পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এসআইআর-এ বিশেষ বন্দোবস্তের ভাবনা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষায় (এসআইআর) পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক-সহ ভিন্রাজ্যে থিতু বাংলার বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন। ভিন্রাজ্যের ভোটার তালিকায় যাতে কারও নাম না থেকে যায়, কেউ যাতে দুই জায়গায় ভোট দিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে তৎপরতা শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, এসআইআর-এর জন্য ভোটারদের যে ফর্মটি পূরণ করতে হবে, তাতে পরিযায়ীদের জন্য আলাদা অংশ থাকবে। তাঁরা যে শুধুমাত্র বাংলার ভোটার, অন্য রাজ্যের তালিকায় যে তাঁদের নাম নেই, তা লিখিত ভাবে জানাতে হবে ফর্মের ওই অংশে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা দেশে এক জনের একটিই ভোট নিশ্চিত করতে চায় কমিশন। সেই পরিকল্পনা চলছে।
কমিশন সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গের যাঁরা অন্য রাজ্যে কর্মরত, তাঁদের আলাদা করে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। তাঁরা যেখানে কাজ করেন, সেখানকার ভোটার তালিকায় যে তাঁদের নাম নেই এবং তাঁরা যে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার হিসাবেই নিজেদের নাম নথিভুক্ত রাখতে চান, সেই মর্মে ঘোষণাপত্র দিতে হবে। এক জন যাতে একাধিক জায়গায় ভোট দিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা।
পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যে এসআইআর-এর আবেদনপত্র (এনুমারেশন ফর্ম) ছাপানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। কমিশন সেই মর্মে প্রতি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের (সিইও) নির্দেশও দিয়েছিল। রাজ্যে মোট ভোটার সংখ্যার দ্বিগুণ ফর্ম ছাপাতে হবে। সিইও দফতর সূত্রে খবর, বাংলায় ৭.৬৫ কোটি ভোটার রয়েছেন। ফলে ১৫ কোটি ফর্ম ছাপাতে হবে। এক জন ভোটারের জন্য ছাপানো হবে দু’টি করে আবেদনপত্র। একটি থাকবে ভোটারের কাছে। অন্যটি বুথ লেভেল আধিকারিকেরা (বিএলও) নিয়ে আসবেন। অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যেতে পারে। কমিশন নির্দেশ দিয়েছিল, গতবারের এসআইআর ধরে প্রতিটি রাজ্যের ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি-সহ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর ইতিমধ্যে সেই কাজ শেষ করে ফেলেছে। পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর শেষ বার হয়েছিল ২০০২ সালে।
পশ্চিমবঙ্গে এমনিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম পৌঁছে দেওয়ার কথা প্রশাসনের। তবে পরিযায়ীদের জন্য অনলাইনেও ফর্ম পূরণের বন্দোবস্ত থাকবে। মূল ফর্মের মধ্যে একটি কিউআর কোড থাকতে পারে। তার মাধ্যমে ফর্মটি অনলাইনে পূরণ করা যেতে পারে। পরিযায়ীদের কাছ থেকে বাংলায় আলাদা কোনও নথি চাওয়া হবে না বলেই এখনও পর্যন্ত খবর।
সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, যদি কারও নাম বা তাঁর বাবা-মায়ের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় থেকে থাকে, তবে নতুন ফর্মে এপিক নম্বর এবং পার্ট নম্বর লিখলেই হবে। যদি শুধু বাবা-মায়ের নাম আগের তালিকায় থাকে এবং নিজের নাম না থাকে, সে ক্ষেত্রে বিস্তারিত জানিয়ে কমিশন নির্ধারিত ১২টি নথির যে কোনও একটি (আধার কার্ড-সহ) জমা দিতে হবে। এ ছাড়া, যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকের নাম বা তাঁদের বাবা-মায়ের নাম আগের তালিকায় নেই, তাঁরা কী করবেন, তা কমিশন আলাদা করে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেবে। গোটা প্রক্রিয়ায় যাতে কারও কোনও সমস্যা না হয়, কারও যাতে বুঝতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ২২ লক্ষ বা তার বেশি হতে পারে। অনেকের মতে, সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি হবে। শুধু কোভিড অতিমারির সময়েই ৪০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে রাজ্যে ফিরিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাঁদের বিষয়ে যথেষ্ট প্রস্তুত হয়েই তাই মাঠে নামতে চাইছে কমিশন।