চার কেন্দ্রে পিছিয়ে, জেতাল বাকি তিন

নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের সংখ্যালঘু অধ্যষিত মুরারই, হাঁসন আর নলহাটি—এই তিন বিধানসভা আসন থেকে প্রাপ্ত ভোটই জয়ের হ্যাটট্রিক করিয়েছে তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়কে।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৯ ০১:২০
Share:

জয়ের পরে। নিজস্ব চিত্র

চার বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে তারা। ভোটও পেয়েছে ২০১৪-র নির্বাচনের তুলনায় তিন লক্ষাধিক। তার পরেও বীরভূম আসনে কাঙ্ক্ষিত জয় আসেনি বিজেপি-র বাকি তিন বিধানসভা কেন্দ্রের সৌজন্যে।

Advertisement

নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের সংখ্যালঘু অধ্যষিত মুরারই, হাঁসন আর নলহাটি—এই তিন বিধানসভা আসন থেকে প্রাপ্ত ভোটই জয়ের হ্যাটট্রিক করিয়েছে তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়কে। শুধু তাই নয়, দেশ জুড়ে মোদি ঝড়েও প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা গতবারের থেকে ২ লক্ষ বাড়িয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। পাঁচ বছর আগের নির্বাচনের চেয়ে বাড়িয়ে নিয়েছেন

নিজের জয়ের ব্যবধানও। জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দাবি করেছিলেন বীরভূম কেন্দ্র থেকে তাঁর ১২ লক্ষ ভোট চাই। সেটা হয়নি ঠিকই। কিন্তু, দুবরাজপুর, সিউড়ি, রামপুরহাট ও সাঁইথিয়া বিধানসভা আসনে বিজেপি-র চেয়ে পিছিয়ে থেকেও শতাব্দীর পরপর তিন বার জয়ের নেপথ্যে ওই তিন কেন্দ্রের ফলই রয়েছে বলে জানিয়ে দিচ্ছেন

Advertisement

তৃণমূল নেতৃত্ব।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মুরারই বিধানসভা কেন্দ্রে আড়াই হাজারের বেশি ভোটে বামফ্রন্ট প্রার্থী কামরে ইলাহির কাছে পিছিয়ে ছিলেন শতাব্দী। আর এ বার সেখানেই প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছেন তিনি! পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, শতাব্দী পেয়েছেন ১ লক্ষ ১৮ হাজার ২১০টি ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি-র দুধকুমার মণ্ডলের ঝুলিতে গিয়েছে ৪৮ হাজার ৮০৭টি ভোট। অথচ ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ওই কেন্দ্রে জয়ী তৃণমূল বিধায়ক আবদুর রহমানের জয়ের ব্যবধান ছিল মাত্র ২৮০। সেখানে তিন বছরের ব্যবধানে এতটা ব্যবধান বাড়িয়েছে তৃণমূল। মুরারই থেকে পাওয়া এই বিপুল ‘লিড’-ই শতাব্দীকে ২০১৪-র তুলনায় আরও বেশি ভোটে জয়ী করেছে বলে আলোচনায় জানাচ্ছেন জেলা তৃণমূলের নেতারা।

একই ভাবে নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বামেদের কাছে পিছিয়ে থাকলেও এ বার উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যবধান বাড়িয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, এ বার সেই কেন্দ্র থেকে তিন ‘লিড’ পেয়েছেন ২৭ হাজার ৩৮১টি

ভোটের। হাঁসন কেন্দ্রে অন্তর্গত নলহাটি-২ ব্লকে ২০১৪ সালের নির্বাচনে পিছিয়ে ছিলেন শতাব্দী। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী অসিত মাল (যিনি এ বার বোলপুর লোকসভা থেকে জয়ী হয়েছেন) জোট প্রার্থী কংগ্রেসের মিলটন রশিদের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। সেই নলহাটি-২ ব্লক থেকেই এ বার ১৫ হাজারেরও বেশি ভোটের ‘লিড’ পেয়েছে তৃণমূল। আবার রামপুরহাট-২ ব্লকেও শতাব্দী রায় লিড বাড়িয়েছেন। হাঁসন কেন্দ্রে থেকে এ বার শতাব্দীর জয়ের ব্যবধান প্রায় ৩০ হাজার ভোটের।

মুরারই, হাঁসন এবং নলহাটি—তিন বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটের ফলের নিরিখে দেখা গিয়েছে, কংগ্রেস এবং সিপিএমের ভোট ব্যাঙ্কে সিংহভাগ থাবা বসিয়েছে তৃণমূল। কিছুটা পেয়েছে বিজেপি-ও। তাতেই তারা দু’নম্বরে উঠে এসেছে। বীরভূম কেন্দ্রে শতাব্দীর জয়ের ব্যবধান বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু বিজেপি-র এগিয়ে আসা তাতে থামেনি। চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে থেকেও মুরারই, নলহাটি ও হাঁসনে হারের কারণ কী? বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডলের দাবি, ‘‘মুরারইয়ে ব্যাপক

সন্ত্রাস, ছাপ্পাভোট করেছে তৃণমূল। তবে এটাও ঠিক, মুরারই, হাঁসন ও নলহাটি এই তিন কেন্দ্রেই বিজেপি কর্মীদের আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল।’’

তিন আসের ‘লিড’ দলের প্রার্থীকে জেতালেও চার বিধানসভা আসনের হার বেশি ভাবাচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। কারণ ওই চার আসনের মধ্যেই রয়েছে চার-চারটি পুরসভা। অর্থাৎ, শহরাঞ্চলের বড় অংশের মানুষ তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। জেলা তৃণমূলের এক নেতা তো বলেই দিলেন, ‘‘ওই তিন আসন থেকে এ রকম লিড না পেলে তো কেষ্টার গড়ও অক্ষত থাকত না! শহরে আমাদের কেন এমন ফল হল, তা পর্যালোচনা করা হবে দলের অন্দরে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন