TMC

লড়াই করুন, একুশে আমরাই ফিরব: বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রামকে ভোকাল টনিক মমতার

রাজনীতিতে প্রায় আনকোরা বীরবাহা সরেন এ বার ঝাড়গ্রামে তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন। বিজেপির কুনার হেমব্রমের কাছে তিনি হেরেছেন তো বটেই, বাঁকুড়ায় বিজেপির সুভাষ সরকারের কাছে হেরেছেন রাজ্যের অন্যতম হেভিওয়েট মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৯ ২০:৪৩
Share:

তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দুই জেলার তিন লোকসভা আসনেই হারতে হয়েছে এ বারের লোকসভা নির্বাচনে। তৃণমূলের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল হার। কিন্তু বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামের তৃণমূল নেতাদের শুক্রবার ভোকাল টনিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করলেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন। তৃণমূল ঘুরে দাঁড়াবে এবং ২০২১ সালে তৃণমূলই ফিরে আসবে— মন্তব্য নেত্রীর। তৃণমূল সূত্রের খবর, জনসংযোগ বাড়ানোর কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বার বার বলেছেন। তবে দলেরই কেউ কেউ বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন, বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলেও এ দিন তিনি মন্তব্য করেছেন। সবাইকে চিহ্নিত করুন— দলকে নির্দেশ নেত্রীর।

Advertisement

‘‘কাকে ভয় পাচ্ছেন?’’ এ দিনের বৈঠকে প্রশ্ন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপানোর বার্তা দিয়ে নেত্রীর মন্তব্য: ‘‘লড়াই করুন, একুশে (২০২১ সালে) ঘুরে দাঁড়াব...একুশে আমরা ফিরে আসব।’’

রাজনীতিতে প্রায় আনকোরা বীরবাহা সরেন এ বার ঝাড়গ্রামে তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন। বিজেপির কুনার হেমব্রমের কাছে তিনি হেরেছেন তো বটেই, বাঁকুড়ায় বিজেপির সুভাষ সরকারের কাছে হেরেছেন রাজ্যের অন্যতম হেভিওয়েট মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া সৌমিত্র খাঁয়ের কাছে বিষ্ণুপুরে হেরেছেন আর এক মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা। পশ্চিমাঞ্চলে এই রকম ধাক্কা অপেক্ষায় রয়েছে, ভোটের ফল প্রকাশের আগে তা বিশ্বাসই করতে পারেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই ফলাফল দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয়েছিল অনেকেরই। রাজ্যের অন্য কয়েকটা প্রান্তের মতো পশ্চিমাঞ্চলেও তৃণমূলের সংগঠনে আচমকা রদবদল ঘটিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়া জেলার তৃণমূল নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তৃণমূল ভবনে বৈঠকও করলেন তিনি। বেশ কয়েক জন নেতা এ দিন দলনেত্রীর ভর্ৎসনার মুখে পড়লেন। আর প্রত্যেককে সতর্ক করে দিয়ে নেত্রী বার্তা দিলেন— সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে জনসংযোগে।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রের খবর, জনসংযোগের ঘাটতি নিয়ে মমতা এ দিন নানা ভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ভোট পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি যিনি ছিলেন, সেই অরূপ খাঁ, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, বাঁকুড়া সদরের বিধায়ক শম্পা দরিপা এবং বাঁকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত এ দিন মমতার ভর্ৎসনার মুখে পড়েন বলে খবর। ভোটে খারাপ ফলাফলের জন্যই মূলত এই ভর্ৎসনা। মানুষের অনুভূতি, মানুষের দুঃখের কথা শোনা হয়নি, অগ্রাহ্য করা হয়েছে— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনের বৈঠকে এই রকম পর্যবেক্ষণই প্রকাশ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। প্রশাসনিক কর্তারাই দলের মাথা হয়ে যাচ্ছিলেন, ফলে জনসংযোগ কমে যাচ্ছিল— মত নেত্রীর। তাই অরূপ খাঁ, অরূপ, চক্রবর্তী, শম্পা দরিপাদের তিনি এ দিন নির্দেশ দেন, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দলের কাজ করতে। রাজনৈতিক লড়াই করুন, কিন্তু কোনও সংঘর্ষে জড়াবেন না— দলকে এই বার্তাও মমতা দিয়েছেন বলে খবর।

আরও পড়ুন, দলবিরোধী কথা বলছি মনে হলে ব্যবস্থা নিন, খোলা চ্যালেঞ্জ সব্যসাচীর

বাঁকুড়া পুর এলাকায় দলের অভ্যন্তরীণ অশান্তি নিয়ে যে তিনি অসন্তুষ্ট, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনের বৈঠকে বুঝিয়ে দেন বলে খবর। বিধায়ক শম্পা দরিপাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে— পুরসভার চেয়ারম্যান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তকে এই বার্তাই দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। আর বিষ্ণুপুরের শ্যাম মুখোপাধ্যায়কে তিনি শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতে বলেছেন।

ভোটের ফল দেখার পরেই বাঁকুড়া জেলায় দলের সংগঠনকে দু’ভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব দিয়েছিলেন ছাতনার প্রাক্তন বিধায়ক তথা দলের পুরনো নেতা শুভাশিস বটব্যালের উপরে। আর বিষ্ণুপুর লোকসভার দায়িত্ব দিয়েছিলেন কোতুলপুরেরর বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরাকে। এ দিন শুভাশিস ও শ্যামলের কাছ থেকে সাংগঠনিক অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন, বিধায়কদের দৈনিক ভাতা বেড়ে হল দ্বিগুণ, মন্ত্রীদেরও বাড়ল ৫০ শতাংশ

ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বীরবাহা সরেনকে এ দিন মমতা নির্দেশ দিয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ উমা সরেনকে জেলা তৃণমূলের কোর কমিটিতে সামিল করে নিতে। উমাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে বলেছেন। ঝাড়গ্রামের পরাজয় অল্প ব্যবধানে এবং এক শ্রেণির নেতা জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়লে সেটাও হত না— নেত্রীর পর্যবেক্ষণ এই রকমই। কাজ অনেকটাই করা হয়েছে, কিন্তু ঝাড়গ্রামে তথা জঙ্গলমহলে তফসিলি জাতি ও জনজাতির কাছে যে ভাবে পৌঁছনো উচিত ছিল দলের তরফ থেকে, তা হয়নি— মমতার মতো এই রকমই।

দলের কেউ কেউ এখনও বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন— এমন পর্যবেক্ষণও এ দিনের বৈঠকে প্রকাশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খবর তৃণমূল ভবন সূত্রের। গত নির্বাচনে যাঁরা বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করেছেন, যাঁরা এখনও বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, যাঁরা টাকা নিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে চিহ্নিত করুন— নির্দেশ তৃণমূল চেয়ারপার্সনের।

তবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে যে জনসংযোগ এবং তাতে যে জোর দিতেই হবে, সে কথা মমতা এ দিন বার বার মনে করিয়ে দিয়েছেন। ‘‘বাড়ি বাড়ি যান, মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনুন, জল খান, সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে কি না, খবর নিন।’’ দলের জেলা নেতৃত্বকে এ দিন এই রকম নির্দেশই দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।

(দুই বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, 'বাংলার' খবর পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন