মেয়ের দেহ মেঝের নীচে, ভাবতে পারছেন না বাবা

ছোট্ট গলি। সেই গলির শেষপ্রান্তের একটা দোতলা বাড়িকে ঘিরেই শুক্রবার নজর থাকল সারা বাঁকুড়ার। আগের দিন ভোপালের সাকেতনগরের একটি বাড়ির মেঝে খুঁড়ে এই ভাড়াবাড়ির মেয়ের দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১২
Share:

বাঁকুড়ার এই বাড়িতেই থাকেন আকাঙ্ক্ষার বাবা-মা।—অভিজিৎ সিংহ

ছোট্ট গলি। সেই গলির শেষপ্রান্তের একটা দোতলা বাড়িকে ঘিরেই শুক্রবার নজর থাকল সারা বাঁকুড়ার। আগের দিন ভোপালের সাকেতনগরের একটি বাড়ির মেঝে খুঁড়ে এই ভাড়াবাড়ির মেয়ের দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দিনভর তাই খবরের শিরোনামে থাকা নিহত আকাঙ্ক্ষা শর্মার বাড়ি দেখতে অনেকেই ভিড় করেছিলেন।

Advertisement

বাঁকুড়া শহরের রবীন্দ্র সরণির এই বাড়িতেই ভাড়া থাকেন আকাঙ্ক্ষার বাবা-মা। পড়শিদের সঙ্গে সে ভাবে মেলামেশা না থাকলেও ব্যাঙ্ক-কর্তা শিবেন্দ্র শর্মার পরিবারের এত বড় বিপর্যয়ের পরে অনেকেই সমবেদনা নিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের আলোচনাতে তাই ঘুরে ফিরে এসেছে এই পরিবারের কথাই।

শিবেন্দ্রবাবুদের বাড়ির পিছনেই রয়েছে একটি পরিত্যক্ত গোয়ালঘর। সেখানেই খাটের পায়ায় রং করেন স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণপদ বাগদি। তিনি বলেন, “আকাঙ্ক্ষাকে দেখিনি আমি। ওদের পরিবারের সঙ্গে তেমন পরিচয়ও নেই। তবে পরিবারটি বেশ হাসি-খুশি ছিল জানতাম। সেই বাড়ির মেয়ের এমন মর্মান্তিক পরিণতি ঘটবে ভাবতে পারছি না।’’

Advertisement

শোকে পাথর ওই বাড়ির দরজা অবশ্য খোলেনি। শিবেন্দ্রবাবুরা বাড়ির দরজা, জানালা বন্ধ করে নিজেদের ঘরবন্দি করে রেখেছিলেন দিনভর। তাঁর স্ত্রী একবার শুধু দরজার ভিতর থেকে মুখ বাড়িয়ে সাংবাদিকদের জানালেন, ‘‘মেয়ে জুন মাসে আমেরিকা যাচ্ছি বলে বেরিয়েছিল। তারপর থেকে আর তার সঙ্গে কথা হয়নি। এর পর যা বলার সব পুলিশ বলবে।’’

শিবেন্দ্রবাবুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন তাঁর ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বাসুদেব মিত্র। দরজা বন্ধ থাকায় ভিতরে ঢুকতে পারেননি তিনি। সাংবাদিকদের জানালেন, আমেরিকায় যাচ্ছে বলে আকাঙ্ক্ষা যাওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে একবার দেখা করেছিল। তাঁর কথায়, “খুবই শান্ত ও মিষ্টি মেয়ে ছিল। কথা বলত খুবই ধীরে। এই রকম একটা মেয়েকে এমন নৃশংস ভাবে খুন হতে হয়েছে জেনে শোকস্তব্ধ আমরা।” প্রায় সাত মাস নিজের মেয়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেননি শিবেন্দ্রবাবু। তার জন্য একটা অস্বস্তি যে ছিলই, তা ব্যাঙ্কে সহকর্মীরা টের পেতেন। এই প্রসঙ্গে বাসুদেববাবু বলেন, “হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করলেও কেন মেয়ে তাঁদের ফোন ধরছে না, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন শিবেন্দ্রবাবু। গোটা ঘটনাটি একটা ধাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁর কাছে।”

বাঁকুড়া সদরের সিআই অমিতাভ কোনার এবং বাঁকুড়া সদর থানার এসআই কৌশিক হাজরার নেতৃত্বে জেলা পুলিশের একটি দল আকাঙ্ক্ষার খোঁজে ভোপালের সাকেত নগরে যান। তারপরেই আকাঙ্ক্ষার বন্ধু উদয়ণ দাসের বাড়ির মেঝে খুঁড়ে উদ্ধার হয় তাঁর কঙ্কাল।

এ দিকে দিনভর শিবেন্দ্রবাবু স্ত্রীকে নিয়ে ঘরবন্দি হয়ে থাকলেও তাঁদের উদ্বেগ চাপা থাকেনি চার দেওয়ালের মধ্যে। নিজের মেয়ের দেহাবশেষ সচক্ষে দেখতে চেয়ে পুলিশের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন শিবেন্দ্রবাবুর স্ত্রী। তবে আকাঙ্ক্ষার পরিবারের সেই দাবি পূরণ করা যাবে কি না, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তা নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেনি বাঁকুড়া পুলিশ।

অপরিচিত কোনও মোবাইল নম্বরে এ দিন ফোনও ধরেননি শিবেন্দ্রবাবু। তাঁর এক পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে কোনও ভাবে তাঁকে ফোনে ধরা গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটাই আক্ষেপ বারবার করে গিয়েছেন তিনি— “মেয়ের বন্ধু ভেবে যে ছেলেটাকে বাড়িতে এক রাত আশ্রয় দিলাম, সেই ছেলেটাই নিজের হাতে আমার মেয়েকে শেষ করে দিয়েছে! আমরা জানতাম মেয়ে আমেরিকায় রয়েছে। কারও ঘরের মেঝের নীচে মেয়েটার দেহ চাপা পরে আছে, এটা কল্পনাও করতে পারিনি।” পুরো ঘটনার জন্য দায়ী উদয়নের কড়া শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।

শিবেন্দ্রবাবুকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন বাঁকুড়া পুলিশ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার প্রবীরকুমার চক্রবর্তী। প্রবীরবাবু এ দিন বলেন, “মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে শিবেন্দ্রবাবু প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছেন। তিনি হৃদ্‌রোগী। এই পরিস্থিতিতে তাই তাঁকে নিয়ে উৎকন্ঠা কাটছে না আমার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন