Calcutta News

ফের তপ্ত দমদম জেল, হত-আহত নিয়ে ধোঁয়াশা

প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, মৃতদেহগুলি আর জি কর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০৩:৫৩
Share:

ধুন্ধুমার দমদম সেন্ট্রাল জেলে। —ফাইল চিত্র।

দমদম জেলে হাঙ্গামার ৩৬ ঘণ্টা পরেও নিহত ও আহতের সংখ্যা নিয়ে মুখ খুলল না কারা দফতর। কত জন মারা গিয়েছেন এবং কত জন আহত তা নিয়ে কোনও সরকারি বিবৃতি দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে ফের রবিবার উত্তপ্ত হল দমদম কারাগার। কারা সূত্রের খবর, মহিলা বন্দিদের ওয়ার্ডে গোলমাল থামাতে ফের গুলি চালানো হয়েছে। তাতে অন্তত চার জনের আহত হওয়ার কথা জানা গিয়েছে। কিন্তু সরকারি বিবৃতি দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, শনিবারের ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। বেসরকারি সূত্রের দাবি, সংখ্যাটি দ্বিগুণ হতে পারে। এ দিন তল্লাশি চালিয়ে জেল থেকে দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে বলে খবর।

Advertisement

প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, মৃতদেহগুলি আর জি কর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। তার মধ্যে এক জনের দেহ তাঁর মা শনাক্ত করেছেন। লেকটাউন এলাকার বাসিন্দা ওই যুবক মাদক মামলায় বিচারাধীন বন্দি ছিলেন। তিনি হামলায় মদত দিয়েছিলেন বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। বাকি দেহগুলি এখনও কেউ শনাক্ত করেনি বলে খবর।

শনিবারের ঘটনার পরে বন্দিদের সঙ্গে তাঁদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ ফের চালু করার কথা জানিয়েছে কারা দফতর। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই সাক্ষাৎকার বন্ধ করা হয়েছিল। শনিবার বিজয় দাস নামে এক বন্দি অভিযোগ করেছিলেন, সাক্ষাতের জন্য ‘ঘুষ’ দিতে হয়। টাকা দেওয়ার পরে সাক্ষাৎ বন্ধ হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন অনেক বন্দি।

Advertisement

আরও পড়ুন: আন্দোলন-মঞ্চ থেকে দূরে থাকার আর্জি প্রবীণ ও শিশুদের

কারা সূত্রের খবর, এ দিন সকাল থেকে বিচারাধীন বন্দিরা অনশনে বসেন। বেলা ৩টে নাগাদ আচমকা হাতুড়ি ও লোহার রড দিয়ে সেলের তালা ভেঙে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। তার পর মহিলা ওয়ার্ডে চড়াও হন। প্রাণভয়ে মহিলা বন্দিদের অনেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁদের গায়েও হাত তোলা হয়েছে বলে খবর। মহিলা পুলিশ ও রক্ষীদেরও মারধর করা হয়। অভিযোগ, পুরুষ বিচারাধীন বন্দিরা মহিলা ওয়ার্ডের সামনে গ্যাস সিলিন্ডার ফাটান। অতিরিক্ত বাহিনী গেলে তাঁদের উপরেও চড়াও হন তাঁরা। পুলিশ সূত্রের দাবি, পরিস্থিতি সামলাতেই তখন গুলি চালাতে হয়।

মহিলা বন্দিদের অনেকের সঙ্গে তাঁদের শিশু-সন্তানেরা থাকে। তারাও আতঙ্কিত বলে বন্দিদের পরিজনদের দাবি। বন্দিদের পরিজনদের দাবি, এ দিন দুপুরে ভাতের সঙ্গে তরকারি না-পেয়ে অনেক বন্দি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে কারা সূত্রের দাবি, দুপুরের খাবার নষ্ট করেছেন বিচারাধীন বন্দিরা। সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের উপরে হামলার অভিযোগও উঠেছে। তাণ্ডবের জেরে জেলের ভিতরে বহু এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে রয়েছে। ছোট ছোট জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। জেল জুড়ে চূড়ান্ত অব্যবস্থা রয়েছে। রাত পর্যন্ত পূর্ত দফতর ভাঙা গেট সারায়নি। শনিবার বন্দিদের কয়েক জন সুড়ঙ্গ খুঁড়েছিলেন। সেটি বন্ধ করা হয়েছে।

শনিবার দুপুর থেকে বন্দিদের হামলায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় পুলিশ ও কারাকর্মীদের সঙ্গে। গেট ভাঙার পাশাপাশি আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় জেল সুপারের অফিস-সহ প্রশাসনিক দফতরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে গুলি ছুড়তে দেখা গিয়েছে। তবে গুলি চালানোর কথা পুলিশ স্বীকার করেনি।

বন্দিদের হাতে কী ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র পৌঁছল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারা সূত্রের দাবি, ওই আগ্নেয়াস্ত্র কারারক্ষীদের কাছ থেকে ছিনতাই করা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শনিবারের ঘটনায় বন্দিদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্টের মামলা রুজু হতে পারে বলেও খবর। এ দিন কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’ কারা সূত্রের খবর, দমদম জেলের জন্য আরও পুলিশ মোতায়েন করার চেষ্টা চলছে। স্বরাষ্ট্র দফতরে কাছে সেই আর্জি জানানো হয়েছে। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। সরব হয়েছে এসইউসি-ও।

করোনা পরিস্থিতিতে জেলবন্দিদের সুরক্ষা নিয়ে সরকার কী ভাবছে এবং কী পদক্ষেপ করছে তা ১৬ মার্চ সব রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ২০ মার্চের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়। আজ, সোমবার সে ব্যাপারে শুনানি রয়েছে। সেখানে দমদম জেলের প্রশ্ন উঠতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন