রেলশহরে চাপের মুখে গেরুয়া শিবির

দলে ভাঙন, তদন্ত কমিটি গড়ছে বিজেপি

রেলশহরে দলের মধ্যে ভাঙন ধরায় বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে বিজেপিতে। দলের নীচুতলার কর্মী- সমর্থকদের একাংশ রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছেন। শহর এবং জেলা নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন অনেকে। পরিস্থিতি দেখে খড়্গপুর নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০০:০৮
Share:

রেলশহরে দলের মধ্যে ভাঙন ধরায় বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে বিজেপিতে। দলের নীচুতলার কর্মী- সমর্থকদের একাংশ রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছেন। শহর এবং জেলা নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন অনেকে। পরিস্থিতি দেখে খড়্গপুর নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। সোমবার মেদিনীপুরে এসে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দিলীপ ঘোষ বলেন, “রাজ্য থেকে খড়্গপুরের জন্য তদন্ত কমিটি হচ্ছে। তদন্তে যদি দেখা যায়, দলের কেউ দলবিরোধী কাজে যুক্ত, তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাই নেওয়া হবে।” শীঘ্রই তদন্ত কমিটির সদস্যরা মেদিনীপুরে আসবেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। দিলীপবাবু মেনে নেন, “চেষ্টা করেও খড়্গপুরকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়!”

Advertisement

এদিন দুপুরে মেদিনীপুরে দলের জেলা কার্যালয়ে এক বৈঠক হয়। দিলীপবাবুর পাশাপাশি বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় সহ জেলা নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের শুরুতেই একাংশ নেতা নিজেদের অসন্তোষ জানাতে শুরু করেন। এক নেতা তো বলেই দেন, “শুধু স্বচ্ছ ভারত করলে হবে না! দলের সবস্তরের নেতাদেরও স্বচ্ছ করতে হবে!” বেশ কিছু এলাকায় সংগঠন পুনর্গঠনের দাবি ওঠে। একাধিক শাখা সংগঠনে রদবদলের দাবিও সামনে আসে। পরিবর্তীত এই পরিস্থিতিতে অবশ্য বৈঠক বেশিক্ষণ হয়নি। দিলীপবাবু জানিয়ে দেন, তিনি ফের ২৫ জুন মেদিনীপুরে আসবেন। ওই দিন ফের জেলার বৈঠক হবে। দলের এক সূত্রে খবর, ৬-৭টি ব্লকে সংগঠন পুনর্গঠনের জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে খড়্গপুর- ২, চন্দ্রকোনা- ২ প্রভৃতি ব্লক। বস্তুত, খড়্গপুর নিয়ে দলের একাংশ কর্মী- সমর্থকের ক্ষোভ যে কী পর্যায়ে পৌঁছেছে, মেদিনীপুরে এসে তা টের পেয়েছেন দিলীপবাবু। প্রবল চাপের কাছে কংগ্রেস ভাঙন ঠেকাতে পারলেও বিজেপি কেন পারল না, এই প্রশ্নও ওঠে। দলের একাংশের বক্তব্য, গলদটা হয়েছে গোড়াতেই। প্রার্থী বাছাইয়ের সময় আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। পুরনো কর্মীদের ব্রাত্য রেখে নতুনদের টিকিট দেওয়া ঠিক হয়নি। পুরনোদের প্রার্থী করা হলে আজ এই পরিস্থিতি হত না। টাকার বিনিময়ে টিকিট বিলি হয়েছে বলেও দলের মধ্যে অভিযোগ ওঠে। দিলীপবাবুর অবশ্য আশ্বাস, “সমস্ত অভিযোগই খতিয়ে দেখা হবে।”

বস্তুত, রেলশহরে বিজেপিকে ভেঙেই পুরবোর্ড দখলের পথে এগোয় তৃণমূল। পুরভোটে গেরুয়া- শিবিরের প্রাপ্ত আসন ছিল ৭। একে একে ৫ জন তৃণমূলে যোগ দেন। শাসক শিবিরে নাম লেখান দলের তিনবারের জয়ী কাউন্সিলর বেলারানি অধিকারীও। পুরবোর্ড গঠনের দিন যে একটি ভোট তৃণমূল বেশি পেয়েছে এবং যে একটি ভোট বাতিল হয়েছে, তা গেরুয়া- শিবির থেকে এসেছে বলেও খড়্গপুরে গুঞ্জন। ফলে, রেলশহরে বিজেপি কার্যত শূন্যে এসে ঠেকেছে! বিজেপির জেলা সভাপতি তুষারবাবুর অবশ্য দাবি, “পুলিশ- শাসক- মাফিয়া মিলে পুরবোর্ড গঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।” কর্মীদের ক্ষোভ সামাল দিতে দলবদল করে তৃণমূলে যাওয়া চার কাউন্সিলর যথাক্রমে সুনীতা গুপ্ত, লক্ষ্মী মুর্মু, জগদম্বা প্রসাদ গুপ্ত এবং পূজা নায়ডুর প্রাথমিক সদস্যপদ খারিজ করে জেলা বিজেপি। তিনবারের জয়ী কাউন্সিলর বেলারানি অধিকারীর সক্রিয় সদস্যপদও খারিজ করা হয়। পরে অবশ্য দলছুট কাউন্সিলরদের দলে ফেরানো নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন নেতৃত্ব। এখনও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত আলোচনা কিংবা সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিবর্তীত এই পরিস্থিতিতে সংগঠনে কী ভাবে ঝাঁকুনি আনা যায়, ২৫ জুনের বৈঠকে সেই নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। বিজেপির এক জেলা নেতার কথায়, “রাজ্য থেকে তদন্ত কমিটি হচ্ছে। খড়্গপুর নিয়ে এই ময়নাতদন্তটা জরুরিই ছিল।” অন্য এক নেতার অবশ্য মন্তব্য, “তদন্তে দোষীদের নাম সামনে আসবে কি না সন্দেহ! কারা তদন্ত করবেন, সবটাই তার উপর নির্ভর করছে!’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement