মা ও শিশু: মাসখানেক আগে জন্মানো ছানাকে নিয়ে মা ক্যাঙারু। আলিপুর চিড়িয়াখানায়। ছবি: সৌভিক দে
সদ্য মা হয়ে আলিপুর চিড়িয়াখানায় দুই মা এখন একই সঙ্গে গর্বিত এবং বেজায় নাকাল! কী করে কৌতূহলী চোখ থেকে শিশুদের আগলে রাখা যায়, দুই মায়ের চিন্তা সেটাই। চিন্তায় আছেন কর্মী, চিকিৎসকেরাও। দুই মা আর তাদের সন্তানদের উপরে সারা ক্ষণ নজর রাখছেন তাঁরা।
কর্মীরা সিংহের ‘ঘরের’ উপরে নজর রাখছেন অবশ্য দূর থেকেই। ছানাকে সামলাতেই ব্যস্ত সিংহী ‘শ্রুতি’। খাবার দেওয়া ছাড়া অকারণে তার খাঁচার কাছেপিঠে গিয়ে মা ও সন্তানকে বিরক্ত করছে না কেউ। সিসি ক্যামেরায় নজরদারি চলছে ক্যাঙারুর খাঁচাতেও। মা হয়েছে একটি ক্যাঙারু। পেটের থলিতে সন্তানকে নিয়ে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে সে। থলি থেকে মাঝেমধ্যে মাটিতে নামছে ছানাটি। একটু লাফালাফি সেরে ফের সটান থলিতে!
রাজ্য জ়ু অথরিটির সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদব জানান, ক্যাঙারুর ছানা হয়েছে মাসখানেক আগে। দিন পাঁচেক আগে জন্ম সিংহশাবকের। তাঁর দাবি, সাম্প্রতিক কালে দেশের কোনও চিড়িয়াখানায় ক্যাঙারু জন্মায়নি। আর আলিপুরে সিংহশিশু জন্মাল প্রায় দু’দশক বাদে। তবে চিড়িয়াখানার খবর, ওই শাবকটির অবস্থা এখনও স্থিতিশীল নয়। নজর রাখছেন চিকিৎসকেরা।
২০১১ সালে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে চারটি লাল ক্যাঙারু আনা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলি বাঁচেনি। তার পরে ক্যাঙারু আনার ব্যাপারে সাবধানি ছিলেন চিড়িয়াখানার কর্তারা। গত অক্টোবরে জাপানের ইয়োকোহামা চিড়িয়াখানা থেকে চারটি ক্যাঙারু আনা হয়। নতুন ভাবে সাজিয়ে তোলা হয় ক্যাঙারুর খাঁচা। তাদের রুচি মেনে কল্যাণীর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাণিসম্পদ দফতরের কাছ থেকে আনা হয়েছিল চার রকমের ঘাসও।
এর আগে আলিপুরে চারটি বয়স্ক সিংহ ছিল। তাদের মধ্যে একমাত্র দুর্গা নামে একটি সিংহী ছাড়া কারও শরীরেই খাঁটি ভারতীয় রক্ত ছিল না। দেশ ঢুঁড়ে শেষ পর্যন্ত গত অক্টোবরে হায়দরাবাদ চিড়িয়াখানা থেকে বিশ্বাস নামে একটি ভারতীয় সিংহ ও শ্রুতি নামে এক ভারতীয় সিংহীকে আনা হয়। চি়ড়িয়াখানার কর্তাদের আশা ছিল, এই দু’জনের ভাব-ভালবাসায় ভরে উঠবে আলিপুরের সিংহ-সংসার। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘বাচ্চা দু’টির কাছে এখনও যাওয়া যাচ্ছে না। তাই সেগুলি ছেলে না মেয়ে, সেই ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই। ওরা পরিবেশের সঙ্গে আরও একটু খাপ খাইয়ে নিলে কিপারেরা কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।’’
কবে আমজনতার সামনে আসবে ক্যাঙারু ও সিংহের ছানারা? বিনোদকুমার জানান, সব ঠিকঠাক চললে পুজোর পরেই ক্যাঙারুশিশুকে দেখতে পাবেন দর্শকেরা। আর সিংহশাবকটিকে শীতের মরসুমে লোকচক্ষুর সামনে আনা হতে পারে।