লগ্নি ও লাভের অঙ্কে সংশয়ে তাজপুর বন্দর  

কলকাতা বন্দরের খবর, তাজপুর বন্দর গড়তে অন্তত ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে ওড়িশা উপকূলে টাটা গোষ্ঠীর ১৮ মিটার নাব্যতার সুবর্ণরেখা বন্দরের সঙ্গে কঠোর প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে তাজপুরকে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৫৫
Share:

তাজপুরের সৈকত। নিজস্ব চিত্র

দিঘার শিল্প সম্মেলন থেকে তাজপুর বন্দরের প্রকল্প অফিস উদ্বোধন করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের হাতে এখন তাজপুর বন্দরের ২৬% শেয়ার রয়েছে। কলকাতা বন্দরের হাতে বাকি ৭৪%। সেই কলকাতা বন্দরের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ সংস্থা এইচওডব্লিউই বা হোয়ে’র রিপোর্ট বলছে, তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দরের ভবিষ্যত রয়েছে, কিন্তু তা ‘উজ্জ্বল’ নয়।

Advertisement

কলকাতা বন্দরের খবর, তাজপুর বন্দর গড়তে অন্তত ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে ওড়িশা উপকূলে টাটা গোষ্ঠীর ১৮ মিটার নাব্যতার সুবর্ণরেখা বন্দরের সঙ্গে কঠোর প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে তাজপুরকে। শুরুর ১২ হাজার কোটি লগ্নিই নয়, গভীর সমুদ্র বন্দরের ২৫ কিলোমিটার শিপিং চ্যানেলের ড্রেজিংয়ের বার্ষিক খরচও আকাশছোঁয়া হবে বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ সংস্থা। তার পরেই ওই সংস্থার প্রি-ফিজিবিলিটি রিপোর্ট নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করছেন না বন্দরের কর্তারা। কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার বলেন,‘‘রিপোর্ট এসেছে। এ নিয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’ রাজ্য তো প্রকল্প অফিস খুলে দিয়েছে? চেয়ারম্যানের জবাব, ‘‘সংবাদমাধ্যমে দেখেছি।’’

শিল্প মন্ত্রী অমিত মিত্রকে ফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। তবে রাজ্যের বরাবরের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রকের ঢিলেমির জন্য তাজপুর বন্দর হচ্ছে না। কেন্দ্রের সদিচ্ছা থাকলে এতদিন বন্দর নির্মাণের পথে এগিয়ে যাওয়া যেত।

Advertisement

বন্দর সূত্রের খবর, উপদেষ্টা সংস্থা তাজপুরে কেবলমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের ‘ক্লোজ ভায়াবিলিটি’র কথাই বলেছে। সে জন্য দু’টি উপায়। এক, ২৫ কিমি শিপিং চ্যানেল তৈরি করে সাগর তীরে বন্দর নির্মাণ। অথবা জলের মধ্যে ১০ কিমি রেল-রাস্তা তৈরি করে সমুদ্রের মধ্যে বন্দর নির্মাণ করা। যদি শিপিং চ্যানেল তৈরি করতে হয়, তা হলে প্রতি বছর ড্রেজিংয়ের দায়ও ঘাড়ে চাপবে। এই দুই শর্ত মানা হলে ১৬-১৭ মিটার নাব্যতার বন্দর তৈরি সম্ভব। তার জন্য খরচ হবে অন্তত ১২ হাজার কোটি। তা লাভজনক হতে বেশ কয়েক বছর কেটে যাবে।

কেন গভীর সমুদ্র বন্দরই একমাত্র বিকল্প তাও ব্যাখ্যা করেছে উপদেষ্টা সংস্থা। তাদের মতে, হলদিয়া বন্দরের বর্তমান নাব্যতা ৮.৫ মিটার। যদি তাজপুরে ৯-১০ মিটার নাব্যতার বন্দর হয়, তা হলে কলকাতা-হলদিয়ার পণ্যই সেখানে যাবে। জাহাজিরা এখন কেপসাইজ (দেড় লক্ষ টন পণ্যবাহী) জাহাজ এনে পণ্য খালাসে আগ্রহী। পারাদ্বীপ বন্দরে সেই ধরনের জাহাজ আসে। তার পর ছোট জাহাজে পণ্য আসে হলদিয়া ও কলকাতায়। সুবর্ণরেখাতেও সে রকম জাহাজই আসবে। ফলে তাজপুরকে সফল হতে হলে অন্তত ১৮ মিটার নাব্যতার বন্দর চায়। তার জন্য যে টাকা ঢালতে হবে, তা কতদিনে উঠে আসবে সংশয় তাতেও। উপদেষ্টা সংস্থার প্রশ্ন, গভীর বন্দর নির্মাণের বিপুল খরচ কোথা থেকে আসবে? রেল-রাস্তা এবং বন্দরের পণ্য খালাসের জন্য প্রয়োজনীয় জমির সমস্যা কী ভাবে মিটবে? কিন্তু রাজ্য যদি বন্দরের উপদেষ্টা সংস্থার রিপোর্ট অগ্রাহ্য করে নিজেরাই বন্দর তৈরি করে? এক বন্দর কর্তার কথায়,‘‘তাজপুরের প্রস্তাবিত বন্দর তো কলকাতা বন্দরের চ্যানেলেই পড়ছে। তা নির্মাণ করতে হলে আমাদের অনুমতি দরকার।’’

মন্ত্রক সূত্রের খবর, সাগরে বন্দর নির্মাণের জন্য রাজ্যের সঙ্গে বন্দরের বোঝাপড়া হয়েছিল। সেই কারণে মুড়িগঙ্গা নদীর উপর রেল-সড়ক সেতু নির্মাণের ভারও নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। এর মাঝেই রাজ্য একতরফা ভাবে তাজপুরের কথা ঘোষণা করে। তা জেনে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, বাংলা উপকূলে হলদিয়া, কলকাতা, সাগর এবং তাজপুর চারটি বন্দরের ভবিষ্যৎ নেই। ফলে তারা সাগর বন্দর নির্মাণ বাতিল করে দেবে। দীর্ঘ টালবাহানার পর রাজ্য তাজপুরের উপর অধিকার ছেড়ে কলকাতা বন্দরের হাতে দিতে রাজি হয়। ঠিক হয়, বন্দরের হাতে সিংহভাগ অংশিদারিত্ব রেখে সাগর ও তাজপুর দুটি বন্দরই যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হবে। প্রথমে তৈরি হবে তাজপুর। এ বার তার প্রকল্প অফিস খোলা হল। কিন্তু যৌথ উদ্যোগের রাশ এখনও জাহাজ মন্ত্রকের হাতে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন