Partha Chatterjee

আমি ডক্টরেট, এখানে সবাইকে শিখিয়ে দেব! আদালতে পার্থের চ্যালেঞ্জ, পরক্ষণেই করজোড়ে আবেদন, এ বার রেহাই দিন

২০২২ সালে এসএসসি গ্রুপ সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্তের প্রথমে যে চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই, তাতে পার্থ ছাড়াও নাম ছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, অশোককুমার সাহা, অ্যাডহক কমিটির সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৩৯
Share:

এসএসসি গ্রুপ সি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনলেন জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

নিয়োগ মামলায় ধৃত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আবার দাবি করলেন তিনি নির্দোষ। আঙুল তুললেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দিকে। তাঁর দাবি, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। সামাজিক সম্মান নষ্ট হয়েছে। এ বার তাঁকে রেহাই দিক আদালত। পাশাপাশি, পার্থের প্রশ্ন, এ ভাবে চলতে থাকলে বিচারব্যবস্থার উপর ভরসা থাকবে কী ভাবে?

Advertisement

এসএসসি গ্রুপ সি ‘দুর্নীতি’ মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ-সহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারই সেই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। পার্থের দাবি, তিনি কারও চাকরির জন্য সুপারিশ করেননি। এই মামলা থেকে অব্যাহতি চান প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি দাবি করেন, বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যাঁরা যোগ্য, তাঁদের ডাকা হয়েছে। কিন্তু বিচারক জানান, ‘রিশাফল’ (রদবদলের) অভিযোগ উঠছে। শুক্রবার আলিপুর আদালতে এই মামলার শুনানিতে যা যা হল—

বিচারক: ‘রিশাফল’ করার অভিযোগ রয়েছে। সরানো হয়েছিল এক জনকে। অ্যাডভাইসর বদল করার অভিযোগ আছে।

Advertisement

পার্থ (আইনজীবী): যাঁকে আমি সরিয়েছিলাম, তিনি নিজেও এই মামলায় অভিযুক্ত।

সরকারি আইনজীবী (পিপি): তদন্তে এক জনের সঙ্গে অন্য জনের যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে।

বিচারক: তা হলে নিয়োগ সম্পন্ন হল কেন?

পিপি: এই নিয়োগ হয়েছিল যোগসূত্রের জন্য। অন্যদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র ছিল। তার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

পার্থ: পর্ণা বসু (এসএসসি আধিকারিক) সাক্ষী ছিলেন। পরে মামলার অভিযুক্ত হন। এখন বলা সহজ যে, এক এক জনকে বসিয়ে এক একটা কাজ হয়েছিল। নোটিফিকেশন সরকার বার করেছিল। তা ছাড়া কার বক্তব্য থেকে এই সমস্ত অভিযোগ পাচ্ছেন? যে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, তার আমলের ঘটনা।

বিচারক: (কয়েকটি নাম বলেন) ২০১৬-’২২ সালে ষড়যন্ত্র করে আপনারা এবং এজেন্ট এসএসসি-র যোগ্য প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। ইলেকট্রনিক রেকর্ড নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। প্রতারণার অভিযোগ আনা হল। ৪৭৭এ (ধারা) অনুযায়ী, আপনারা সকলে নকল চিঠিকে আসল বলে কাজে লাগিয়েছেন।

অন্য অভিযুক্তেরা: আমরা নির্দোষ।

এর পরে পার্থ হাসপাতাল থেকে ভার্চুয়ালি হাজিরা দেন। হাসপাতাল থেকে তিনি বলেন, ‘‘আমার কিছু বলার আছে।’’

বিচারক: আপনি দোষী না নির্দোষ?

বিচারক পার্থের উদ্দেশে বলেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শান্তিপ্রসাদ সিংহ (মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন উপদেষ্টা), কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের (মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি) সাহায্যে নিয়োগে যে ভাবে নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে, তাতে আপনাদের সকলের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হল।

পার্থ কিছু বলতে যান।

বিচারক: (পার্থের উদ্দেশে) আপনি দোষী না নির্দোষ বলুন। এতো কথা বলা যায় না। আপনি বিচারপর্বে বলার সুযোগ পাবেন।

পার্থ: আমি নির্দোষ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি প্রতিহিংসা নিতে রাজ্যে নেমেছে। এঁরা চার জন আগেই ছিলেন। শান্তিপ্রসাদকে যোগেশচন্দ্র কলেজ থেকে আমরা গ্রহণ করেছিলাম, এসএসসি গ্রহণ করেছিল। কোনও অভিযোগ থাকলে এসএসসি বিদায় দিত। আর আমি শপথ নিয়ে মন্ত্রী হয়েছি। সংস্কৃতিগত ভাবে আমার সম্মান আছে। সামাজিক সম্মান আছে। আমাকে বাঁচানোর দায়িত্ব আদালতের। শুধু এই ভাবে দোষী সাব্যস্ত হব, তা হতে পারে না।

বিচারক: সাক্ষী হবে, তখন বলবেন।

পার্থ: সাক্ষীর দরকার নেই।

বিচারক: আপনাকেও সুযোগ দেওয়া হবে।

পার্থ: আমাকে বলতে দিন... সাড়ে তিন বছর ধরে বন্দি। আমি মন্ত্রী (ছিলাম), তাঁরা চাকুরে চাটুকারি সংস্থায় যাঁরা কাজ করেন। বোর্ডের নির্দেশে পরিচালিত হয়। আর এসএসএসি-র এক জন লোকও স্থায়ী চাকুরে নন। যে মহিলার নাম তোলা হয়েছে, তিনি কী করেছিলেন? ডব্লিউবিসিএস থেকে মাইনে নিয়েছেন। কিচ্ছু করতে পারিনি। ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল— কত তৈরি করেছি। আমি অসহায়। আমি ডক্টরেট। আমি এখানে সবাইকে শিখিয়ে দেব। আমায় ডিসচার্জ করুন। (একটু থেমে) এ ভাবে হলে আগামিদিনে বিচারব্যবস্থার উপর ভরসা থাকবে না। আমায় মুক্ত করুন।

পার্থ: আমি অসুস্থ ছিলাম। আমার কোনও সামাজিক সম্মান নেই? করজোড়ে বলছি, রেহাই দিন।

বিচারক: আপনার উকিল বলেছে। সোমবার আপনাকে আবার বিরক্ত করব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement