বন্যার পর জোড়া পুজো, ফুলের বাজারে আগুন

বৃহস্পতিবার গণেশপুজো। শুক্রবার বিশ্বকর্মা পুজো। পরপর দুই পুজোর ধাক্কায় ফুলের দাম হয়েছে আকাশছোঁয়া। অন্যান্য বছরে এই সময়ে যেখানে ৭০-৭৫ টাকা কিলোগ্রাম দরে রজনীগন্ধা বিক্রি হয়, এবারে তা বিকিয়েছে ৩৬০ টাকা দরে। ১০০টি গোলাপের দাম যেখানে ছিল ৭০-৮০ টাকা, এবারে দর ১৫০ টাকা।

Advertisement

নুরুল আবসার

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:০৩
Share:

৫৬ ফুটের সিদ্ধিদাতা। খড়্গপুরের নিউ সেটলমেন্ট এলাকায়।—নিজস্ব চিত্র।

বৃহস্পতিবার গণেশপুজো। শুক্রবার বিশ্বকর্মা পুজো। পরপর দুই পুজোর ধাক্কায় ফুলের দাম হয়েছে আকাশছোঁয়া। অন্যান্য বছরে এই সময়ে যেখানে ৭০-৭৫ টাকা কিলোগ্রাম দরে রজনীগন্ধা বিক্রি হয়, এবারে তা বিকিয়েছে ৩৬০ টাকা দরে। ১০০টি গোলাপের দাম যেখানে ছিল ৭০-৮০ টাকা, এবারে দর ১৫০ টাকা। এমনকী অগতির গতি গাঁদাফুলেরও গত বছরের চাইতে দাম চারগুণ বেড়ে হয়েছে ৯০ টাকা কিলোগ্রাম। ১০০টি জবা ফুলের দাম যেখানে ছিল ২৫-৩০ টাকা, এবারে তা বিকিয়েছে ১৫০ টাকায়। ২০ টাকা কিলোগ্রামের দোপাটির দাম উঠেছে ১০০ টাকায়। ১৫০ টাকা কিলোগ্রামের বেল ফুলের দাম উঠেছে ৪৫০ টাকা।

Advertisement

কলকাতার মল্লিকঘাট, শিয়ালদহ থেকে শুরু করে কোলাঘাট পর্যন্ত সর্বত্র ফুলের দাম আগুন। কেন এই অবস্থা? দক্ষিণবঙ্গে ফুল চাষ হয় মূলত নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং হাওড়ায়। এই জেলাগুলির অনেকটা অংশ অতিবৃষ্টি এবং বন্যার কবলে পড়েছিল গত অগস্টে। ফলে ক্ষতি হয় ফুল চাষের।

ভরসার কথা, অতি বৃষ্টি এবং বন্যায় পদ্ম ফুলের চাষের খুব একটা ক্ষতি হয়নি। কারণ, সাধারণত রেলের নয়ানজুলি লিজ নিয়ে চাষিরা পদ্ম ফুল চাষ করেন। নয়ানজুলি ভেসে যাওয়ার মতো বন্যা এবারে হয়নি। ফলে পদ্ম চাষ অনেকটাই অক্ষত আছে। পদ্ম ফুলের দামও প্রায় স্বাভাবিক। ৩০০-৪০০ টাকা দরে প্রতি ১০০টি পদ্ম বিকিয়েছে। অন্যান্য বারেও পুজোর মরসুমে পদ্ম ফুলের দাম মোটের উপরে এই রকমই থাকে।

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছে, ফুলের এই বর্ধিত দাম কী চাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে দেবে? সেটি হওয়ার নয় বলেই জানালেন চাষিরা। তাঁদের বক্তব্য, নীচু জমির চাষ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অল্প পরিমাণ উঁচু জমিতে জলদি চারা (যাতে দ্রুত ফুল ফুটে যায়) রোপণ করে কিছুটা চাষ করা গিয়েছে। তাতে ক্ষতিপূরণ হওয়ার নয়। হাওড়ার বাগনান ২ ব্লকের ওড়ফুলি পঞ্চায়েতের ২১টি গ্রামের প্রায় ঘরে ঘরে ফুল চাষ হয়। এই পঞ্চায়েতের বাঁকুড়দহ গ্রামের পুলক ধাড়া, অশোক মাইতিরা বললেন, ‘‘দাম বেড়েছে ঠিকই। তবে তা তো মাত্র কয়েক দিনের জন্য। তাছাড়া বেশি দামে যে বিক্রি করব তার জন্য ফুলই বা কোথায়?’’ তাঁদের আক্ষেপ, উঁচু জমিতে কিছু চাষ হয়েছে। কিন্তু সেই ফুল প্রায় শেষ হয়ে আসছে।

সরকার ফুল চাষিদের জন্য শতক প্রতি ৫৪ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে। এটিকে পর্যাপ্ত বলে মনে করছেন না চাষিরা। সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, ‘‘ক্ষতিপুরণের হার বাড়ালে ভালো হত। কারণ এক শতক জমিতে ফুল চাষ করতে ৫৪ টাকার থেকেও বেশি প্রয়োজন হয়।’’

তবে তাড়াতাড়ি টাকা হাতে আসায় যদিও তাঁরা এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি বলে জানিয়েছেন ওড়ফুলির চাষিরা। এ বিষয়ে প্রধান শ্রীকান্ত (মানি) সরকার বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি হয়ে গিয়েছে। আগামী সপ্তাহে চাষিদের হাতে চেক তুলে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন