চালককে সাসপেন্ড করেছেন কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ০১:০৯
Share:

সংঘর্ষের জেরে চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে যায় টাওয়ার ভ্যানটি। ছবি: প্রকাশ পাল

আড়াই বছর আগে এক চালকের তৎপরতায় শ্রীরামপুর স্টেশনে একই লাইনে থাকা দু’টি ট্রেন সংঘাত এড়াতে পেরেছিল। কিন্তু শনিবার বিকেলে বিপত্তি এড়ানো গেল না। ওই স্টেশনের মুখেই শেওড়াফুলি লোকালের ধাক্কায় একই লাইনে থাকা রেলেরই একটি ‘ইনস্পেকশন কার’ বা ‘টাওয়ার ভ্যান’-এর ৮ জন জখম হলেন। ভ্যানটিকে ঠেলতে ঠেলতে প্রায় দু’শো ফুট দূরে নিয়ে এসে প্রচণ্ড জোরে ব্রেক কষে থামে লোকালটি। সংঘর্ষে ভ্যানটি বেলাইন হয়ে যায়। দুর্ঘটনার জেরে লোকালটির যাত্রীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়ায়। বন্ধ হয়ে যায় ডাউন লাইনের ট্রেন চলাচল। ট্রেনের চালককে সাসপেন্ড করেছেন কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

পূর্ব রেল সূত্রে খবর, আহতেরা সকলেই রেলকর্মী। প্রথমে তাঁদের শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাকি দু’জনকে কলকাতার বি আর সিংহ হাসপাতাল এবং চার জনকে হাওড়া অর্থোপেডিক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। রেলের আধিকারিকদের মতে, লোকালটি ‘হোম সিগন্যাল’ (স্টেশনে ঢোকার আগের সিগন্যাল) ভাঙাতেই দুর্ঘটনা। দাবি, টাওয়ার ভ্যানটি সিগন্যাল েমনেই চলছিল। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় যাত্রীদের কারও আঘাত লাগেনি। উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ দুর্ঘটনার জেরে বাতিল করা হয় দশ জোড়া লোকাল।

পূর্ব রেল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীরামপুর স্টেশনের গুদামের কাছে টাওয়ার ভ্যানটি দাঁড়িয়ে ছিল। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ সেটি অ্যাডিশনাল (অতিরিক্ত) লাইন থেকে রিভার্স লাইনে (যে লাইন দিয়ে আপ-ডাউন দু’দিকের ট্রেনই চালানো হয়) উঠছিল। সেই সময়ে আপ শেওড়াফুলি লোকাল রিষড়ার দিক থেকে শ্রীরামপুর স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢোকার জন্য রিভার্স লাইন ধরেই আসছিল।

Advertisement

সংঘর্ষের আওয়াজে স্থানীয়রা ছুটে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। আসে পুলিশ, রেল পুলিশ এবং হাওড়ার ডিআরএম-সহ পূর্ব রেলের কর্তারা। পৌঁছোয় রেলের রিলিফ ট্রেন‌, মেডিক্যাল ভ্যানও। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভ্যানটি চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছে। ট্রেনটিতে ছিলেন বৈদ্যবাটীর বাসিন্দা প্রশান্ত বারিক। তিনি বলেন, ‘‘প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ট্রেন থামতেই নেমে পড়ি। আরও বড় কিছু ঘটেনি, এটাই রক্ষা!’’

ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানান শ্রীরামপুরের বিজেপি প্রার্থী দেবজিৎ সরকার। শ্রীরামপুরের তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও আহতদের দেখতে ওয়ালশ হাসপাতালে গিয়ে একই দাবি জানান। তাঁর তোপ, ‘‘রেলে নিরাপত্তার বালাই নেই। লোকালই ঠিক করে চালাতে পারেন না আবার বুলেট ট্রে‌নের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এবং রেলমন্ত্রী দু’জনেই অপদার্থ।’’

দুর্ঘটনার জেরে এ দিন বিকেলের পর থেকে হাওড়ামুখী যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ে। সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ স্বাভাবিক হয় ট্রেন চলাচল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন