—ফাইল চিত্র।
ছ’জন সাংসদ, চার জন মন্ত্রী— তার মধ্যে এক জন আবার মেয়র। এক জন বিধায়ক তথা ডেপুটি মেয়র, এক জন প্রাক্তন মন্ত্রী এবং এক জন আইপিএস অফিসার। নারদ কাণ্ডে এই ১৩ জন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে কলকাতার নিজাম প্যালেসে তাদের দুর্নীতি দমন শাখায় এফআইআর দায়ের করল সিবিআই।
১৬ এপ্রিল, অর্থাৎ রবিবার রাত সাতটার সময় সরকারি ভাবে ওই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাচক্রে ওই দিনই শেষ হয়েছে প্রাথমিক তদন্ত চালানোর জন্য আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা। সিবিআই সূত্রের দাবি, এই এফআইআরের ভিত্তিতে ১৩ জন প্রভাবশালীর যে কাউকে, যে কোনও সময়ে গ্রেফতার করা হতে পারে। নবান্নে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরেমুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা রাজনৈতিক খেলা। আমরা রাজনৈতিক ভাবে এর মোকাবিলা করব।’’
সে অর্থে দেখলে, ভিডিও ফুটেজে নেতা-মন্ত্রীদের যে অঙ্কের টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, সেটা বিশাল কিছু নয়। তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ কেন দায়ের করা হল? পাশাপাশি দুর্নীতি দমন আইনের ৭, ১৩(১) এবং ১৩(২) ধারাতেও মামলা রুজু করা হয়েছে। সিবিআইয়ের একটি সূত্রের বক্তব্য, এখানে টাকা নেওয়ার উদ্দেশ্যটাই বড় করে দেখা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, অভিযুক্তরা এ ভাবে টাকা নিতেই অভ্যস্ত। এবং অর্থের বদলে সরকারি সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভ্যাসও তাঁদের রয়েছে। বস্তুত, নারদ কাণ্ড-কে রাজ্যের মন্ত্রী-নেতাদের দুর্নীতির একটি কণামাত্র বলেই চিহ্নিত করেছেন সিবিআই অফিসারেরা।
ভিডিও ফুটেজে সরাসরি টাকা নিতে দেখা যায়নি রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল রায় এবং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে। তা সত্ত্বেও তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হল কেন? সিবিআই সূত্রের খবর, সম্পাদিত ও অসম্পাদিত ভিডিও এবং অডিও টেপ নিয়ে এক মাস ধরে কাটাছেঁড়া হয়েছে। সেখান থেকে পাওয়া এক একটি বাক্য নিয়ে রীতিমতো গবেষণা হয়েছে। তার পর এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে তাঁরাও এই দুর্নীতির অংশ।
ভিডিও ফুটেজে যে সব তৃণমূল নেতার দেখা মিলেছিল, তাঁদের মধ্যে শঙ্কুদেব পণ্ডার নাম এফআইআরে নেই। সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, প্রাথমিক তদন্তের পরে এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ উঠে আসেনি যাতে এটা মনে করা যেতে পারে যে শঙ্কুদেব কোনও ব়ৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অঙ্গ। সেই কারণেই তাঁর নাম বাদ রাখা হয়েছে।
সিবিআই সূত্রে এ দিন দাবি করা হয়, তাদের তদন্ত এখনও অনেকটাই বাকি। অভিযুক্তদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চান সংস্থার গোয়েন্দারা। তাঁদের অফিসকর্মী, দেহরক্ষী এবং ঘনিষ্ঠদের জেরা করারও প্রয়োজন রয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে বলা হচ্ছে। তাঁদের কাছ থেকে আরও তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার আশা করছে সিবিআই।
আরও পড়ুন:বারোর ধাক্কায় কম্পিত তৃণমূল
এখন প্রশ্ন, ১৩ অভিযুক্তের জেলযাত্রা কি অবশ্যম্ভাবী? আইনজীবী মহল জানাচ্ছে, অভিযুক্তরা সংশ্লিষ্ট জেলা আদালত বা সরাসরি হাইকোর্টে গিয়ে আগাম জামিনের আবেদন করতে পারবেন। সেই আবেদন যদি মঞ্জুর হয় তবেই বাঁচোয়া। এক আইনজীবীর ব্যাখ্যা, অভিযুক্ত আগাম জামিন পাবেন কি না, তা মামলার গুরুত্বের উপরে নির্ভর করে।
স্টিং অপারেশন থেকে এফআইআর
২০১৪-এর মার্চে কলকাতা এসে অভিযুক্তদের সঙ্গে দেখা করেন নারদ নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েল। এ রাজ্যে ব্যবসা করার অছিলায় তাঁদের সঙ্গে আলাপ জমান এবং টাকা দেন। সেই দৃশ্য তুলে রাখেন গোপন ক্যামেরায়। তাঁর সেই ভিডিও প্রকাশিত হয় ২০১৬-এর ১৪ মার্চ। জনস্বার্থে মামলা হয় হাইকোর্টে। ভিডিও ফুটেজ পাঠানো হয় ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য। প্রাথমিক তদন্তের জন্য এ বছর ১৭ মার্চ সিবিআই-কে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই তদন্ত শেষ করতে বলা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল রাখে। তবে, প্রাথমিক তদন্তের সময় বাড়িয়ে এক মাস করে দেয়। সিবিআই অবশ্য হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশের দিন থেকেই এক মাস সময়সীমা হিসেব করেছে।
ম্যাথু এ দিন বলেন, ‘‘সিবিআই-এর এফআইআর-কে স্বাগত জানাচ্ছি। এক জন সাংবাদিক হিসেবে স্টিং অপারেশন করেছিলাম। রাজ্য সরকার কলকাতা পুলিশকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে নানা ভাবে আমায় হয়রান করে চলেছে।”