State news

দশক দশক ধরে বাংলায় কুস্তি-দিল্লিতে দোস্তি, রিং থেকে ছিটকে যাওয়ার দশা কংগ্রেসের

বক্সিং রিঙের বেড়ায় আগেই পিঠ ঠেকে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের। এ বার যেন একেবারে রিঙের বাইরে ছিটকে যাওয়ার উপক্রম।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৮ ২২:৪৩
Share:

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

খাতায়-কলমে এখনও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার প্রধান বিরোধী দল। বাংলা থেকে লোকসভা আসন জেতার নিরিখেও দ্বিতীয় স্থানে দলটা। কিন্তু বাস্তব হিসাবটা যে পুরো অন্য রকম, তা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় আজকাল অকপটেই স্বীকার করে নিচ্ছেন বিধান ভবনের কর্তারা। বক্সিং রিঙের বেড়ায় আগেই পিঠ ঠেকে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের। এ বার যেন একেবারে রিঙের বাইরে ছিটকে যাওয়ার উপক্রম।

Advertisement

কেন এই অবস্থা? দলেরই একাংশ দায়ী করছে ‘বাংলায় কুস্তি, দিল্লিতে দোস্তি’ নীতিকে। দলের অন্য অংশ সরাসরি হাইকম্যান্ডের দিকে আঙুল তুলতে দ্বিধান্বিত। তবে ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তৃণমূলনেত্রীর প্রতি সনিয়া-রাহুলের নরম মনোভাব কোনও মতেই মানা হবে না।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৪টিই জিতে নিয়েছিল তৃণমূল। কংগ্রেস পেয়েছিল ৪টি। সিপিএম এবং বিজেপি পেয়েছিল ২টি করে আসন। সেই হিসেব অনুযায়ী কংগ্রেস দ্বিতীয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: অটলকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আক্রান্ত অগ্নিবেশ

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে লড়েছিল কংগ্রেস। সে নির্বাচনে বামেদের ভোট ছিল ২৬.৩৬ শতাংশ, কিন্তু বামেরা আসন পেয়েছিল ২৮টি। আর কংগ্রেস ১২.২৫ শতাংশ ভোট পেয়েও ৪৪টি আসনে জিতেছিল। আসনসংখ্যার নিরিখে সে বারও কংগ্রেসই দ্বিতীয় স্থান পায়। অতএব রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদাও পায়।

কিন্তু কী অবস্থা এখন? পঞ্চায়েত হোক বা বিধানসভার উপনির্বাচন, মনোনয়নে বাধা না পেলে বামেরা সব স্তরেই প্রার্থীটা অন্তত দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিজেপি দিন দিন বাড়ছে এবং প্রায় সব নির্বাচনেই বাম-কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে রাজ্যের মূল বিরোধী শক্তি হয়ে উঠে আসছে। আর কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে। এ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকাতেই এখন নির্বাচনে লড়ার ব্যাপারে দু’বার ভাবতে হচ্ছে কংগ্রেসকে।

সনিয়া গাঁধী এবং রাহুল গাঁধীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নয়াদিল্লিতে। —ফাইল চিত্র।

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে বেশ কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়েছে বাংলায়। প্রায় প্রতিটি উপনির্বাচনের আগেই কংগ্রেসকে ভাবতে হয়েছে, প্রার্থী দেওয়া উচিত হবে কি না। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দেয়নি বামেরা। ওই আসন ছাড়া হয়েছিল সবঙের দীর্ঘ দিনের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়াকে। কিন্তু মানস তৃণমূলে যাওয়ার পরে বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন। উপনির্বাচনে মানসের স্ত্রী ওই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হন। বামেরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, কংগ্রেসের সঙ্গে আর সমঝোতা করা হবে না, সবং কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়া হবে। বিজেপি-ও ময়দানে নেমে পড়ে নিজেদের মতো করে। কিন্তু কয়েক দশক ধরে সবঙের দখল ধরে রাখা কংগ্রেস বেজায় আতান্তরে পড়ে যায়। প্রার্থী দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতে থাকে বিধান ভবন। প্রার্থী না দিলে মেনে নেওয়া হয় যে, দশকের পর দশক ধরে যে আসন কংগ্রেসের দখলে ছিল, শুধুমাত্র বিধায়ক দল বদলেছেন বলে সে আসনে কংগ্রেস শেষ হয়ে গিয়েছে। আর প্রার্থী দিলে চতুর্থ স্থানে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে এক বেজায় অস্বস্তি।

অবশেষে সবঙে প্রার্থী দিয়েছিল কংগ্রেস। সে প্রার্থী চতুর্থ স্থানই পেয়েছিলেন। পরে উত্তর ২৪ পরগনার নোয়াপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের আগেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ওই আসনও ২০১৬ সালে কংগ্রেসকে ছেড়েছিল বামেরা। কংগ্রেস প্রার্থী মধুসূদন ঘোষ জেতেন। তাঁর প্রয়াণে নোয়াপাড়া উপনির্বাচনের মুখোমুখি হয়। প্রদেশ কংগ্রেসের একটি অংশ চেয়েছিল প্রার্থী না দিয়ে বামেদের সমর্থন করতে। তাতে মুখ রক্ষা হত। কারণ নোয়াপাড়াতেও আলাদা লড়ে চতুর্থ স্থানে পড়তে হলে প্রমাণ হত যে, ২০১৬ সালে কংগ্রেস যে সব আসনে জিতেছিল, সেগুলির অধিকাংশেই জয় মিলেছিল আসলে বামেদের ভোটে। কিন্তু কংগ্রেসকে সেই মুখরক্ষার সুযোগ বামেরা দেয়নি। নোয়াপড়ার উপনির্বাচনেও কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সংস্রব রাখার আগ্রহ বামেরা দেখায়নি। ফলে কংগ্রেসকে আলাদা প্রার্থী দিতেই হয়। সেই প্রার্থীও সবঙের প্রার্থীর মতোই চতুর্থ স্থান পান।


অধীর-প্রদীপ-সোমেন, প্রদেশ কংগ্রেসের প্রধান তিন মুখ।

এর পরে মহেশতলা। তৃণমূল বিধায়ক কস্তুরী দাসের প্রয়াণে কয়েক মাস আগে উপনির্বাচন হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা বিধানসভা কেন্দ্রে। ২০১৬ সালের ভোটে সমঝোতা ছিল বলে ওই আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি। লড়েছিল সিপিএম। কিন্তু এখন আর বামেদের সঙ্গে কোনও নির্বাচনী সমঝোতা কংগ্রেসের নেই। তাও মহেশতলা কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়ার কথা কংগ্রেস ভাবেইনি।

এর মাঝেই হয়ে গিয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। প্রবল হিংসার আবহেই পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে, সে কথা ঠিক। জনমতের সঠিক প্রতিফলন পঞ্চায়েতে একেবারেই ঘটেনি বলে বিরোধী দলগুলির দাবি। কিন্তু তার মধ্যেও পঞ্চায়েতের তিন স্তর মিলিয়ে সাড়ে ছ’হাজারের মতো আসনে জিতে এসেছে বিজেপি। কিন্তু কংগ্রেসের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক কম। কংগ্রেসের গড় হিসেবে দীর্ঘ দিন পরিচিত ছিল যে দুই জেলা, সেই মুর্শিদাবাদ-মালদহেও সে ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি দল। অন্য জেলাগুলিতে প্রায় অনুবীক্ষণে খুঁজতে হচ্ছে অধীর-সোমেন-প্রদীপদের দলকে।

আরও পড়ুন: মুছে গিয়েছে ভেদাভেদ, বাজপেয়ীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল

আরও পড়ুন: অটলকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আক্রান্ত অগ্নিবেশ

বাংলায় এত খারাপ অবস্থা কেন হল কংগ্রেসের? লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে আসন জয়ের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও গত দু’বছরে নিজেদের জনভিত্তি এমন হু-হু বেগে কেন হারিয়ে ফেলল কংগ্রেস? আসনসংখ্যায় করুণ দশা হলেও, ভোট শতাংশের নিরিখে বামেরা এখনও কিছুটা সম্মানজনক জায়গায় রয়েছে। কংগ্রেসকেই কেন সবচেয়ে বেশি প্রত্যাখ্যানের মুখে পড়তে হল বাংলায়?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এক দিনে হয়নি এই অবস্থা। দশকের পর দশক ধরে ক্ষইতে ক্ষইতে আজ এমন ধ্বংসস্তূপে এসে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক। বাংলায় যে দল কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ, জাতীয় রাজনীতিতে বার বার সেই দলের সঙ্গেই হাত মেলাতে দেখা গিয়েছে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। তাতে কংগ্রেসের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে বলে বিশ্লেষকদের একাংশের মত।

এই বিশ্লেষণ নেহাৎ অমূলক নয়। বাম জমানায় পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে যখন সিপিএমের হাতে মার খেয়েছেন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা, তখন দিল্লিতে কংগ্রেস নেতৃত্ব নানা ইস্যুতে বামেদের পাশে নিয়ে রাজনীতি করেছে। তৃণণূল তৈরি হওয়ার পরেও সেই ছবি অব্যাহত ছিল। বাংলার কংগ্রেস বিরোধিতা করেছে সিপিএমের। কিন্তু দিল্লিতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-১ সরকার চালিয়েছে বামেদের সমর্থন নিয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলকেই বিশ্বাসযোগ্য বাম বিরোধী হিসেবে ধরে নিয়েছেন কংগ্রেস সমর্থকরা।

একই ছবি তৃণমূল জমানাতেও। বাংলায় কংগ্রেসকে প্রায় রোজ ভাঙিয়ে নিচ্ছে তৃণমূল। ১৭ জন কংগ্রেস বিধায়ক তৃণমূলে নাম লিখিয়ে দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। ভয় দেখিয়ে, মামলায় ফাঁসিয়ে, চাপ দিয়ে বা লোভ দেখিয়ে কংগ্রেসের নেতাদের তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব রোজ অভিযোগ করছেন। কিন্তু দিল্লিতে সনিয়া গাঁধী এবং রাহুল গাঁধী সাদরে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মোদী বিরোধিতায় তথা ধর্মনিরপেক্ষতার স্বার্থে কংগ্রেস এবং তৃণমূল একই মেরুতে— এমন এক বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এই নীতিকে দ্বিচারিতা হিসেবেই দেখেছেন বিভিন্ন স্তরের কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা। তৃণমূলের সঙ্গেই যদি থাকতে হয়, তা হলে সরাসরি তৃণমূলে নয় কেন? এমন প্রশ্ন তুলে অনেকে তৃণমূলে ভিঁড়ে গিয়েছেন। আর বাকিরা খোঁজার চেষ্টা করেছেন, কে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে পারবে। তাঁরা ঝুঁকে পড়েছেন বিজেপির দিকে। বলছেন বিশ্লেষকরা।

তবে সকলে এই তত্ত্বের সঙ্গে একমত নন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক তথা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘এ রাজ্যে কংগ্রেসের ক্ষয়ের পিছনে অত গভীর কোনও রাজনৈতিক কারণ নেই।’’ তিনি বলছেন, ‘‘তৃণমূলটাও তো কংগ্রেসই। এ রাজ্যে জাতীয় কংগ্রেসের চেয়ে তৃণমূল কংগ্রেসটা অনেক বেশি শক্তিশালীও। তাই কংগ্রেসিরা ভাবছেন, শক্তিশালী কংগ্রেসটাতেই থাকব। চলে যাচ্ছেন তৃণমূলে।’’ কিন্তু তা হলে তো ২০১১ সালের পর থেকেই হু-হু করে কংগ্রেস ছেড়ে সকলে তৃণমূলে চলে যেতে পারতেন। কেন গেলেন না? এখন কেন যাচ্ছেন? অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘‘একটা কারণ হল তৃণমূলের চাপ। নানা ভাবে চাপ দিয়ে কংগ্রেস বিধায়কদের বা অন্য স্তরের জনপ্রতিনিধিদের তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে এখন। আর একটা কারণ হল, বড় নেতার অভাব, গৌরবের অভাব। কেন্দ্রে আর কংগ্রেস ক্ষমতায় নেই। বাংলার কংগ্রেসে আর তেমন কোনও সর্বভারতীয় স্তরের নেতা নেই। তাই কংগ্রেসে যাঁরা ছিলেন বা রয়েছেন, তাঁরা ভাবছেন, বাংলায় এই দলের পক্ষে আর খুব একটা এগনো সম্ভব নয়।’’

বিশ্লেষকদের মত নানা রকম হলেও, বাংলার কংগ্রেস নেতাদের অনেকেই কিন্তু রাজ্যে দলের এই দুরবস্থার জন্য জাতীয় নেতৃত্বের দিকেই আঙুল তুলছে। তবে সকলে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না। যাঁরা প্রকাশ্যেই মুখ খুলছেন, তাঁদের মধ্যে পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় অন্যতম। তীব্র ক্ষোভ নিয়ে আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি বললেন, ‘‘কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ রাজ্যে দলটা তুলে দিলেই তো পারেন। রাখার দরকারটা কী?’’ সম্প্রতি ১০ জনপথে সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের ছবি বেজায় চটিয়েছে পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ককে। তিনি প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘ওই ছবি দেখার পরে আর কেউ কংগ্রেসটায় থাকতে চাইবেন? তৃণমূল রোজ আমাদের দলটাকে ভাঙাতে চাইছে, রোজ কংগ্রেসটাকে শেষ করতে চাইছে। কংগ্রেস কর্মীরা রোজ মার খাচ্ছেন, তাঁদের নামে মিথ্যে মামলা দেওয়া হচ্ছে। তাও তাঁরা কংগ্রেসের পতাকা ছাড়ছেন না। কিন্তু এত লড়াইয়ের পরে তাঁরা দেখছেন, এখানে যা-ই হোক, দিল্লিতে কংগ্রেস-তৃণমূল মিলে গিয়েছে। ব্যাপারটা কি আদৌ ভাল?’’

দিল্লিতে মমতার সঙ্গে রাহুল-সনিয়ার সাম্প্রতিক বৈঠক নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। রাজ্যে কংগ্রেসের জনভিত্তিতে ধস অবিরাম কেন, সে প্রশ্নেরও উত্তর তিনি দেননি। তবে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নানা ভাবে তিনি আশ্বস্ত করে চলেছেন যে, বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে কোনও জোটে কংগ্রেস যাবে না।

অধীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নেতা তথা প্রফেশনালস’ কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি ঋজু ঘোষাল বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন। তবে সরাসরি জবাব দিতে চাইলেন না। ঘুরিয়ে উত্তর দিলেন। অধীরের মতো তাঁরও দাবি, তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও জোট নেই, তৃণমূলই প্রধান প্রতিপক্ষ। কিন্তু কংগ্রেস হাইকম্যান্ড কি আদৌ তা মনে করছে? না কি বিজেপি বিরোধিতায় তৃণমূলকে পাশে পেতে চাইছে? ঋজুর দাবি, তৃণমূলকে একটুও পাশে পেতে চাইছে না কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। তৃণমূলনেত্রীই বরং কংগ্রেসের সঙ্গ চাইছেন। ঋজু বললেন, ‘‘১০ জনপথে সনিয়াজি, রাহুলজির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের ছবিটা একবার দেখুন, তা হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে সবটা।’’ কী রয়েছে ছবিতে? ঋজু এ বার ‘বিহেভিয়ারাল সায়েন্সের ব্যাখ্যা টেনে আনলেন। বললেন, ‘‘ওই ছবিতে দেখবেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের হাঁটুর উপরে হাত দুটো রেখে বসে রয়েছেন। হাঁটুতে হাত রেখে বসার অর্থ কী? অর্থ হল, উনি আত্মবিশ্বাসী নন। সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধীর সঙ্গে বৈঠক মমতা করেছেন ঠিকই। কিন্তু মমতা জানেন যে, কংগ্রেস নেতৃত্ব আর তাঁকে বিশ্বাস করেন না।’’ বিশ্বাস যদি না করবেন, তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করবেন কেন সনিয়া-রাহুল? ঋজুর ব্যাখ্যা, ‘‘কেউ যদি যেচে বাড়িতে যান, তাঁকে কি অপমান করে তাড়িয়ে দেবেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখা করতে চেয়েছেন। সনিয়াজি-রাহুলজি দেখা করেছেন। সৌজন্য বজায় রেখে যেটুকু কথা বলতে হয়, বলেছেন। এতে জোটবার্তা খোঁজার কোনও অর্থ নেই।’’

অরুণাভ ঘোষ, ওমপ্রকাশ মিশ্রদের মতো তাত্ত্বিক নেতারা বা মনোজ চক্রবর্তী, শঙ্কর মালাকার, মিল্টন রশিদদের মতো বিধায়করাও বার বার বলছেন— তৃণমূলের সঙ্গে জোটের কোনও প্রশ্ন নেই। বামেদের সঙ্গে জোটের চেষ্টা একাংশের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্যদের মতো নেতারা বামেদের সঙ্গে জোট নিয়েও খুব একটা আগ্রহী নন বলে খবর। পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস বাংলায় একলা চলবে এবং ৪২টি আসনেই লড়বে— এমনও শোনা যাচ্ছে বিধান ভবনে। কিন্তু সে কথা নীচের স্তরের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে আদৌ কতটা বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে, বলা কঠিন। কংগ্রেস একলা লড়ে আদৌ কি দাগ কাটতে পারবে আর? সে প্রশ্নও জাগছে অনেকের মনেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন