ফাইল চিত্র।
এ বার খেলা, জমবে বাংলা— এই হল অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ ফুটবলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্লোগান। কিন্তু বিশ্বকাপের এই জমাটি আসরে ব্রাত্য থাকছেন বিরোধী বিধায়করা। কারণ শাসক দলের বিধায়কদের সৌজন্যমূলক ‘সরকারি’ টিকিটের ব্যবস্থা হলেও তা জোটেনি বিরোধী বিধায়কদের। যা নিয়ে তরজা গড়িয়েছে বিধানসভার স্পিকার এবং মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত।
ঘটনা হল, পুজোর ছুটির পর বিধানসভা খোলার কথা সোমবার। তার আগে শনিবার ছুটির মধ্যেই বিধানসভা খুলিয়ে শাসক দলের মুখ্য সচেতকের ঘর থেকে ‘চুপিসাড়ে’ শুধু তৃণমূল বিধায়কদের যুব বিশ্বকাপের টিকিট বিলি হয়। প্রত্যেক বিধায়কের জন্য বরাদ্দ ছিল চারটি করে টিকিট। গোল বেধেছে সেই খবর বিরোধীরা জেনে যাওয়ায়। এক সরকারি আধিকারিক শুক্রবার বিধায়কদের ফোন করে যুব বিশ্বকাপের টিকিট নেওয়ার জন্য এ দিন বিধানসভায় যেতে বলেন। ভুলক্রমে তাঁর ফোন কয়েক জন বিরোধী বিধায়কদের কাছেও চলে যায়। পরে অবশ্য তাঁদের ফের ফোন করে জানানো হয়, টিকিট শুধু তৃণমূলের বিধায়কদের জন্য। অতএব, তাঁদের যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু এই ফোনের ভুলেই গোটা বিষয়টি জেনে ফেলে বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: ‘নামী বাবার ছেলে হওয়ার চাপ নিতে হয় না আমাকে’
এ দিন বিধানসভায় টিকিট বিলি চলাকালীন সেখানে হাজির হয়ে প্রতিবাদ করেন বিরোধী দলের সচেতক মনোজ চক্রবর্তী এবং কংগ্রেস বিধায়ক আখরুজ্জামান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বলা হয়, তাঁর টিকিট দরকার হলে তিনি পাবেন। কিন্তু মনোজবাবু জানান, তাঁর ব্যক্তিগত ভাবে টিকিট দরকার নেই। কিন্তু বিরোধী বিধায়কদের এড়িয়ে শাসক দলের বিধায়কদের গোপনে টিকিট দেওয়ায় তাঁর আপত্তি আছে। মনোজবাবুর কথায়, ‘‘ছুটির দিনে চুপিসাড়ে বিধানসভা খুলে শুধু শাসক দলের বিধায়কদের টিকিট দেওয়া হল। এটা একটা অগণতান্ত্রিক এবং অসুস্থ নজির।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘আমরা বিরোধীরা কেউ টিকিট দাবি করিনি। কিন্তু শহরে একটা আন্তর্জাতিক ইভেন্টের টিকিট বিধানসভায় যখন বিলি করা হচ্ছে, সেটা শুধু বাছাই করা কিছু বিধায়কদের জন্য কেন? গীতাঞ্জলি আবাসন থেকে শুরু করে সব বিষয়েই এই সরকার স্বজনপোষণ এবং বৈষম্যের উপরেই চলছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী এবং পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন সুজনবাবু। দু’জনকেই তিনি লিখেছেন, ‘‘আমরা এ বিষয়ে অবিলম্বে আপনার হস্তক্ষেপ দাবি করছি। আপনি এ বিষয়ে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবেন এবং কী ব্যবস্থা নিলেন, তা জানাবেন— আশা করি।’’ মনোজবাবু এবং সুজনবাবু অভিযোগ জানিয়েছেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
তবে শুধু নীতিগত ভাবেই নয়, সরকারের এই টিকিট-বৈষম্যের ফলে ব্যক্তিগত ভাবেও বঞ্চিত হয়েছেন বিরোধী বিধায়করা। যেমন— কংগ্রেসের প্রতিমা রজক, ফরওয়ার্ড ব্লকের আলি ইমরান রামজ্ (ভিক্টর)-এর মতো তরুণ বিধায়করা। প্রতিমা সদ্য বিবাহিতা। ভেবেছিলেন স্বামী এবং পরিবারের আরও কয়েক জনকে নিয়ে যুব বিশ্বকাপ দেখতে যাবেন। বিধায়ক হিসাবে টিকিট পাবেন, এমন আশা ছিল। এ দিন চুপিচুপি শুধু তৃণমূলের বিধায়কদের টিকিট দেওয়া হয়েছে জেনে বললেন, ‘‘এত ছোট মন একটা সরকারের হতে পারে? আবার এই সরকারেরই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, তাঁরা নাকি দারুণ গণতান্ত্রিক এবং উদার!’’ ভিক্টরও ভেবেছিলেন, বড় ছেলেকে নিয়ে যুব বিশ্বকাপ দেখতে যাবেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান। তা সত্ত্বেও আমাকে টিকিট দিল না! এর আগেও এ রকম করেছে। হীন মানসিকতা ছাড়া এটাকে আর কী বলব?’’
তবে অনেকেই মনে করেন, শাসক বা বিরোধী কোনও বিধায়কেরই বিনা মূল্যে খেলার টিকিট পাওয়া উচিত নয়। দরকার হলে তাঁদের টিকিট কিনে নেওয়া উচিত। সরকারি আনুকূল্যের জন্য হা পিত্যেশ করে বসে আছেনই বা কেন বিধায়করা? এ প্রশ্নও উঠেছে।
স্পিকার বিমানবাবুকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি জানতাম না। এখন শুনেছি। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ আর ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, না জেনে তিনি বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করবেন না।