Suvendu Adhikari

জঙ্গলমহল জুড়ে বার্তা ‘মুক্তিসূর্যে’র

জানা গিয়েছে, গত ১৮ অক্টোবর নেতাইয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা করে আসেন গড়বেতার কিছু তৃণমূল কর্মী। পরে তাঁরাই 'আমরা দাদার অনুগামী' নাম দিয়ে শুরু করেন কাজ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২০ ০৩:০২
Share:

নজরে পড়ছে এরকমই হোর্ডিং। নিজস্ব চিত্র।

পুজোতেও দুই জেলা জুড়ে থাকলেন ‘জঙ্গলমহলের মুক্তিসূর্য’। ষষ্ঠী থেকে অষ্টমী শুভেন্দু অধিকারীর শুভেচ্ছাবার্তার ফ্লেক্সে ভরিয়ে দেওয়া হল ঝাড়গ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকা। ‘দাদার অনুগামী’দের দেওয়া সেই সব ফ্লেক্সে শুভেন্দুর পরিচয় ‘জঙ্গলমহলের মুক্তিসূর্য জননেতা’! ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকা ও পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা, ঘাটাল, খড়্গপুর শহর ও গ্রামীণ এলাকাতেও রাস্তার মোড়ে মোড়ে একই ধরনের ফ্লেক্স দিয়েছেন শুভেন্দু অনুগামীরা। রেলশহরের আইআইটি উড়ালপুল, গোলবাজার ভাণ্ডারীচকের পাশাপাশি গ্রামীণের মাদপুরে তৃণমূল জেলা সভাপতি অজিত মাইতির বাড়ির এলাকাতেও একই ধরনের বহু ফ্লেক্স পড়েছে। একই চিত্র ঘাটাল শহর-সহ দাসপুর, সোনাখালি, ক্ষীরপাই, চন্দ্রকোনার রাস্তার দু’ধারে।

Advertisement

শুভেন্দু ও তাঁর অনুগামীদের দলহীন জনসংযোগ গত কয়েক মাস ধরেই চলছে। পুজোর আগে লালগড়ের নেতাই গ্রামে এসে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গৃহহীনদের বাড়ির চাবি, দুঃস্থ মহিলাদের সেলাই মেশিন দিয়ে গিয়েছেন শুভেন্দু। তারপর পুজোর এমন শুভেচ্ছাবার্তায় রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। অস্বস্তি বেড়েছে শাসকদলের অন্দরেও। শুভেন্দু কি তৃণমূলে থাকবেন, না তাঁর অন্য কোনও ভাবনা রয়েছে— তৃণমূলের অন্দরেই এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-সহ শারদোৎসবের সরকারি ও দলীয় শুভেচ্ছাবার্তা এবারও বহু জায়গায় দেখা গিয়েছে। তবে শুভেন্দুর ব্যক্তিগত শুভেচ্ছাবার্তার ফ্লেক্স কোনও মণ্ডপে নয়, অরণ্যশহরের পাঁচ মাথা মোড়, কলেজ মোড়, শিবমন্দির মোড়, বংশী মোড়, সাবিত্রী সিনেমা হল মোড়, জেলা পরিষদ ভবন চত্বর-সহ বিভিন্ন এলাকায় নজরে পড়েছে। লোধাশুলিতে জাতীয় সড়কের ধারে, জামবনি মোড়, চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দিরে ঢোকার রাস্তায়, মানিকপাড়া-সহ বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকাতেও জ্বলজ্বল করছে মুক্তিসূর্যের শুভেচ্ছাবার্তা। ফ্লেক্সে করজোড়ে শুভেন্দু ছবির সঙ্গে লেখা— শারদীয়া, লক্ষ্মীপুজো, দীপাবলি ও ছটপুজো উপলক্ষে জানাই শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন, জঙ্গলমহলের মুক্তিসুর্য জননেতা শুভেন্দু অধিকারী’।

Advertisement

সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রামে সৌমেন আচার্য, সুমন দাস, বিপ্লব রানা, শুভেন্দু ভুই, কবি মাহাতো, সুমিত চন্দের মতো শুভেন্দু-অনুগামীরা ওই ফ্লেক্স দিয়েছেন। শুভেন্দু অনুগামী সৌমেন আচার্য বলছেন, ‘‘আমাদের দাদা পরীক্ষিত জননেতা, জঙ্গলমহলবাসীর পরমাত্মীয়। তাই দাদার তরফে জঙ্গলমহলবাসীকে শুভেচ্ছাবার্তা জানানোটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়।’’ সৌমেন, সুমিতরা জানাচ্ছেন, আসন্ন ‘বাঁদনা’ ও ‘সহরায়’ পরব উপলক্ষেও ফ্লেক্স দেওয়া হবে। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘আমরা ছোটখাটো নেতা। এ সব নিয়ে আমাদের মন্তব্য না করাই ভাল!’’ তবে জেলা তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা বলছেন, ‘‘চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দিরে পরিকাঠামো উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী দু’কোটি টাকা বরাদ্দের পরে কনক অরণ্যের প্রবেশপথে এমন ফ্লেক্স খুবই অস্বস্তিকর। কী যে হচ্ছে বুঝতে পারছি না।’’

গড়বেতা ও ঘাটালে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেও শুরু হয়েছে ‘দাদার অনুগামী’দের প্রচার, গড়বেতায় বিতরণ করা হয়েছে নতুন বস্ত্র। ঘাটাল মহকুমা জুড়ে সক্রিয় ‘ঘাটাল বঙ্গ বাহিনী’নামে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। এর আগে মেদিনীপুর শহর, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা রোড, গোয়ালতোড়ে-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের অনেক এলাকাতেই ‘আমরা দাদার অনুগামী'র ব্যানারে নানা কর্মসূচি হয়েছে। বীরসিংহে বিদ্যাসাগরের দ্বিশতজন্মবার্ষিকীতে পৃথক অনুষ্ঠান করেন শুভেন্দু অনুগামীরা। সম্প্রতি চন্দ্রকোনায় তাঁরা রক্তদান শিবিরও করেন। এ বার গড়বেতাতেও সক্রিয় তাঁরা।

জানা গিয়েছে, গত ১৮ অক্টোবর নেতাইয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা করে আসেন গড়বেতার কিছু তৃণমূল কর্মী। পরে তাঁরাই 'আমরা দাদার অনুগামী' নাম দিয়ে শুরু করেন কাজ। এই শুভেন্দু অনুগামীদের তরফে মৃন্ময় শুকুল, সৌজিত পালরা বলেন, "দাদার (শুভেন্দু) অনুপ্রেরণা আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। তাই দাদা যেমন সর্বদা মানুষের পাশে থেকে কাজ করেন, আমরাও সেই কাজই করছি।’’ গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী ও গড়বেতা ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি সেবাব্রত ঘোষরা বলছেন, ‘‘এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন