Farmers Death

Suicide: চাষে ক্ষতি, ফের অপমৃত্যু দুই চাষির

বনতির গ্রামে গণেশের পড়শি চাষি কৌশিক ঘোষ জানান, দুর্যোগের পর থেকে চাষের জমিতে জল জমে রয়েছে তাঁদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়না শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:২৮
Share:

মৃত গণেশনারায়ণ ঘোষের শোকার্ত পরিবার। নিজস্ব চিত্র।

কালনার পরে, রায়না। সাম্প্রতিক নিম্নচাপের বৃষ্টিতে চাষে ক্ষতি হওয়ায় রাজ্যের ‘শস্যগোলা’ পূর্ব বর্ধমানে আরও দুই চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি করল তাঁদের পরিবার।

Advertisement

কালনার বিরুহা গ্রামে শুক্রবার আলুচাষি মানিক শেখের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সে রাতেই রায়নার দেবীবরপুর গ্রামের ধান চাষি জয়দেব ঘোষের (৪৮) ঝুলন্ত দেহ মেলে বাড়িতে। সেখান থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে, বনতির গ্রামে শনিবার ভোরে নিজের জমির পাশের একটি গাছে গণেশনারায়ণ ঘোষ (৬৩) নামে আর এক চাষির ঝুলন্ত দেহ মেলে। পুলিশ দু’টি দেহই ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে।

পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক প্রিয়ঙ্কা সিংলা বলেন, “চাষি-মৃত্যুর খবর আসেনি। খোঁজ নিচ্ছি।’’ তবে বিডিও (রায়না ১) সৌমেন বণিকের দাবি, ‘‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে জেনেছি, চাষের কারণে কেউ মারা যাননি। অন্য কোনও কারণ রয়েছে। পুলিশ ও কৃষি দফতরকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছি। আমরাও অভ্যন্তরীণ তদন্ত করছি।’’ রায়নারই বাসিন্দা রাজ্যের মুখ্য কৃষি উপদেষ্টা তথা তৃণমূল বিধায়ক প্রদীপ মজুমদারের বক্তব্য, “চাষে ক্ষতির জন্য মৃত্যুর সম্ভাবনা নেই। নিখরচায় বিমা করে দেওয়া হচ্ছে। সাত দিন আগেও ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আলু চাষের ক্ষতি নির্ধারণই হয়নি। আগে থেকে কী করে বলা সম্ভব, চাষের ক্ষতির জন্যে কেউ আত্মঘাতী হয়েছেন?’’

Advertisement

বনতির গ্রামে গণেশের পড়শি চাষি কৌশিক ঘোষ জানান, দুর্যোগের পর থেকে চাষের জমিতে জল জমে রয়েছে তাঁদের। গণেশের আত্মীয় অরুণ কাপাসির দাবি, ‘‘দাদা দু’বিঘা জমিতে ‘খাস’ ধান (সুগন্ধি ধান) আর এক বিঘায় আলু চাষ করেছিলেন। সাম্প্রতিক দুর্যোগে সব নষ্ট হয়েছে। ধাক্কাটা নিতে পারেননি।’’ গণেশের ভাইপো পিন্টু ঘোষ বলেন, ‘‘স্থানীয় ভাবে ঋণ নিয়ে চাষ করার পরে, ক্ষতি হওয়ায় কাকা মুষড়ে পড়েছিলেন।’’ তাঁর দাবি, কাগজপত্রের সমস্যা থাকায় গণেশ ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের সুবিধা পাননি। শস্যবিমাও করাননি।

একই কারণে দেবীবরপুরের জয়দেব ঘোষেরও একই পরিস্থিতি বলে দাবি আত্মীয় হারাধন ঘোষের। তিনি বলেন, ‘‘দুর্যোগে ক্ষতির পরে ভেঙে পড়েছিলেন দাদা।’’ পরিজনেরা জানান, মহাজনের থেকে ঋণ নিয়ে তিন বিঘা জমিতে গোবিন্দভোগ ধানের চাষ করেছিলেন জয়দেব।

কৃষি দফতর ও প্রশাসনের দাবি, রায়না ১ ব্লকে ২১,৩০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। নিম্নচাপের আগে, প্রচার করা হলেও ৫০ শতাংশ জমির ধান চাষিরা কাটতেই পারেননি। চাষিদের বক্তব্য, যন্ত্রে সুগন্ধি ধান কাটতে গেলে, প্রচুর ফসল নষ্ট হয়। কিন্তু কাস্তে দিয়ে ধান কাটার সময় পাওয়া যায়নি।

বামপন্থী সংগঠন ‘কৃষকসভা’র জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেনের বক্তব্য, “চাষের কারণে কেউ আত্মহত্যা করেননি, এই অনড় মনোভাব ছেড়ে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পাশে দাঁড়াক। না হলে, এমন ঘটনা বাড়বে।’’ বিজেপির কিসান মোর্চার সাংগঠনিক জেলা (বর্ধমান সদর) সভাপতি দেবাশিস সরকার বলেন, “প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে ওই চাষিদের পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।’’ তবে রায়নার তৃণমূল বিধায়ক তথা জেলা সভাধিপতি শম্পা ধাড়ার দাবি, “রাজ্য সরকার চাষিদের পাশেই রয়েছে। চাষের কারণে কেউ আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন