মানুষ খুন হলে খুনির মাফ নেই। কিন্তু নিহত গোলাপ কেন বিচার পায় না, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন গীতিকার। একই ভাবে প্রশ্ন জোরদার হচ্ছে, বাঘ মারলে সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। কিন্তু বাঘরোল মারলে?
দেশের বন্যপ্রাণ আইন বলছে, সংরক্ষণের হিসেবে বাঘ এবং বাঘের এই মাসি— মেছো বেড়াল বা বাঘরোলের মর্যাদা সমান। দু’টিই ওই আইনের প্রথম তফসিলভুক্ত প্রাণী। আইন অনুযায়ী বাঘ মারলে সর্বাধিক সাত বছরের জেল হতে পারে। বাঘরোল মারার ঘটনাতেও একই মাত্রায় সাজার সংস্থান আছে। কিন্তু আদতে বাঘরোল মেরে ক’জন শাস্তি পেয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন বহু বন্যপ্রাণপ্রেমী। প্রশ্নটি আরও জোরালো হয়েছে ভাঙড়ের কাশীপুরে সাম্প্রতিক একটি ঘটনার পরে।
মঙ্গলবার ভাঙড়ে একটি মেছো বেড়ালকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। তার পরেই অনেকে বলছেন, ফেব্রুয়ারি জুড়ে বাঘরোলদের নিয়ে দুনিয়ার নানান প্রান্তে চর্চা চলছে ঠিকই। কিন্তু ‘রাজ্য প্রাণী’ বলে স্বীকৃত বাঘরোলেরা পশ্চিমবঙ্গে মোটেই শান্তিতে নেই। আকছারই তাদের আবাসে থাবা বসাচ্ছে মানুষ। লাঠির বাড়ি পড়ছে তাদের মাথায়, পিঠে। বেঘোরে প্রাণ হারানোর ঘটনাও বিরল নয়। প্রশ্ন উঠেছে, শুধু তকমাই কি সার?
রাজ্য জীববৈচিত্র পর্ষদের চেয়ারম্যান অশোককান্তি সান্যাল বলেন, ‘‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে মিলিত ভাবে আমরা বাঘরোল সংরক্ষণের চেষ্টা করছি। সচেতনতা কর্মসূচিও চলছে।’’ তবু যে বিভিন্ন জায়গায় বাঘরোলের উপরে হামলা হচ্ছে, অশোককান্তিবাবু তা মেনে নিচ্ছেন। তিনি জানাচ্ছেন, বাঘরোলের থাকার জায়গাও কমে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: হেঁটে তিরুপতি দর্শন রাহুলের
বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বাঘরোল ছোট মাপের বন্য বিড়াল গোত্রের প্রাণী। তাদের বসবাস মূলত জলা জায়গা বা নদীর পাশে। পশ্চিমবঙ্গে খড়ির বন বা জলায় বড় ঘাসের জঙ্গলে মেছো বেড়াল দেখা যায়। গায়ে ছোপ ছোপ দাগ দেখে অনেকে চিতাবাঘ বলে ভুল করেন। কিন্তু এই প্রাণীটি মোটেই তেমন ভয়ঙ্কর নয়। মেছো বেড়ালেরা কিছু ক্ষেত্রে গ্রামে ঢুকে হাঁস, মুরগি বা ছাগল মারে। ফলে গ্রামবাসীদের রোষে আরও বেশি করে পড়ছে তারা।
আন্তর্জাতিক স্তরে বাঘরোল সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞ তিয়াষা আঢ্যের বক্তব্য, এই প্রাণীদের বাঁচাতে বিভিন্ন সরকারি দফতর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে একযোগে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করতে হবে। ‘‘হাওড়া জেলায় এমন ভাবে কাজ করে লাভ হয়েছে। এখন বাঘরোল দেখলে হাওড়ার বাসিন্দারা দ্রুত বন দফতরে খবর দেন, পিটিয়ে মারেন না,’’ বলেন তিয়াষাদেবী।
প্রশ্ন হচ্ছে, এমন ছবি বাকি জেলাতেও কি দেখা যাবে?