পর্যটনে সুদিন আনতে ঐতিহ্যের শহরে রূপটান

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করেছেন, পর্যটক টানতে রাজ্যের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী শহরে সংরক্ষণ ও সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে। উত্তর থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন শহরে রয়েছে বাংলার অজস্র ঐতিহ্য-চিহ্ন। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের বিচারে কারা পাবে পর্যটন কেন্দ্রের শিরোপা?

Advertisement

অত্রি মিত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২২
Share:

মাথায় মহামহিম হিমালয়। পদতল ধুয়ে দিচ্ছে বঙ্গোপসাগর। এ-হেন প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে আছে সাংস্কৃতিক আর ঐতিহাসিক ঐতিহ্য-সম্পদও। পর্যটনে জোয়ার আনতে এ বার রূপটান পড়তে চলেছে সেই সব ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলে।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করেছেন, পর্যটক টানতে রাজ্যের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী শহরে সংরক্ষণ ও সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে। উত্তর থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন শহরে রয়েছে বাংলার অজস্র ঐতিহ্য-চিহ্ন। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের বিচারে কারা পাবে পর্যটন কেন্দ্রের শিরোপা?

নবান্নের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ধাপে ধাপে রাজ্যের সব ঐতিহ্যবাহী শহরকেই তাদের স্বমহিমায় ফিরিয়ে দিয়ে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। উত্তরে কোচবিহার এবং দক্ষিণে নবদ্বীপকে দিয়ে শুরু হচ্ছে সেই কাজ।

Advertisement

ব্রিটিশ আমলের বাংলার একমাত্র রাজন্যশাসিত রাজ্য কোচবিহারের অন্যতম ঐতিহ্য তার দিঘি, প্রাসাদ ও বাড়ি। আর গৌড়ীয় সংস্কৃতির পীঠস্থান নবদ্বীপের ঐতিহ্য তার মন্দিরে, তার চৈতন্যসংস্কৃতিতে। এ-সবই সংরক্ষণ করে দুই শহরের প্রাচীন রূপ ফিরিয়ে আনার কাজ করবে সরকার। কী ভাবে তা করা হবে, তার সবিস্তার রিপোর্ট তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে আইআইটি খ়ড়্গপুর এবং আইআইএসটি শিবপুর। মুখ্যসচিব মলয় দে সম্প্রতি নবান্নে তথ্য ও সংস্কৃতি, বিদ্যুৎ, পূর্ত-সহ বিভিন্ন দফতরের সচিবদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানেই ঠিক হয়, কোচবিহারের প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করবে আইআইটি। আইআইএসটি রিপোর্ট তৈরি করবে নবদ্বীপের।

‘‘ওই দু’টি শহরকে ‘হেরিটেজ সিটি’র রূপ দিতে কত খরচ হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। সবিস্তার রিপোর্ট পেলে তা চূড়ান্ত হবে,’’ বলেন নবান্নের এক কর্তা।

প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, ঐতিহ্যবাহী শহরের সার্থক রূপ দিতে মাটির তলা দিয়ে শহরের বিদ্যুতের সংযোগ এবং নিকাশির ব্যবস্থা হবে। নবান্নের ওই কর্তা বলেন, ‘‘শহরকে হেরিটেজ সিটি হিসেবে সংরক্ষণ করা মানে তার উন্নয়ন আটকে রাখা যাবে না। কী ভাবে, কী করা যায়, সেটাই সমীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’’ ওই কর্তার আশা, চলতি বছরের মধ্যেই সমীক্ষার শেষ করে শহর দু’টির সংরক্ষণের কাজ শুরু করা যাবে। তিনি জানান, কোচবিহারের রাজবাড়ি-সহ প্রাচীন সৌধ ও বাড়ি যা আছে, তার বেশির ভাগই সরকারি অফিস কিংবা হাসপাতাল। তাই ওই সব বাড়ি সংরক্ষণে সমস্যা হবে না। কিন্তু নবদ্বীপের অনেক ঐতিহ্যবাহী সৌধ রয়েছে ব্যক্তিগত মালিকানায়। সেগুলো কী ভাবে সংরক্ষণ করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে নবান্নে।

সরকারের এই উদ্যোগ নিয়ে ওই দুই শহরের বাসিন্দারা উৎসাহিত। নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেবের কথায়, ‘‘এখানে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মূল মন্দির, যে-সব দ্বাদশ শিবমন্দির রয়েছে, সব ক’টিরই জীর্ণদশা। অবিলম্বে সংস্কার প্রয়োজন। সরকার দায়িত্ব নিলে ভালই হয়।’’ তিনি জানান, নবদ্বীপের ভবতারিণী কালীমন্দির বিরল স্থাপত্যের নিদর্শন। একচূড়া, অষ্টকোণাকৃতি মন্দিরটির এখন ভগ্নদশা। কোনও দিন ভেঙে পড়লে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে।

দিঘি সংস্কার ও সংরক্ষণ হলে কোচবিহার শহর তার প্রাচীন রূপ অনেকটাই ফিরে পাবে বলে মনে করছেন সেখানকার হেরিটেজ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অরূপজ্যোতি মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘এই শহরের অনেক দিঘিই ইতিমধ্যেই বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে কিংবা মাটি ফেলে ছোট করা হয়েছে। সেগুলো সংস্কার করলে ভাল হয়।’’ তিনি জানান, এক সময়ে নদীপথে বলরামপুর দিয়েই বাংলার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল কোচবিহারের। ‘গেটওয়ে অব কোচবিহার’ হিসেবে বলরামপুরেরও সংরক্ষণ চান তাঁরা।

তবে নবান্নের অনেক কর্তার প্রশ্ন, কোচবিহার, নবদ্বীপের চেয়েও প্রাচীন শহর বিষ্ণুপুর আর গৌড়। ওই সব শহরের সংরক্ষণ হবে না কেন?

‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় কোচবিহার আর নবদ্বীপ থেকে কাজ শুরু হচ্ছে। এর পরে ধাপে ধাপে বিষ্ণুপুর-সহ ঐতিহ্যবাহী সব শহরকেই সংরক্ষণের আওতায় আনার পরিকল্পনা আছে,’’ বললেন নবান্নের এক কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন