ওষুধ খেল মুরগি, মানুষের কী হবে!

খালি চোখে দেখলে এর মধ্যে কোনও গলদ চোখে না-ও পড়তে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, রোগ প্রতিরোধ বা মুরগির ওজন বাড়ানোর জন্য বেহিসেবি অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারই বহু মানুষের বিপদ ডেকে আনছে!

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫৩
Share:

মুরগিছানাগুলি নেতিয়ে পড়েছে দেখে পোলট্রি মালিক নিজে থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক কিনে এনেছিলেন। দু’দিন খাওয়াতেই ছানাগুলি একটু সতেজ হয়েছিল। তা দেখেই ওষুধ বন্ধ করে দিয়েছিলেন ওই পোলট্রি মালিক।

Advertisement

খালি চোখে দেখলে এর মধ্যে কোনও গলদ চোখে না-ও পড়তে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, রোগ প্রতিরোধ বা মুরগির ওজন বাড়ানোর জন্য বেহিসেবি অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারই বহু মানুষের বিপদ ডেকে আনছে! সম্প্রতি দিল্লির পরিবেশ গবেষণা কেন্দ্র ‘সেন্টার অব সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই)-এর রিপোর্টে উঠে এসেছে, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ফলে হাঁস-মুরগির শরীরে ‘মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’ ব্যাক্টেরিয়া বাসা বাঁধছে। সেই মুরগিদের বিষ্ঠার মাধ্যমে ওই সব ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া পরিবেশে ছড়িয়ে দুরারোগ্য রোগের কারণ হতে পারে। কারণ ওই ব্যাক্টেরিয়া মানবদেহে ঢুকলে রোগ-ব্যাধির ক্ষেত্রে অনেক ওষুধই সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে কাজ করবে না।

উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা ও পঞ্জাবের ২১৭টি জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছি সিএসই। সেই নমুনা বিশ্লেষণ করে তারা জানিয়েছে, এতে ‘ই কোলাই’, ‘ক্লেবসিয়েলানিউমোনাই’ এবং ‘স্ট্যাফাইলোকক্কাস লেন্টাস’ ব্যাক্টেরিয়া মিলেছে। এগুলি একাধিক অ্যান্টিবায়োটিককে প্রতিহত করতে পারে (মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট)। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক এবং কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পাশাপাশি রাজ্যের পরিবেশ দফতর ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকেও সক্রিয় হওয়ার আর্জি জানিয়েছে সিএসই।

Advertisement

ইনস্টিটিউট অব অ্যানিম্যাল হেল্থ অ্যান্ড ভেটেরিনারি বায়োলজিকস-এর বিজ্ঞানী শান্তনু পণ্ডা বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের ভিতরে রোগজীবাণুকে নিষ্ক্রিয় বা ধ্বংস করে। কিন্তু তার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো প্রয়োজন। তা না হলে ওই জীবাণুগুলি ওষুধের প্রতিরোধী হয়ে ওঠে এবং সেই প্রতিরোধী জিন নিয়েই বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। কখনও কখনও অন্য ব্যাক্টেরিয়ার মধ্যেও সেই জিনকে ছড়িয়ে দেয়। সেই ব্যাক্টেরিয়া হাঁস-মুরগির বিষ্ঠার মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।

রাজ্য প্রাণিসম্পদ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত অধিকর্তা জহরলাল চক্রবর্তী জানান, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা পোলট্রি ফার্ম থেকে সরাসরি চাষের জমিতে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তার ফলে ওই সব ব্যাক্টেরিয়া আনাজে এবং পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণিবিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, যে সব শ্রমিকেরা পোলট্রিতে কাজ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ব্যাক্টেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় হওয়ার আশঙ্কা আরও বেশি। তবে শান্তনুবাবু জানাচ্ছেন, পাখির মাংস থেকে এই সংক্রমণের আশঙ্কা কম, কারণ মাংস রান্না করে খাওয়া হয়।

রাজ্য প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রের খবর, এ রাজ্যের বড় পোলট্রিগুলিতে নির্দিষ্ট মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নিয়মিত নজরদারিও চালানো হয়। যদিও জহরলালবাবুর মতে, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো রাজ্যে এ নিয়ে সচেতনতা কম। ফলে সেখানে এই ধরনের অপব্যবহারের আশঙ্কা বেশি। রাজ্যের পোলট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতি অবশ্য বলছেন, এ রাজ্যে তো বটেই, গোটা দেশেই পোলট্রি শিল্পে অ্যান্টিবায়োটিকের বহুল ব্যবহার কমেছে। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার করে, এমন পোলট্রির সংখ্যা ৫ শতাংশের বেশি নয়। তাঁর দাবি, সচেতনতা বেড়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন