ম্যাগি তো নিষিদ্ধ হল। অন্য যে সব খাবার খাই সেগুলো ঠিক আছে তো? দুধ, ডিম, সবজি, ডাল, তেল কতটা নিরাপদ? যদিও দেশজোড়া সাম্প্রতিক বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে যে তথ্য উঠে আসছে তা কিন্তু যথেষ্ট উদ্বেগজনক। একে একে দেখে নেওয়া যাক সেই সব।
ভোজ্য তেল
সম্প্রতি ‘কনজিউমার গাইডেন্স সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’র করা এক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, বাদাম, নারকেল, সর্ষে, সূর্যমুখী তেল-সহ বিভিন্ন খোলা তেলের ৬৪ শতাংশেই রয়েছে ভেজাল।
সবজি
এম.এস ইউনিভার্সিটি অব বরোদার এক সমীক্ষা থেকে ২০১৩-য় উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, বিভিন্ন ডাল, শষ্য-সহ সবজিতে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক। ফল, দইয়েও মিলেছে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যাডমিয়াম। দু’টিই ভারী ধাতু। দিল্লি থেকে আসা শাকপাতা, নাগপুরের বেগুন, পশ্চিমবঙ্গের টম্যাটো ও বিনে মিলেছে সহনসীমার ঊর্ধ্বে সীসা এবং অন্যান্য কার্সিনোজেনিক ভারী ধাতু।
ডিম
তাতেও মিলেছে মারাত্মক রকম বিষ। ‘ইন্ডিয়ান ভেটেরিনারি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর রিপোর্ট বলছে, উত্তরপ্রদেশের বরেলি, দেরহাদুন ও ইজ্জতনগর শহরের ২৮ শতাংশ ডিমেই মিলেছে ই কোলি। ডায়ারিয়া, মূত্রনালী ও শ্বাসনালীর সংক্রমণ এবং নিউমোনিয়ার কারণ এটি। ৫ শতাংশ ডিমে মিলেছে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া। পেশি সংকোচন, জ্বর, ডায়ারিয়ার জন্য দায়ি এটি। একই ভাবে দেখা গিয়েছে, কেরালার কোট্টায়াম শহরে বিক্রীত প্রায় অর্ধেক হাঁসের ডিমের মধ্যেই রয়েছে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া।
দুধ
সারা দেশের ১,৭৯১ টি দুধের নমুনার প্রায় ৬৯ শতাংশ ভারতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘন করছে।
বিদেশি বহুজাতিক সংস্থার খাবার
ফ্রায়েড চিকেন, গ্রিলড চিকেন-সহ যাবতীয় চিকেনের খাদ্যতালিকাই মনোসোডিয়াম গ্লুটামেটে সমৃদ্ধ।
পেট্রোলিয়াম
যানবাহনের কালো ধোঁয়ার কারণে বাতাসে সীসার আধিক্য ভাঁজ ফেলছে পরিবেশবিদ থেকে চিকিৎসক সকলের কপালেই। যার কারণে ঘরে ঘরে বাড়ছে শ্বাসনালী সংক্রমণের খবর।
এনামেল রং
স্বপ্ন দিয়ে রাঙিয়ে তোলা আপনার ঘরটি কি আদৌ নিরাপদ! দিনের শেষে যেখানে আপনি শান্তি খুঁজে পান। সেখানেও আপনার পছন্দের রঙের আস্তরণে লুকিয়ে রয়েছে সীসার ছোঁয়া। যার জন্য চাকচিক্য বাড়লেও প্রবল বিপদের মুখে পড়তে পারে আপনার শিশুটি। টলমল পায়ে দাঁড়াতে শিখে সব কিছুরই যে স্বাদ পেতে উৎসুক। এ ভাবেই দেওয়াল, দরজা, জানালা থেকে সীসার বিষ ঢুকছে তার ছোট্ট শরীরে। নিজের অজান্তে কোথাও সন্তানের বিপদের কারণ হয়ে উঠছে আপনার বিলাসিতা। ‘ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস’–এর সমীক্ষা বলছে, এক তৃতীয়াংশ এনামেল পেন্টের মধ্যে সীসা মিলেছে ১০,০০০ পিপিএম। যা নির্দিষ্ট বিধির থেকেও ১১১ গুণ বেশি।
আতস কাচের নীচে ম্যাগির অবস্থান প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় উপভোক্তা বিষয়কমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান জানান, এই প্রথম কোনও সরকার সাধারণের মানুষের হয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কনজিউমার কমিশনে স্বতোপ্রণোদিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করেছে। যদিও প্রশ্ন উঠছে, ম্যাগি বন্ধ করে কি সুরক্ষিত করতে পেরেছি আমাদের জীবনকে? আর সব খাদ্যবস্তু কি তবে সুরক্ষিত! এই সব বিষবস্তু আদৌ কি পড়বে কড়া নজরদারির আওতায়! না কি এত পর্যন্তই সরকারের দায়!