লক্ষ্মীলাভের আশায় ফের সুগন্ধি ধানের খোঁজ

টেবিলের পাশে লাগানো একটা বোর্ড। আর সেই বোর্ডে সাঁটা কাগজে লাল কালিতে গোল করা কয়েকটি নাম জ্বলজ্বল করছে: বাদশাভোগ, গোপালভোগ, দাদশাল, সীতাভোগ, তুলসীভোগ, রাঁধুনিপাগল, হামাই, ঝুমপুরি, জামাইনাড়ু...।

Advertisement

সোমনাথ চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৭ ০৪:১৫
Share:

টেবিলের পাশে লাগানো একটা বোর্ড। আর সেই বোর্ডে সাঁটা কাগজে লাল কালিতে গোল করা কয়েকটি নাম জ্বলজ্বল করছে: বাদশাভোগ, গোপালভোগ, দাদশাল, সীতাভোগ, তুলসীভোগ, রাঁধুনিপাগল, হামাই, ঝুমপুরি, জামাইনাড়ু...।

Advertisement

কোনও মিষ্টি বা আমের নাম নয়। এগুলো ধানের নাম। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বা লুপ্ত হতে বসা ধান। এক সময় এই সব ধানের ব্যাপক চাষ হতো পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু ধীরে ধীরে এদের প্রায় সকলেই বিলুপ্তির পথে। এদের মধ্যে কোনওটার ভাত ধবধবে সাদা। যোজনগন্ধা না-হোক, কোনও কোনওটার গন্ধ পাওয়া যায় অনেক দূর থেকে। বিদেশে গোবিন্দভোগ এবং কালো চালের কদর আর গরম বাজার দেখে এখন লুপ্ত হতে বসা এই সব ধানের চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে চাইছে রাজ্যের কৃষি দফতর। এই সব ধানের পর্যাপ্ত চাষ হলে একসঙ্গে দু’টি লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে বলে সরকারের আশা। প্রথমত, অন্নজীবী বাঙালির রসনাতৃপ্তির পথ মিলবে। দ্বিতীয়ত, বিদেশের বাজার মাতিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরিয়ে আনা যাবে বাংলার বিলীয়মান বাণিজ্যলক্ষ্মীকে।

অতএব খোঁজ খোঁজ! ওই সব দুর্লভ ধানের বীজ কোথায় সংরক্ষিত আছে, কৃষি দফতরের বিজ্ঞানীদের তা খুঁজে দেখতে বলা হয়েছে। ওই দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘তালিকা হাতে নিয়ে কৃষি দফতরের বিজ্ঞানী ও আধিকারিকেরা ওই সব প্রায়-বিলুপ্ত ধানের খোঁজে জেলায় জেলায় হন্যে হয়ে ঘুরছেন চাষিদের কাছে।’’

Advertisement

কৃষি দফতর জানাচ্ছে, এক সময় দুই বাংলায় ৫০ থেকে ৫২ জাতের সুগন্ধি চাল উৎপন্ন হতো। কালের নিয়মে অনেক বীজ হারিয়ে গিয়েছে। লাভের আশায় বহু চাষি সুগন্ধি ধানের চাষ ছেড়ে দিয়ে অন্য ধান ফলাচ্ছেন। ফলে বর্তমানে বাজারে মিলছে মাত্র ২৬টি জাতের ধান থেকে তৈরি চাল। হারিয়ে যেতে বসা ধানগুলিকে ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কৃষি দফতর। উপরে উল্লিখিত ন’টি প্রজাতি ছাড়াও খোঁজা হচ্ছে মতিবাস, লাল বাদশাভোগ, বাদশপসন্দ, গন্ধেশ্বরী, গয়াশূর কামিনীভোগ, কাটারিভোগ, চিনিসক্কর, রাধাতিলক ধানের বীজ।

ধান গবেষণার সঙ্গে যুক্ত কৃষি দফতরের এক বিজ্ঞানীর কথায়, ম্যানিলায় আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রে বিভিন্ন দেশের ধানের বীজ সংরক্ষিত রয়েছে। সেখানে ওই সব ধানের বীজ মেলে কি না, সেই খোঁজ চলছে। ওই গবেষকের কথায়, চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রেও সাড়ে তিন হাজার ধানের বীজের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে সাধারণ দেশি চাল রয়েছে, তেমনই আছে কিছু সুগন্ধি ধানের বীজও। ওই বিজ্ঞানী জানান, এখন সুগন্ধি ধানের চাষ হয় মাত্র এক লক্ষ হেক্টর জমিতে। পুরনো ধানের বীজ পাওয়া গেলে বাঙালির পাতে সুগন্ধি ভাত দেওয়া যাবে।

‘‘ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ, অসম, সিকিম থেকে কিছু বীজ পাওয়া গিয়েছে,’’ বলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। তিনি জানান, যে-সব ধানের বীজ পাওয়া গিয়েছে, পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েকটি জেলার বিভিন্ন ব্লকে সেগুলোর চাষ শুরু হয়েছে। ওই ব্লকের মধ্যে আছে হিঙ্গলগঞ্জ, জলঙ্গি, কোচবিহার-১, জলপাইগুড়ি সদর, সিউড়ি-১, বলাগড়, রায়গঞ্জ, সোনামুখি, পাথরপ্রতিমা, গঙ্গারামপুর। হাঁসখালি ও ফুলিয়ার কৃষি খামারেও কিছু কিছু সুগন্ধি ধানের চাষ হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন