কম্পিউটারের মনিটরে খোলা বুথফেরত সমীক্ষার একগাদা কোলাজ-তথ্য। মনিটরে চোখ রেখে খুচরো প্রিন্ট-আউটের ফাঁকা অংশে পেনসিল দিয়ে সব তথ্যের গড় হিসেব লিখতে লিখতে প্রশাসনের পদস্থ এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘সময়টা যেন আর কাটছেই না। অথচ এ দু’টি মাস তো ঝড়ের বেগে কেটে গেল!’’
আজ, বৃহস্পতিবার ভোটের ফল প্রকাশ। তার আগের দিন, বুধবার মোটামুটি এমনই ‘উৎকণ্ঠা’র ছবি দেখা গেল প্রশাসনের অন্দরে।
কিসের উৎকণ্ঠা?
এক কথায় এর উত্তর ভোটের ফলাফলকে কেন্দ্র করেই। তবে বৃহত্তর অর্থে তা ভিন্ন। আধিকারিকদের উৎকণ্ঠা আসন্ন ভবিষ্যৎ নিয়ে। কে জিতবে, কে হারবে, তার পরে কর্মক্ষেত্রে সমীকরণ কী হবে এবং পরিস্থিতি কোন খাতে প্রবাহিত হবে, তা নিয়েই সংশ্লিষ্ট মহলের মাথাব্যথা। তবে সাধারণ সরকারি কর্মচারীদের লক্ষ্য ভিন্ন। ভোটের ফল তাঁদের বকেয়া পাওয়া না-পাওয়াকে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সেটাই সংশ্লিষ্ট মহলের জল্পনার অন্যতম বিষয়।
বুধবার নবান্ন, নব মহাকরণের মতো প্রশাসনিক ভবনের চিত্র অন্যান্য দিনের থেকে কিছুটা আলাদা ছিল। অন্য সময়ের মতো কাজকর্মের চাপ ততটা না-থাকায় সম্ভাব্য জল্পনাকল্পনা চলে নাগাড়ে। এবং সেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) আর সম্ভাব্য বেতন কমিশনের সুপারিশ। টিফিনের সময় ক্যান্টিন বা অবসর সময় চায়ের দোকান— সর্বত্র কার্যত একই আলোচনা। সহকর্মীর উদ্দেশে কারও প্রশ্ন, রাজ্যে শাসক দলের ফল ভাল হলে কি ডিএ বা বেতন কমিশন দ্রুত বাস্তবায়িত হবে? কারও আবার কৌতূহল, তেমন পরিস্থিতিতে বেতন কমিশনের বাস্তবায়ন আদৌ কতটা সম্ভব?
এ-সবের উত্তর ঘুরেছে ভিন্ন ভিন্ন খাতে। কেউ বলেছেন, ফল ভাল হলে খুশি হয়ে সব দিয়ে দেবেন ‘দিদি’। কারও কারও দাবি ঠিক এর উল্টো। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, কোনও কারণে সরকার ক্ষুব্ধ হলে হয়তো প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্যই থেকে যাবে। এক কর্মীর কথায়, ‘‘সরকারি কর্মীরা কি ভোটের ফলাফলে খুব প্রাসঙ্গিক? তা যদি হত, তা হলে কি আমাদের প্রাপ্য এত দিন ধরে বকেয়া থাকত? ভোটের ফল যা-ই হোক, আমাদের অবস্থার বদল শুধু রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতির উপরেই নির্ভরশীল।’’
প্রায় গোটা দেশে সতীর্থ (প্রশাসনিক ভাষায় ‘ব্যাচমেট’) ছড়িয়ে থাকে প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদের। তাঁদের অনেকেই এ দিন কোনও না কোনও সময়ে শেষ মুহূর্তের
সম্ভাবনা দূরভাষে ঝালিয়ে নিয়েছেন পরস্পরের থেকে। কেউ কেউ আবার নিজের অফিসের কর্মীদের মনোভাব বুঝতে চেয়েছেন। তবে অনেকের আগ্রহ শুধু ফিতে বাঁধা সরকারি ফাইলের দিকে। এমনই এক জনের কথায়, ‘‘ফলাফল যা-ই হোক না কেন, চাপ বাড়ে আধিকারিক মহলের উপরেই। ফলে আগে থেকে এত ভাবনাচিন্তায় আগ্রহ নেই। তবে এটা ঠিক, এই নির্বাচন অনেক কিছু শেখাবে। প্রত্যেকের কাছেই তা শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে।’’