Coal Smuggling

কয়লা পাচারে কি ‘সক্রিয়’ দুই পুলিশকর্তা

তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, পুলিশকর্তা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের যোগসাজশে পরিকল্পনামাফিক কয়লা পাচারের কালো টাকা ২০২৩ থেকে মূলত তিন ভাগ হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ কর্তা এবং রাজনৈতিক মহল ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা কালো টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছেন বলে দাবি।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:২৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

কয়লা পাচারের নতুন মামলায় ঝাড়খণ্ড এবং এ রাজ্যের রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ পাঁচ ব্যবসায়ী ও দুই পুলিশকর্তার ভূমিকা এখন ইডির নজরে।

ওই দুই পুলিশকর্তার মদতেই ২০২৩এর পর থেকে এ রাজ্যে কয়লা পাচারের নতুন সিন্ডিকেট তৈরি হয় বলে দাবি তদন্তকারীদের। এবং গত দু'বছরে কয়লা পাচারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ওই দুই পুলিশকর্তা এবং পাঁচ ব্যবসায়ীর পকেটে গিয়েছে। তাঁদের সূত্র ধরে টাকার বখরা এ রাজ্যের রাজনৈতিক প্রভাশালীদের কাছেও পৌঁছেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।

তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, ‘‘সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের এক কয়লা ব্যবসায়ীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ২০২৩-এর পর থেকে কী ভাবে ঝাড়খণ্ডের বিসিসিএলের অধীনে থাকা বিভিন্ন কোলিয়ারি থেকে বেআইনি ভাবে তোলা কয়লা এ রাজ্যে সিন্ডিকেট মারফত পাচার হয়, তার নাড়ি-নক্ষত্র জানা গিয়েছে। সিন্ডিকেটের চাঁইদের বিষয়ে ওই ব্যবসায়ীর বয়ান নথিবদ্ধ করা হয়। তাঁকে ফের ডাকা হবে।’’

তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, পুলিশকর্তা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের যোগসাজশে পরিকল্পনামাফিক কয়লা পাচারের কালো টাকা ২০২৩ থেকে মূলত তিন ভাগ হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ কর্তা এবং রাজনৈতিক মহল ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা কালো টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছেন বলে দাবি।

তদন্তকারীদের কথায়, ঝাড়খণ্ডের ওই কয়লা মাফিয়ার অফিস থেকে বেআইনি কয়লা পাচারের বহু নথি উদ্ধার হয়েছে। ওই সব নথি যাচাইয়ের ভিত্তিতে এ রাজ্যে পুলিশকর্তা ও রাজনৈতিক মহল ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের ‘সক্রিয়তার’ নানা তথ্য সূত্র হাতে এসেছে বলে দাবি। ইডি সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ স্তরের কর্তা এবং আসানসোল, দুর্গাপুর এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আর এক পুলিশকর্তা কয়লা পাচার চক্রের মূল মদতদাতা বলে তথ্য সূত্র মিলেছে।

২০২৪ সালে ইসিআইআর দায়ের করে ঝাড়খণ্ড থেকে এ রাজ্যে বেআইনি ভাবে কয়লা পাচার চক্রের তদন্ত শুরু করেছে ইডি। কয়েক সপ্তাহ আগে ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের সীমানায় প্রায় ৪৪টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। ১৪ কোটি টাকা নগদ, কয়েক কোটি টাকার বাজার মূল্যের সোনার গয়না এবং প্রায় ১৫০ কোটি টাকার বেআইনি কয়লা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

২০২০ সালে আসানসোল, দুর্গাপুর-সহ ইস্টার্ন কোলফিল্ড (ইসিএল)-এর বিভিন্ন খনি থেকে বেআইনি ভাবে কয়লা তুলে বিভিন্ন জেলায় পাচার নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল। তাতে ইসিএলের কয়েক জন প্রাক্তন কর্তা ও আধিকারিক-সহ জনা দশেক কয়লা মাফিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। রাজ্য পুলিশের ১২ জন পুলিশকর্তাকে তখন দিল্লিতে একাধিক বার তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই সব পুলিশকর্তা এবং তাঁদের বন্ধু, পরিজনের সম্পত্তির নানা নথি জমা নিয়ে যাচাই করা হচ্ছে। কয়েক মাসের মধ্যেই ওই সব নথি সংক্রান্ত রিপোর্টও সংশ্লিষ্ট আদালতে পেশ করা হবে।

ইডির এক কর্তার কথায়, ‘‘কয়লা পাচারের দ্বিতীয় অর্থাৎ নতুন মামলাতেও পুলিশকর্তাদের ভূমিকা ক্রমশ সামনে আসছে।’’

ওই ইডি কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে মনে হচ্ছে, ঝাড়খণ্ড থেকে এ রাজ্যে বেআইনি কয়লা পাচারের মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন ওই দুই পুলিশকর্তা এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ পাঁচ ব্যবসায়ী। তদন্তের জন্য কয়েক জন ব্যবসায়ীকে তলব করা হয়েছে। আইনজীবীদের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে তাঁরা সময় চেয়েছেন।’’ তবে ওই ব্যবসায়ীদের গতিবিধি নজরে রাখা হয়েছে বলে জানান তদন্তকারীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন