প্রতীকী ছবি।
ভোটে নির্বাচিত ছাত্র সংসদের পরিবর্তে অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল গঠনের সরকারি ঘোষণা নিয়ে সরব হয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের একটি অংশ। বিরোধী দলগুলিও সরকারের সমালোচনায় মুখর। এর মধ্যেই গ্রন্থাগারমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিধানসভায় জানিয়ে দিলেন, সরকার পোষিত পাঠাগার পরিচালন সমিতি গঠনে নির্বাচন ব্যবস্থা তুলে দেওয়া যাচ্ছে। এ বার থেকে মনোনীত সদস্যদের নিয়ে পরিচালন সমিতি গঠন করা হবে।
গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর এই ঘোষণার পরেই বিরোধী দলের বিধায়কেরা অভিযোগ তোলেন, এটা সরকারের ‘অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ’। কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘‘হিটলার তন্ত্র চলছে।’’ অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার না-করে সিদ্দিকুল্লা বলেছেন, ‘‘হতে পারে অগণতান্ত্রিক। তবে গ্রন্থাগারের হাল ফেরাতে এর দরকার ছিল।’’
এ দিন অধিবেশনের শুরুতেই অসিতবাবুর প্রশ্ন ছিল, রাজ্য সরকার পোষিত পাঠাগার পরিচালনার জন্য কি নতুন নির্বাচিত কমিটি গড়া হবে না? জবাবে সিদ্দিকুল্লা নির্বাচন ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার কথা জানান। কী পদ্ধতিতে নতুন কমিটি গড়া হবে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রী জানান, প্রতিটি জেলার জন্য লোকাল লাইব্রেরি অথরিটি (এলএলএ) মনোনীত করা হবে। সেখানে মাথায় থাকবেন জেলাশাসক। মোট ন’জন সদস্যের ওই কমিটিতে স্থানীয় দুই বিধায়ক, পুরসভা বা পঞ্চায়েতের দু’জন সদস্য, রাজ্য সরকারি কর্মী এবং গ্রন্থাগারে আগ্রহী স্থানীয় চার জনকে মনোনীত করা হবে। লোকাল অথরিটি আবার জেলা, টাউন এবং গ্রামীণ লাইব্রেরির কমিটি মনোনয়ন করবে। জেলার ক্ষেত্রে ছ’জন, টাউনে চার এবং গ্রামীণ ক্ষেত্রে তিন জন সদস্য থাকবেন।
নির্বাচিত কমিটি বন্ধ হচ্ছে কেন?
সিদ্দিকুল্লা জানান, বহু লাইব্রেরির পরিকাঠামো ঠিক নেই। শৌচাগারও নেই। যেমন, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানে ৬৫টি এবং উত্তরবঙ্গে ৯০টি পাঠাগারে শৌচাগার নেই। অথচ পরিচালন সমিতি গঠনের ভোট নিয়ে ঝামেলা লেগেই রয়েছে। মারপিটও হচ্ছে। ‘‘গ্রন্থাগার উন্নয়নে নজর নেই। ক্ষমতা দখলের লড়াই চলছে। সে-সব ভেবেই ভোট তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,’’ বলেন মন্ত্রী।
এই সিদ্ধান্তের মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে গ্রন্থাগারকর্মী ইউনিয়নগুলির মধ্যে। পশ্চিমবঙ্গ গ্রন্থাগারকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিবপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সরকারের সিদ্ধান্ত মানতেই হবে। কিন্তু জেলা ও শহরের গ্রন্থাগার আধিকারিকদের সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের গ্রন্থাগার আধিকারিকদের যে-বৈষম্য তৈরি হল, সেটা সমর্থনযোগ্য নয়।’’ অন্য দিকে, হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট
পাবলিক লাইব্রেরি উন্নয়ন মঞ্চের সম্পাদক নিশীথ সরকার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘‘নির্বাচনকে ঘিরে কিছু জায়গায় যে-বিশৃঙ্খলা হতো, তার থেকে মুক্তি পাওয়া গেল।’’