Salary Increment for Minister and MLAs

রাজ্যপালের অনুমোদনের পরেও মন্ত্রী, বিধায়কদের বর্ধিত বেতন পেতে সময় লাগবে আরও এক মাস

রাজ্যের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি করার জন্য যে বিল দু’টি আনা হয়েছিল বিধানসভায়, তাতে এ বছর ১৬ মার্চ স্বাক্ষর করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১২:২০
Share:

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী, বিধায়কদের বর্ধিত বেতন পেতে সময় লাগতে পারে আরও এক মাস। সম্প্রতি বিধানসভা সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি করার জন্য যে বিল আনা হয়েছিল বিধানসভায়, তাতে মার্চ মাসে স্বাক্ষর করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাই মনে করা হয়েছিল, নতুন অর্থবর্ষ শুরু হওয়ার আগেই বিলে সম্মতি মেলায় এপ্রিল মাস থেকেই বর্ধিত বেতনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে যাবে। কিন্তু এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে জানা যাচ্ছে, বর্ধিত হারে বেতন পেতে রাজ্যের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বিধায়কদের অপেক্ষা করতে হবে আরও এক মাস। কারণ প্রসঙ্গে জানানো হয়েছে, নতুন অর্থবছর থেকেই নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হচ্ছে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বিধায়কদের জন্য। এপ্রিল মাস শেষ হলে মে মাসে সেই বেতন পাওয়া যাবে। যে হেতু মার্চ বিগত অর্থবছরের শেষ মাস ছিল, তাই কোনও ভাবেই ওই মাস থেকে বর্ধিত বেতন দেওয়া রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই নতুন অর্থবর্ষের প্রথম মাস শেষ হলে আগামী মে মাস থেকেই বর্ধিত হারে বেতন পাওয়া শুরু হবে।

Advertisement

মূলত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বিধায়ক— এই তিন স্তরে বেতন বৃদ্ধি পাবেন। বিগত মার্চ মাস পর্যন্ত বিধায়কদের বেতন ছিল প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা। তা বেড়ে হল ৫০ হাজার টাকা। রাজ্যের প্রতিমন্ত্রীরা এত দিন মাসে ১০ হাজার ৯০০ টাকা করে পেতেন। এখন থেকে তাঁরা পাবেন ৫০ হাজার ৯০০ টাকা। এ ছাড়া, রাজ্যে যে পূর্ণমন্ত্রীরা আছেন, তাঁদের বেতন ছিল ১১ হাজার টাকা। তাঁরা বেতন বাবদ এ বার থেকে ৫১ হাজার টাকা পাবেন। উল্লেখ্য, সরকারের বেতন কাঠামো অনুযায়ী, ভাতা এবং কমিটির বৈঠকে যোগদানের জন্য সব মিলিয়ে রাজ্যের বিধায়কেরা এত দিন মোট ৮১ হাজার টাকা পেতেন। এ বার থেকে তাঁদের মোট প্রাপ্য হবে ১ লক্ষ ২১ হাজার টাকা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবং প্রতিমন্ত্রী, পূর্ণমন্ত্রীরা এত দিন ভাতা ইত্যাদি মিলিয়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পেতেন। এ বার থেকে তাঁরা পাবেন প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। তবে বর্ধিত বেতন পেতে আরও এক মাস অপেক্ষা করতেই হবে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও বিধায়কদের।

প্রসঙ্গত, গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর বিধানসভার বাদল অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বিধায়কের বেতন বৃদ্ধি করার কথা জানিয়েছিলেন। নভেম্বর মাস থেকেই বর্ধিত বেতন দিতে উদ্যোগ শুরু করে রাজ্য সরকার। এই বিল পাশ এবং অনুমোদন নিয়ে বিস্তর দড়ি টানাটানি চলেছিল নবান্নের। বেতন বৃদ্ধির বিল পাশ করাতে পুজোর আগে এক দিনের অধিবেশন ডাকেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই বিল বিধানসভায় পেশ করার অনুমতি দেননি রাজ্যপাল। তাই অধিবেশন ডেকেও, বিল পেশ করা যায়নি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, যে কোনও লেনদেন সংক্রান্ত আর্থিক বিল বিধানসভায় পাশ করতে গেলে রাজ্যপালের অনুমোদন আবশ্যিক বিষয়। এ ক্ষেত্রে যে দুটি বিল পাশ করাতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার, তার কোনওটিতেই অনুমোদন দেননি রাজ্যপাল। তাই শোকপ্রস্তাবের পর অধিবেশন মুলতুবি হয়ে গেলে বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে এবং বাইরে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়কেরা। তাঁদের অভিযোগ, অনৈতিক ভাবে রাজ্য সরকার সেই বিল বিধানসভায় পেশ করেছে। কিন্তু সেই দাবি মানতে চাননি অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে স্পিকার বিমান। স্পিকার দাবি করেছিলেন, বিল পাশ হওয়ার আগে রাজ্যপাল অনুমোদন দিলেই চলবে। এ ক্ষেত্রে বিল পেশ এবং তার উপর আলোচনার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। কিন্তু যে হেতু প্রাক্তন বিধায়ক মারা গিয়েছেন, তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব হওয়াতেই অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়েছে। দু’টি বিল নিয়ে আলোচনা হবে ৪ ডিসেম্বর। যদিও, পুজোর আগেই বিলটি বিধানসভায় পেশ করার অনুমতি দেন রাজ্যপাল। কিন্তু তত দিনে শারদোৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে যাওয়ায় বিধানসভায় বেতন বৃদ্ধির বিল পেশ করা সম্ভব হয়নি।

Advertisement

পরে ডিসেম্বর মাসে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি বিধানসভায় রাজ্যপালের অনুমোদন নিয়েই পেশ করা হয়। শাসকদলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিলটি ধ্বনি ভোটে পাশ হয়। তার পর কয়েক মাস বিলটি স্বাক্ষরের অপেক্ষায় পড়েছিল রাজভবনে। অবশেষে ১৬ মার্চ রাজভবন থেকে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে জানানো হয়েছে, দু’টি বিলে সম্মতি দেন রাজ্যপাল। সেগুলি হল, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার সদস্যদের বেতন (সংশোধিত) বিল ২০২৩ এবং বেতন ও ভাতা (সংশোধিত) বিল ২০২৩। প্রথম বিলটিতে বিধায়কদের বেতন এবং দ্বিতীয় বিলটিতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের বেতন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।

রাজ্যের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি করলেও, মুখ্যমন্ত্রী নিজের বেতন বৃদ্ধি করেননি। এ প্রসঙ্গে মমতা বলেছিলেন, ‘‘প্রাক্তন সাংসদ হিসাবে আমি পেনশন বাবদ এক লক্ষ টাকা পাই। এ ছাড়াও, বিধায়ক হিসাবে আমি বেতন পাই। কিন্তু নিই না। আমি আমার বই বিক্রির স্বত্ব বাবদ যা টাকা পাই, তা দিয়েই আমার চলে যায়।’’ তবে বর্ধিত বেতন পেতে আরও এক মাসের বিলম্ব হওয়ায় শাসকদলের এক বিধায়ক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী গত সেপ্টেম্বর মাসেই চেয়েছিলেন বেতন বৃদ্ধি করা হোক। আমরা সবাই জানি কেন বেতন বৃদ্ধির বিল বিধানসভায় প্রথমে সহজে পাশ করা যায়নি। কেনই বা পরে তার অনুমোদন পেতে দেরি হয়েছে। এখন আর কোনও বিতর্ক না বাড়িয়ে রাজ্যপাল যখন সেই বর্ধিত বেতনের বিলে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন, তখন না হয় আরও এক মাস আমরা অপেক্ষা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন