জঙ্গি-হানায় আগেও প্রাণ গিয়েছে এ রাজ্যের জওয়ানদের। কেমন আছে তাঁদের পরিবার?

কণাদের স্মৃতি আর হাতড়াতে চান না মা, দিদিরা

পুলওয়ামা-কাণ্ডের ক’দিন আগেই পুরনো জিনিস ঘাঁটতে গিয়ে সেগুলি হাতে উঠে এসেছিল মামা বিনোদবিহারী চক্রবর্তীর।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:০২
Share:

ভাগ্নের ছবির সামনে বিনোদবিহারী। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

তাঁর লেখা চিঠি এবং ফায়ারিংয়ের পরে গানি-ব্যাগ থেকে মামাতো ভাইয়ের জন্য তুলে আনা বুলেটের খোলটা আজও আছে!

Advertisement

পুলওয়ামা-কাণ্ডের ক’দিন আগেই পুরনো জিনিস ঘাঁটতে গিয়ে সেগুলি হাতে উঠে এসেছিল মামা বিনোদবিহারী চক্রবর্তীর। ভেসে উঠেছিল একমাত্র ভাগ্নে, কার্গিল-যুদ্ধে নিহত কণাদ ভট্টাচার্যের মুখটা। সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ২০ বছর আগের স্মৃতিচিহ্ন যথাস্থানে রেখে দিয়েছিলেন বর্তমানে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা বিনোদবাবু। যাতে কষ্ট কম হয়। তাঁর কথায়, ‘‘ওগুলো দেখলেই বড্ড বাবুর (কণাদের ডাক নাম) কথা মনে পড়ে। তাই দেখা মাত্র রেখে দিয়েছি।’’

সালটা ১৯৯৯। ২১ মে’র বিকেল থেকে সেনাবাহিনীর শিখ রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন কণাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল টালার বাসিন্দা বিনোদবাবুদের। জন্ম থেকে মামার বাড়িতেই বেড়ে ওঠা জয়পুরিয়া কলেজের ছাত্র কণাদের। যিনি স্বপ্ন দেখতেন, যুদ্ধে জিতে মা পূর্ণিমাদেবীর হাতে মেডেল তুলে দেবেন। কিন্তু ২৪ বছরের সেই ছেলেরই খোঁজ মেলেনি টানা দু’মাস। ১৫ জুলাই খবর আসে টাইগার হিলে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ছ’ফুট লম্বা, ফর্সা ছিপছিপে চেহারার জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া ওই যুবকের মৃতদেহ। ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় কফিনবন্দি হয়ে কলকাতায় ফেরে কণাদের দেহ।

Advertisement

সেই দিনের স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছে টালা। যদিও স্মৃতি রোমন্থন করতে আজ আর রাজি হন না কণাদের মা, দুই দিদিও।

বিনোদবাবুও বলেন, ‘‘ভাগ্নেকে নিয়ে আর কোনও আলোচনা করি না দিদির সঙ্গে। ওঁরা এখন দিল্লিতে থাকেন। তবে দেশে জঙ্গি হানা হলেই ভাগ্নের কথা মনে পড়ে। এ বার তো যুদ্ধও ছিল না। কেন হত্যা করা হল সিআরপিএফ জওয়ানদের?’’ বিনোদবাবুই জানান, কণাদের মৃত্যুর পরে সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাখ্যান করেন পূর্ণিমাদেবী। আর কণাদের বাবা কমলাকান্তবাবু ছেলের মৃত্যুর চার বছরের মধ্যে মারা যান। তার কয়েক বছর পরে কলকাতা ছাড়েন পূর্ণিমাদেবীও।

বিনোদবাবুর টালার বাড়িও বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বর্তমান মালিক কল্যাণ চৌধুরী বাড়িতে টাঙিয়ে রেখেছেন কণাদের ছবি। কণাদের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন ‘টালা ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন’ও। সেই ক্লাবেই ক্যারাটে শিখে ব্ল্যাক-বেল্ট পেয়েছিলেন কণাদ। ক্লাবের সামনে রাস্তায় বসেছে তাঁর আবক্ষ মূর্তি, ক্লাবঘর থেকে গ্রন্থাগার— সবই প্রাক্তন সদস্যের নামে। ক্লাব সম্পাদক অনুজিতকুমার নান বলেন, ‘‘প্রতি বছর অগস্টে ওঁর জন্মদিনটা পালন করি। বাসস্টপও ওঁর ছবিতে সাজানো।’’

‘কমিশনড্’ হয়ে ১৯৯৯-এর মার্চে পঠানকোটে যাওয়ার আগে পাড়ায় ফিরে বন্ধুদের নিয়ে বালিগঞ্জের রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন কণাদ। সেই স্মৃতিও আজও টাটকা অমিত দাস, অরুণাভ মোহান্তদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন