বিক্ষোভের দিনই বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বাম বিধায়কদের গ্রেফতার করা উচিত। বাম বিধায়কদের কাছ থেকে সে দিনের বাজেয়াপ্ত করা ‘অস্ত্র’ এ বার পাঠানো হচ্ছে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য! সে অস্ত্র হোক না খেলনা! তার মধ্যে বিপজ্জনক কিছু আছে কি না, তা তো যাচাই করে দেখতে হবে। বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রীই বলে দিয়েছিলেন, পিস্তল আসল না নকল, পরীক্ষা করে দেখা হবে।
কান্দির পিস্তল-কাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বাম বিধায়কেরা দু’দিন আগে বিধানসভা অধিবেশনের মধ্যে খেলনা পিস্তল হাতে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় মার্শালকে দিয়ে প্লাস্টিকের কয়েকটি বন্দুক বিধায়কদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। বিধানসভার সচিবালয় সূত্রের খবর, বাজেয়াপ্ত করা পিস্তল ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। যাতে ঘটনার তদন্তে কোনও ফাঁক না থাকে। অপরাধী সাব্যস্ত হলে সংশ্লিষ্ট বিধায়কদেরও শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। নিয়মানুযায়ী কারও হেফাজত থেকে ‘অস্ত্র’ বাজেয়াপ্ত হলে ‘সিজার্স লিস্ট’ দেওয়া হয়। যাতে কী কী বাজেয়াপ্ত করা হল, তার নথি থাকে। কিন্তু সেই দিন বিধানসভায় এমন কোনও ‘সিজার্স লিস্ট’ তৈরি করা হয়নি বলে মার্শাল জানিয়েছিলেন। বাম বিধায়কদের আশঙ্কা, এর পরে খেলনা পিস্তলের মধ্যে কোনও ‘বিপজ্জনক বস্তু’ ধরা পড়বে না, তার নিশ্চয়তা কি?
স্পিকার বিমানবাবু অবশ্য বৃহস্পতিবার এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও মন্তব্য করেননি বাম পরিষদীয় নেতারাও। তবে সিপিএমের এক বিধায়কের মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যদি চান আমাদের গ্রেফতার করতে, তা হলে যে কোনও ভাবেই যে আমরা দোষী প্রতিপন্ন হব! আমরা ভয় পাচ্ছি না। গ্রেফতার করেই দেখাক না সরকার! কান্দিতে যারা নাইন এমএম পিস্তল নিয়ে মিছিল করল, তাদের ছেড়ে আমাদের গ্রেফতার করে সরকার আনন্দ পেলে পাক!’’ বিজেপি এবং কংগ্রেসের বিধায়ক মহলও খেলনা বন্দুক ঘিরে তৎপরতা দেখে বিস্মিত! শাসক দলের কেউ কেউ আবার একান্তে বলছেন, ‘‘বাম বিধায়কেরা খেলনা বন্দুক দেখিয়ে অন্য একটা রাস্তা করে দিয়েছেন। এর পরে কান্দির মিছিলকারীরাও খেলনা বন্দুক নিয়ে বেরিয়েছিলেন বলে যদি তদন্তে উঠে আসে?’’
বিধানসভায় পিস্তল-বিক্ষোভের দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছিলেন, গণতন্ত্র ‘কলঙ্কিত’ হল। এমন ‘নজিরবিহীন’ কাণ্ড ঘটিয়ে বামেরা বিধানসভার মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করলেন বলেও সরব হয়েছিলেন শাসক শিবিরের নেতারা। ইতিহাস অবশ্য বলছে, বিধানসভায় খেলনা বন্দুক নিয়ে প্রবেশের ঘটনা এই প্রথম নয়। বিধানসভার রেকর্ডার বইয়ের লেখক দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ১৯৮১ সালের ১৮ মার্চ খেলনা বন্দুক নিয়ে বিধানসভায় ঢুকে ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করেছিলেন গোর্খা লিগের বিধায়ক রেণুলীনা সুব্বা। তৎকালীন স্পিকার মনসুর হবিবুল্লা তাঁকে সাসপেন্ড করেছিলেন। এ বার বাম বিধায়কেরা অবশ্য ভয় দেখানো নয়, খেলনা পিস্তল দেখিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন।