চার্জশিট এনআইএ-র

কাঁটাতারের বেড়া টপকে জাল নোট

কায়দাটা নতুন নয়। এমন কিছু অভিনবও নয়। কাঁটা-তারের বেড়ার উপর দিয়ে টপকে তাড়াগুলো এ-পারে ছুড়ে দেওয়া। কুড়িয়ে নেওয়ার লোক মজুত থাকবে। সঙ্গে করে বয়ে সীমান্ত পার হতে হবে না।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০৩:০৯
Share:

কায়দাটা নতুন নয়। এমন কিছু অভিনবও নয়। কাঁটা-তারের বেড়ার উপর দিয়ে টপকে তাড়াগুলো এ-পারে ছুড়ে দেওয়া। কুড়িয়ে নেওয়ার লোক মজুত থাকবে। সঙ্গে করে বয়ে সীমান্ত পার হতে হবে না।

Advertisement

কিন্তু এই কায়দায় যে এক রাতে শুধু একটা জায়গা দিয়ে কোটি টাকার জাল নোট দেশে ঢোকানোর চেষ্টা হতে পারে, পুলিশ, গোয়েন্দা বা সীমান্তরক্ষী— কেউ তার আঁচ পায়নি! মালদহের বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা দৌলতপুরে প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকার জাল নোট সমেত দু’জনের গ্রেফতারির প্রেক্ষাপটে ব্যাপারটা সামনে এসেছে।

ওই মামলায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) মঙ্গলবার চার্জশিট দিয়েছে চার জনকে— বরকত আলি, মহম্মদ ডালিম শেখ, আনিকুল শেখ ও সেলিম শেখ। প্রত্যেককেই অভিযুক্ত করা হয়েছে অবৈধ কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে (ইউএপিএ), যা কিনা সাধারণত সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সংক্রান্ত মামলায় প্রয়োগ করা হয়। এনআইএ-সূত্রের খবর: পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম জাল নোট পাচারে অভিযুক্তদের ইউএপিএ’র জালে জড়ানো হল। কেন?

Advertisement

তদন্তকারীদের ব্যাখ্যা: বরকতদের হেফাজত থেকে উদ্ধার জাল নোটগুলো এতটাই নিখুঁত যে, বিশেষজ্ঞেরাও চটজলদি ধোঁকা খেয়ে যাবেন। পাশাপাশি সীমান্তে এক লপ্তে এত বেশি পরিমাণ নকল নোট উদ্ধার হওয়া বিরল। সব মিলিয়ে ঘটনাটি দেশের আর্থিক নিরাপত্তার পক্ষে যথেষ্ট বিপজ্জনক। তা-ই ইউএপিএ।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও কাঁটাতারের মধ্যবর্তী দেড়শো মিটার এলাকায় বহু লোকের বসবাস। অনেকের ঘরবাড়ি বেড়ার এ-পারে, মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে। নোট টপকানোর কাজে এদের একাংশকে লাগানো হচ্ছে। ‘‘বিএসএফের নজরদারি মূলত বেড়া ঘিরে, বেড়া আর সীমান্তের মাঝখানে তুলনায় কম। টাকার টোপে ওখানকার লোকজনকে চক্রে সামিল করা হচ্ছে।’’— বলছেন এক গোয়েন্দা। এক দল নোট ফেলছে। বেড়ার এ-পারে ‘নোটকুড়ুনি’রা টুক করে তুলে নিচ্ছে জাল নোটের পাঁজা।

বরকত-ডালিমও মাঝের অংশের বাসিন্দা। গোয়েন্দা-সূত্রের খবর: বরকত, ডালিম-সহ তিন জন এক কোটি টাকার জাল নোট নিয়ে বাঁশঝাড়ের নীচে বসে ছিল, ছুড়ে দেওয়ার অপেক্ষায়। তার-বেড়ার এ দিকে আনিকুল, সেলিম-সহ সাত জন তৈরি ছিল ‘ক্যাচ’ লোফার জন্য। তক্কে তক্কে থেকে বরকতকে বমাল পাকড়েছে বিএসএফ-ই।

গত বছরের ৬ মে। বরকতকে জেরা করে ডালিম ও আর এক জনের নাম পাওয়া যায়। ২৯ নভেম্বর ডালিম ধরা পড়ে বৈষ্ণবনগরের চকদেওনাপুর গ্রামে। সেই বিকেলে ডালিমকে সঙ্গে নিয়ে গোয়েন্দারা যে ভাবে প্রাণ হাতে করে ওখান থেকে বেরিয়ে আসেন, তা প্রায় বলিউডি থ্রিলারকে হার মানাবে।

কী রকম? এনআইএ-র গাড়ি দেখেই ডালিম দৌড়ায়। ধাওয়া করে গোয়েন্দারা তাকে একটা বাড়ি থেকে বার করে। কিন্তু দুষ্কৃতীরা মহিলা-শিশুদের সামনে রেখে চড়াও হয় গোয়েন্দাদের উপরে। এক অফিসার ডালিমের মাথায় পিস্তল ঠেকান, অন্যেরা পিস্তল উঁচিয়ে ধরেন জনতার দিকে। ডালিমকে গাড়িতে তোলা হয়। খবর আসে, রাস্তায় ডালিম-ছিনতাইয়ের ছক কষা হচ্ছে। এনআইএ টিম তখন ঘুরপথে পৌঁছায় ফরাক্কায়। ডালিমের কাছ থেকেই মেলে আনিকুল ও সেলিমের নাম। ১৮ ফেব্রুয়ারি খবর মেলে, মোটরবাইকে চড়ে দু’জনে মুর্শিদাবাদের সমশেরগঞ্জে যাচ্ছে। সমশেরগঞ্জে স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে এনআইএ তাদের ধরে।

দৌলতপুরে বরকত-ডালিমের কাছে মিলেছে ৬৫ লক্ষ টাকার জাল নোট। সন্দেহ, আরও ৩৫ লক্ষ টাকার নকল নোট ছিল তাদের সঙ্গীর কাছে। ফেরার শাগরেদটির খোঁজ চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন