প্রহৃত: গণপিটুনির হাত থেকে চার মহিলাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
কেউ গিয়েছিলেন ব্যাঙ্কে। কেউ গিয়েছিলেন ভাইঝির সঙ্গে দেখা করতে। কেউ আবার গিয়েছিলেন গ্রামে শাড়ি ফেরি করতে। ছেলেধরা সন্দেহে ওই ৪ জন মহিলাকে আটকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে একদল গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে। সোমবার ধূপগুড়ির ঝাড়আলতা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাউকিমারি বাজারের ঘটনা। খবর পেয়ে ধূপগুড়ি থানার পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। ক’দিন আগে বারোঘরিয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক মহিলাকে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। সে যাত্রায় পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতার কররে। এবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রহৃত মহিলারা হলেন গীতা দাস, মমতা বর্মন, সারথি সহানি ও পায়েল দাস। তাঁদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকিদের আঘাত তেমন গুরুতর নয় বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ জানিয়েছে, কারা মারধরে যুক্ত, তা নিয়ে কিছু সূত্র মিলেছে। সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে বলে থানার কয়েকজন অফিসার জানান। বছর পঞ্চাশের গীতা দাস জানান, প্রতিবেশী মমতা বর্মনকে নিয়ে এ দিন দুপুরে তিনি ডাউকিমারি বাজার সংলগ্ন ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন। ভিড় থাকায় বাইরে গাছের ছায়ায় বসেন ওঁরা। সেখানে লোকজন তাঁদের ঘিরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। দেখতে দেখতে ভিড়ও জমে যায়। ‘ছেলেধরা’ আওয়াজ দিলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন গীতাদেবী। গীতাদেবীর অভিযোগ, ‘‘দু’জন মহিলা এসে আমাকে তল্লাশি চালায়। বাধা দিলে চড়-থাপ্পড়ও মারে। সঙ্গে থাকা মমতার গালে পাথর দিয়ে আঘাত করা হয়। তাঁর চোয়াল বেঁকে যায়।’’ হেনস্থার আর এক শিকার পায়েল দাস বলেন, ‘‘আমি গিয়েছিলাম ওই গ্রামে শাড়ি বিক্রি করতে। কিন্তু বাজারে যেতেই সবাই যখন আমাকে ঘিরে ধরে মারতে চাইল। ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাই।’’
ধূপগুড়ির স্টেশন পাড়ার সারথি সহানি জানান, তিনি গিয়েছিলেন ভাইঝির বাড়ি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাড়ির রাস্তা ভুল করে বাজারে দু-এক জনকে জিজ্ঞাসা করতেই তাঁরা ‘ছেলেধরা’ বলে চেঁচামেচি করেন। ৬-৭ জন আমাকে ঘিরে ধরে গালাগাল করেন। তখনই পুলিশ চলে আসায় লোকগুলি পালিয়ে যায়।’’
তবে ডাউকিমারি বাজারের বাসিন্দারা দাবি করেন, মহিলাদের আচরণে সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা জেরা শুরু করেন। তখন একজন ছুটে পাট খেতে ঢুকে গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন। বাজারের বাসিন্দাদের কয়েক জন বলেন, ‘‘আমরা মহিলাদের আটকে পুলিশকে খবর দিই।’’ ধূপগুড়ি থানার আইসি সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘‘উদ্ধার হওয়া মহিলাদের মধ্যে তিন জন জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি ধূপগুড়ির আশেপাশের এলাকায়। এক জনের বাড়ি শিলিগুড়িতে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ এ দিন থানায় গিয়ে ওই মহিলাদের সঙ্গে দেখা করেন ধূপগুড়ির বিডিও দীপঙ্কর রায়। তিনি বলেন, ‘‘ওই মহিলাদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ রয়েছে। পুলিশ নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করবে।’’
ধূপগুড়ি থানার আইসি সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘‘গুজব না ছড়ানোর ব্যাপারে আমরা সোশাল মিডিয়ায় প্রচার করছি। গ্রামে গিয়ে মানুষকেও সতর্ক করছি। তারপরও কিছু অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটছে।’’