বন্দিশালার ক্যান্টিনে বন্ধ হচ্ছে বিরিয়ানি, কাটলেট

বন্দিশালার বাসিন্দারা চেয়েও অনেক কিছু পান না। সেই ‘না’-এর তালিকায় এ বার ঢুকে যাচ্ছে বিরিয়ানি, চপ, কাটলেটও।

Advertisement

সোমনাথ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৪
Share:

বন্দিশালার বাসিন্দারা চেয়েও অনেক কিছু পান না। সেই ‘না’-এর তালিকায় এ বার ঢুকে যাচ্ছে বিরিয়ানি, চপ, কাটলেটও। এত দিন জেলের ক্যান্টিনে জিভে জল আনা এই সব খাবারদাবার মিলত। কিন্তু সেখানে এগুলো কিনে খাওয়ার শেষ দিন নির্ধারিত হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি। আগামী ১ মার্চ থেকে জেলের ক্যান্টিনে কেবল রসগোল্লা, সন্দেশ, লাড্ডু, চা, কফি, বিস্কুট, কেক, ওমলেট, টোস্ট বিক্রি করা হবে। তা কিনে খেতে পারবেন বন্দিরা। কিন্তু চপ, কাটলেট, বিরিয়ানি আর নয়।

Advertisement

কারা দফতরের এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ক্যান্টিনের মজুত জিনিসপত্র খালি করে দিতে হবে। বিরিয়ানি, চপ, কাটলেটের বদলে ১ মার্চ থেকে সেখানে মিলবে ওমলেট, টোস্টের মতো খাবার। কেন এই ব্যবস্থা?

কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘‘জেলে তিন দিন মাছ দেওয়া হয়। মাংসও দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক বন্দিই তা না-খেয়ে ক্যান্টিন থেকে বিরিয়ানি, চপ, কাটলেট কিনে খাচ্ছেন। এটা চলতে দেওয়া যায় না।’’

Advertisement

এক কারাকর্তা জানান, বন্দিদের জন্য নিত্যদিন সরকারি খরচে ভাত, ডাল, তরকারি রান্না হয়। শাস্তির অঙ্গ হিসেবে বন্দিদের জেলের খাবারই খাওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, জেলের রান্না করা খাবার না-খেয়ে টাকাওয়ালা বন্দিরা জেলের ক্যান্টিনে বিরিয়ানি, চপ, কাটলেট খাচ্ছেন।

রাজ্যের প্রতিটি সেন্ট্রাল ও জেলা জেলে স্বনিযুক্তি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকজনকে ক্যান্টিন চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে কী কী খাবারদাবার পাওয়া যাবে, এত দিন তার নির্দিষ্ট নিয়ম না-থাকায় এক শ্রেণির বন্দি দেদার টাকা খরচ করে ক্যান্টিন থেকে ভাল ভাল খাবার কিনে খাচ্ছিলেন। জেলে বন্দিদের জন্য যে-খাবার বরাদ্দ থাকে, অনেক ক্ষেত্রেই তা নষ্ট হচ্ছিল। বন্দিশালার খাবার না-খেয়ে রসনালোভন জিনিস কিনে খাচ্ছেন অনেক বন্দি। এতে শাস্তির গুরুত্বটাই লঘু হয়ে যাচ্ছে।

এখন কী কী বিক্রি হবে ক্যান্টিনে?

কারা দফতরের খবর, বেশ কিছু খাবার, জামাকাপড়, তেল, সাবান-সহ নিত্য ব্যবহারের মোট ৪৫ রকমের জিনিস ক্যান্টিনে বিক্রি করা যাবে। তার বাইরে কোনও জিনিস রাখা যাবে না। দামের তালিকা ক্যান্টিনে টাঙিয়ে রাখতে হবে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনও বন্দিই সপ্তাহে ৫০০ টাকার বেশি খরচ করতে পারবেন না। কী কী জিনিস বিক্রি হল, তার রসিদ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট বন্দিকে।

প্রশ্ন উঠছে, জেলের কর্মীদের হাত ধরেই মোবাইল, প্রসাধনী দ্রব্য, নেশার সামগ্রী দেদার ঢুকছে লৌহকপাটের অন্দরে। এই অবস্থায় ক্যান্টিনের নতুন নিয়ম আদৌ কার্যকর করা যাবে তো? ‘‘ক্যান্টিনে না-ই বা মিলল, কারাকর্মীদের মোটা টাকা দিয়ে বন্দিরা বাইরে থেকে বিরিয়ানি, চপ, কাটলেট আনিয়ে নিতে পারবেন। জেলের কর্মীদের টাকা দিয়ে বশ করার ঘটনা যত দিন চলবে, তত দিন জেলে কোনও নিয়মই খাটবে না,’’ বলছেন কারা দফতরের এক প্রাক্তন কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন