ভোটার-স্বার্থেই চাই আধাসেনা, জানাল কমিশন

সরকারের সঙ্গে সংঘাত চান না। তবে পুরভোটে তিনি যে কেন্দ্রীয় বাহিনী চান, শুক্রবার ফের তা জানিয়ে দিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। কেন তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী চান, এ দিন পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। তাঁর বক্তব্য, পুরভোটে মানুষের মনে আস্থা আনতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা দরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৮
Share:

সরকারের সঙ্গে সংঘাত চান না। তবে পুরভোটে তিনি যে কেন্দ্রীয় বাহিনী চান, শুক্রবার ফের তা জানিয়ে দিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়।

Advertisement

কেন তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী চান, এ দিন পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। তাঁর বক্তব্য, পুরভোটে মানুষের মনে আস্থা আনতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা দরকার। পরে তিনি বলেন, “নির্বাচনের দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের দেখলে ভোটারেরা বাড়তি ভরসা পাবেন।” তাই ৯২টি পুরসভায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তত ৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাই বলে জানিয়েছে কমিশন।

কিন্তু রাজ্য সরকারের দাবি, সুষ্ঠু ও অবাধ পুরভোটের জন্য তাদের পুলিশই যথেষ্ট। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দরকার নেই। পুরভোট নিয়ে এ দিন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সুশান্তবাবু। তিনি জানান, স্পর্শকাতর বুথে আধাসেনার প্রয়োজন আছে। কমিশন সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে নবান্নকে চিঠি দিতে চলেছেন সুশান্তবাবু। আর নবান্নের এক কর্তা জানান, কমিশনের সুপারিশ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানোটা দস্তুর। তবে ইচ্ছে করলে রাজ্য তা না-ও করতে পারে। সে-ক্ষেত্রে অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে তারা কোনও সংঘাতের পথে যাবে না বলে কমিশন সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।

Advertisement

পুরভোটের দিন ঘোষণার আগে থেকেই সরকারের কর্তারা জানিয়ে আসছেন, নির্বাচন করার জন্য রাজ্যের পুলিশই যথেষ্ট। দরকারে রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের অধীন র্যাফ-কেও কাজে লাগানো যেতে পারে। ভোটের দিন ঠিক হওয়ার পরে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমও জানিয়ে দেন, পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনও প্রয়োজন নেই। তাঁর সেই বক্তব্যই এ দিন শোনা গিয়েছে স্বরাষ্ট্রসচিবের গলায়।

কমিশনারের ঘরে এ দিনের বৈঠকে ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিজি জিএমপি রেড্ডি এবং নগরপাল সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। পরে সুশান্তবাবু জানান, প্রায় ৪০ মিনিটের বৈঠকে বাসুদেববাবু তাঁকে জানিয়েছেন, পুর নির্বাচনে রাজ্য পুলিশই যথেষ্ট। তবে রাজ্য পুলিশে ঘাটতি দেখা দিলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কথা ভাবা হবে। ইএফআর, র্যাফ-কেও কাজে লাগাতে চায় সরকার। কমিশনার তাঁকে জানান, স্পশর্কাতর বুথের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার প্রয়োজন আছে।

কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়ার জন্য রাজ্য সরকার যথেষ্ট উদ্যোগী না-হলে কমিশন কী করবে?

“আমার কাজ সরকারকে জানানো। তবে আমি কোনও সংঘাতে যাব না। কারণ এই ব্যাপারে কমিশনের হাতে যথেষ্ট আইনি রক্ষাকবচ নেই,” জবাব সুশান্তবাবুর।

পঞ্চায়েত ভোট সুষ্ঠু ভাবে করার জন্য আগেকার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে আধাসেনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত লড়াই চালিয়েছিলেন। তাঁর উত্তরসূরি সুশান্তবাবু অবাধ ও সুষ্ঠু পুরভোট চাইলেও এই নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তায় হাঁটতে নারাজ। আর সরকারের বক্তব্য, কোনও আদালত বলে দেয়নি যে, রাজ্য ও কেন্দ্রের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে গুণগত ফারাক আছে। পুর নির্বাচনে সর্বাধিক পাঁচ হাজার ভোটকেন্দ্র হবে। ওই সব কেন্দ্রে মোতায়েন করার মতো যথেষ্ট সশস্ত্র পুলিশ রয়েছে রাজ্যের হাতে। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই।

বিরোধীরা অবশ্য এই ব্যাপারে রাজ্যের সমালোচনা করতে ছাড়ছেন না। আধাসেনা মোতায়েনের ক্ষেত্রে সরকারের অনীহাকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলেন, “‘স্বরাষ্ট্রসচিব সরকারের প্রতিনিধি। তাই তিনি সরকার ও শাসক দলের কথা বলেছেন। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মানুষের কথা ভেবে আধাসেনা চাইছেন। আমরাও মনে করি, রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতেই পুরভোট হওয়া উচিত।” উপনির্বাচন ও পুরভোটে সরকারের দু’রকম দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন সিপিএম নেতা রবীন দেব। তিনি বলেন, “রাজ্যে দু’টি উপনির্বাচনে এই স্বরাষ্ট্রসচিবই কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছিলেন। অথচ এখন ৯২টি পুরসভার ভোটের জন্য তার প্রয়োজন নেই বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা!” স্বরাষ্ট্রসচিব এ দিনের বৈঠকে শাসক দলের কথাই জানিয়ে এসেছেন বলে অভিযোগ করেন রবীনবাবু। বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ মনে করনে, “কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট অসম্ভব।”

সুশান্তবাবু জানান, বৈঠকে পুরভোটের পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজ্য জানিয়েছে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে অন্তত দু’জন সশস্ত্র রাজ্য পুলিশকর্মী থাকবেন। বুথ পাহারায় থাকবে লাঠিধারী পুলিশ। তবে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে কত সশস্ত্র পুলিশ থাকবে, তা নির্ভর করবে বুথের সংখ্যার উপরে। স্পর্শকাতর বুথে অতিরিক্ত পুলিশ থাকবে।

কমিশন জানিয়েছে, মনোনয়নপত্র পেশ ও প্রচারপর্বে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকে। প্রচার পর্বে সব দল যাতে সমান সুযোগ পায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে পুলিশকে। যে-৯২টি পুরসভায় ভোট হচ্ছে, তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি ওয়ার্ড রয়েছে কলকাতায় ১৪৪টি। ওয়ার্ড সব চেয়ে কম পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষীরপাই ও খড়ার পুরসভায়। মাত্র ১০টি করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন