চোখের বদলায় চোখ নয়, বার্তা নিহত নেতার মেয়ের

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস কমিউনিকেশনে স্নাতকোত্তর পৃথা এই মুহূর্তে গবেষণার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। তিনি যে শান্তির পক্ষে সওয়াল করছেন, প্রদীপবাবুর পরিবার থেকে তা এক রকম হারিয়ে গিয়েছে ২০১২-র ২২ ফেব্রুয়ারি।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ০২:৪১
Share:

পৃথার পোস্ট। ছবি: ফেসবুক সৌজন্যে

রাজনৈতিক হিংসায় খুন হন ‘বাবা’। খুনে অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে শুক্রবার হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। আর সে রাতেই হিংসার বিরুদ্ধে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় রুখে দাঁড়ালেন বর্ধমান উত্তরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক প্রদীপ তা’র মেয়ে পৃথা তা। ‘ফেসবুক’-এ তিনি লেখেন, ‘কেউ খুনির বাপ, খুনির মা, খুনির সন্তান নয়। আলাদা মানুষ। মানুষের মতো বাঁচুক। একটা চোখের বদলে আর একটা চোখ নিতে থাকলে গোটা দুনিয়া অন্ধ হয়ে যাবে। আমি বলছি’। হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি।

Advertisement

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস কমিউনিকেশনে স্নাতকোত্তর পৃথা এই মুহূর্তে গবেষণার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। তিনি যে শান্তির পক্ষে সওয়াল করছেন, প্রদীপবাবুর পরিবার থেকে তা এক রকম হারিয়ে গিয়েছে ২০১২-র ২২ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন বর্ধমান সদরের দেওয়ানদিঘিতে সিপিএমের জোনাল পার্টি অফিসের সামনে খুন হন প্রদীপবাবু ও সিপিএম নেতা কমল গায়েন। ঘটনায় দুই তৃণমূল নেতা দেওয়ানদিঘির মির্জাপুরের বাসিন্দা পতিতপাবন তা এবং গৌতম হাজরা, পতিতপাবনের ছেলে সুরজিৎ-সহ মোট ২২ জনের নামে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। এখনও ঘটনার তদন্ত করছে সিআইডি। অভিযুক্তেরা জামিনে মুক্ত।

তৃণমূলের অভিযোগ, ভোটের ফল ঘোষণার পরে, শুক্রবার সকালে পতিতপাবন, গৌতম-সহ তিন জনের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় বিজেপির লোকজন। রাতে ‘ফেসবুক পোস্ট’ করেন পৃথা। শনিবার তিনি অবশ্য দাবি করেন, কোনও নির্দিষ্ট ঘটনার প্রেক্ষিতে তাঁর এই ‘পোস্ট’ নয়। বলেন: ‘‘অনেক সময় বিচারের নাম করে পাল্টা হামলা চালালেই ভাল হবে বলে মনে করা হয়। আমি এমন অসভ্যতার বিরুদ্ধে। কেউ দোষ করে থাকলে, আইনের বিচারে তিনি নিশ্চিত ভাবে দোষী সাব্যস্ত হবেন। কিন্তু সে জন্য তাঁর বাড়ির লোকেরা শান্তিতে থাকতে পারবেন না কেন?”

Advertisement

‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় পৃথার ‘পোস্ট’-এর বিষয়টি চাউর হতে সময় লাগেনি। পতিতপাবনবাবু বলেন, ‘‘এমন একটা সময়ে সাহস করে অশান্তির বিরুদ্ধে সরব হওয়ার জন্য প্রদীপ দা-র মেয়েকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’’ গৌতমবাবুও বলেন, ‘‘এই সময়ে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পৃথার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’’ তবে দু’জনেই দাবি করেছেন, রাজনৈতিক কারণে তাঁদের প্রদীপ তা খুনের মামলায় ‘ফাঁসানো’ হয়েছে। পৃথার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদারও।

দেওয়ানদিঘিতে ওই অশান্তির পরেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এলাকায় টহল দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। এ দিন জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়-সহ অন্য পুলিশকর্তারাও দেওয়ানদিঘিতে যান। আর যাঁদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ, সেই বিজেপির জেলা সাংগঠনিক সভাপতি সন্দীপ নন্দী বলেন, “দলের কেউ ওই হামলা করেনি। তবে কেউ যদি ভাবেন আমাদের ভোট দিয়ে নেতা হয়ে গিয়েছেন, তা হলে ভুল করছেন। তেমন কিছু হলে সংশ্লিষ্ট লোকজনকে খুঁজে বার করে পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন