চিংড়ির পর এ বার পান। সৌজন্য রোগজীবাণু।
ইউরোপের বাজারে পান রফতানিতে এ রাজ্য প্রথম। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের খবর, পানে ডায়েরিয়ার জীবাণু মেলায় আমদানির ছাড়পত্র নিয়ে প্রবল কড়াকড়ি শুরু করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। গত পনেরো দিন ধরে রাজ্য থেকে পান রফতানি সম্পূর্ণ বন্ধ। তার ফলে বিপাকে রাজ্যের পান রফতানিকারী সংস্থাগুলি। ইউরোপের বাজারে পান চাষ বন্ধ হয়ে গেলে বছরে অন্তত ৬০ কোটি টাকার লোকসান হবে। অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হচ্ছে এই অভিযোগে রাজ্য থেকে চিংড়ি আমদানি বন্ধ করে দেবে বলেও হুমকি দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলি।
বিপদের আশঙ্কা করে পান চাষ, বরজ থেকে পান তোলা, ধোয়া-সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য রফতানি উন্নয়ন পর্ষদ (এপিডা)। পর্ষদের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রণজিৎ মণ্ডল জানান, ভারত থেকে যত পান রফতানি হয়, তার ৯৯% এই রাজ্যের। কিন্তু ডায়েরিয়ার জীবাণুর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এখন আমদানির ব্যাপারে স্বাস্থ্যবিধি কঠোর ভাবে মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে।
পান নিয়ে এই কড়াকড়ি অবশ্য নতুন নয়। সংক্রামক রোগের জীবাণুর কারণে মাসখানেক আগে রাজ্য থেকে কয়েক দিন পান আমদানি বন্ধ করে দেয় ইউরোপের দেশগুলি। কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে ইইউ-এর সঙ্গে কথা বলে মুচলেকা দিয়ে ফের আমদানি চালু করা হয়। কিন্তু ডায়েরিয়ার জীবাণুর থাবা থেকে পানকে বাঁচানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে ফের আমদানি বন্ধ করেছে ইউরোপের দেশগুলি। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রককে সতর্ক করেছে ইইউ।
পান তো গাছ ঢাকা ঘর (বরজে) পরিচ্ছন্ন জায়গায় বেড়ে ওঠে। এই জীবাণু পানে মিশছে কী করে?
উদ্যানবিদেরা বলছেন, সমস্যাটা পান তোলার পর। চাষিরা ডোবা বা খালের নোংরা জলে পান ধুয়ে গোছা করে। পান টাটকা রাখার জন্যও যে জল ছিটোনো হয় তা-ও যথেষ্ট নোংরা। সেই জলেই ‘স্যালমোনেলা’ নামে ডায়েরিয়া সৃষ্টিকারী জীবাণু থাকে। তা থেকেই পানে সংক্রমণ হচ্ছে। রাজ্যের কৃষিপণ্য রফতানিকারক সংস্থাগুলির গঠিত সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অঙ্কুশ সাহা বলেন, ‘‘এক শ্রেণির চাষির অসচেতনতার ফলে বিপাকে পড়েছি। চাষিদের বোঝাচ্ছি। না হলে রফতানি বন্ধ হয়ে যাবে।’’ এ নিয়ে প্রশাসনের একাংশ যথেষ্ট সক্রিয় নন বলেও অভিযোগ ব্যবসায়ীদের একাংশ।