জঙ্গলমহলে এখন হাসছে বিজেপি

কুনারের জয়ের পরেই তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগে সরব হন দলীয় কর্মীরা। গত বছর ঝাড়গ্রাম জেলার কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছিল বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০৩:৫৮
Share:

৯,৬৬৬ ভোটে ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হলেন বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রম।। —নিজস্ব চিত্র

পঞ্চায়েত ভোটের ফল ইঙ্গিত দিয়েছিল হাসি ফিকে হচ্ছে জঙ্গলমহলের। ঝাড়গ্রামের হাসি ফেরানোর ভার দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ পর্যন্ত বছরভর চেষ্টা করেও জঙ্গলমহলের ক্ষোভ প্রশমন করা গেল না। ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী বিরবাহা সরেনকে ৯,৬৬৬ ভোটে ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হলেন বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রম। পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ায় জিতলেন বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় মাহাতো এবং সুভাষ সরকার।

Advertisement

কুনার জিতলেন বটে। তবে বৃহস্পতিবার ম্যাচের প্রায় শেষ লগ্নে যেন চলল সাপ-লুডোর খেলা। বিরবাহার সঙ্গে ব্যবধান কমতে কমতে এক সময় প্রায় ৬ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছিল। যদিও মাঝে এক সময় ব্যবধান বাডিয়ে চলেছিলেন কুনার। শেষ মুহূর্তের এই ওঠাপড়া কেন? তৃণমূল সূত্রের খবর, সে সময় শালবনি ও বিনপুর বিধানসভা কেন্দ্রের গণনা চলছিল। ওই দু’টি ছাড়া বাকি পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রেই ‘লিড’ পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী।

কুনারের জয়ের পরেই তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগে দলের অন্দরে সরব হয়েছেন দলীয় কর্মীরা। গত বছর ঝাড়গ্রাম জেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছিল বিজেপি। তার পরেও গত পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রাম লোকসভা এলাকায় তৃণমূল পেয়েছিল ৪৭% ভোট। আর বিজেপি ভোট পেয়েছিল ৩৯.০৪%। তৃণমূলের ভোট করানো অভিজ্ঞ কর্মীরা বলছেন, পঞ্চায়েতে সিপিএমের বেশ কিছু ভোট বিজেপি-র ঘরে গিয়েছিল। তাতেও পঞ্চায়েতে সার্বিক ভাবে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। এ বার সিপিএমের দেবলীনা হেমব্রম প্রার্থী হলেও লোকসভায় সুবিধা করতে পারল না বামেরা। আদতে যা শাসক দলের বিপক্ষে গিয়েছে।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের মহিলা শাখার গণনা কেন্দ্রে এক তৃণমূল কর্মী বলছিলেন, ‘‘যাঁদের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপোষণ আর স্বেচ্ছাচারের অভিযোগ, তাঁরাই হলেন প্রচারের মুখ। অথচ দীর্ঘদিন যাঁরা দলের পতাকা নিয়ে কাজ করলেন, তাঁরা ব্রাত্য থেকে গেলেন। ওই বৈষম্যের ফলেই তো বিজেপি-র পরিযায়ী নেতা এসে ঘর ভাঙতে পারলেন।’’

আপাতত তৃণমূলের অন্দরের বিশ্লেষণ, পারাগানা মহলের নেতা রবিন টুডুর স্ত্রীকে তৃণমূলের প্রার্থী করা নিয়ে ক্ষোভ ছিলই। তার উপরে দলীয় নেতাদের অন্তর্ঘাত যুক্ত হওয়ায় আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক বিভাজনের সুবিধা নেওয়া যায়নি। জেলা তৃণমূল কোর কমিটির চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদা বলছেন, ‘‘ফলের সামগ্রিক বিশ্লেষণ করা হবে।’’ আর বিজেপির জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেছেন, ‘‘দিলীপ ঘোষের জোশ, মুকুল রায়ের ফোঁস, তৃণমূলের দোষ! তাই আমরা জিতলাম।’’

পুরুলিয়ায় লড়াই যে হাড্ডাহাড্ডি হবে, সেটা তৃণমূল আগে থেকেই আঁচ করেছিল। দলের নেতাদের নজর ছিল মানবাজার আর কাশীপুরের দিকে। কিন্তু গোড়া থেকেই কাশীপুরে এগিয়ে যায় বিজেপি। জেলার জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকাতেও একই ছবি। শুধু মানবাজার বিধানসভা এলাকায় ‘লিড’ পেয়েছে তৃণমূল। দলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর বক্তব্য, বাম এবং কংগ্রেসের ভোট বিজেপির ঝুলিতে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, পঞ্চায়েতে যাঁরা পুরুলিয়ায় ভোট দিতে পারেননি, এ বারে তাঁরাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন।

বর্ষীয়ান মন্ত্রী তৃণমূলের সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র ও বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষবাবুর মতো নেতাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাঁকুড়াও আলাদা ভাবে নজর কেড়েছিল। কিন্তু জঙ্গলমহলের রানিবাঁধ, রাইপুর, সারেঙ্গা বিধানসভা তো বটেই, বাকি চারটি বিধানসভা কেন্দ্রেও বিজেপি এগিয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন