ঘুসুড়ির ঘুষ মামলায় প্রাক্তন পুর-প্রধানের নামে চার্জশিট

অভিযোগের আঙুল উঠেছিল তাঁর দিকে উঠছিল ঘুসুড়ির ঘুষ মামলার প্রথম দিন থেকেই। যাঁর বাড়ি থেকে ২১ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল, পুরসভার সেই সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রণব অধিকারীও জেরায় বারবার তাঁর নাম জানিয়েছিলেন তদন্তকারীদের।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার ও শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৯
Share:

অভিযোগের আঙুল উঠেছিল তাঁর দিকে উঠছিল ঘুসুড়ির ঘুষ মামলার প্রথম দিন থেকেই। যাঁর বাড়ি থেকে ২১ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল, পুরসভার সেই সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রণব অধিকারীও জেরায় বারবার তাঁর নাম জানিয়েছিলেন তদন্তকারীদের। অবশেষে বালির সেই সিপিএম নেতা তথা বালি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অরুণাভ লাহিড়ীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দিল রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখা। তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত প্রণবকে মদত দেওয়া এবং পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

Advertisement

এক সপ্তাহ আগে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে ওই সাপ্লিমেন্টারি বা পরিপূরক চার্জশিট পেশ করেছেন তদন্তকারীরা। তবে শুধু অরুণাভবাবু নন, বালি পুরসভার অফিস সুপারিনটেন্ডেন্ট মহম্মদ আমানুল্লা মোল্লার বিরুদ্ধেও চার্জশিট জমা দিয়েছে রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখা। কয়েক মাস আগেই মূল অভিযুক্ত প্রণব-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে মূল চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

এক তদন্তকারী অফিসার এ দিন বলেন, ‘‘প্রণব অধিকারী যে ঘুষ নিয়ে বালি পুর এলাকায় একের পর এক বেআইনি বহুতল তৈরির অনুমতি দিয়ে চলেছেন, বালি পুরসভার প্রাক্তন ওই চেয়ারম্যান তা জানতেন। কিন্তু তিনি তাতে বাধা দেননি। এমনকী পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন বালির ওই প্রাক্তন চেয়ারম্যান।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘বেআইনি এই সমস্ত কাজ সম্পর্কে অফিস সুপারও সব জানতেন।’’

Advertisement

কী বলছেন অরুণাভবাবু?

অরুণাভবাবু বলেন, ‘‘চার্জশিট দিয়েছে বলে জানি না। এখনও কোনও কাগজপত্র হাতে পাইনি। তদন্তে তো আমি সব রকম সহযোগিতা করেছি।’’ আর মহম্মদ আমানুল্লা মোল্লা বলেন, ‘‘ঘুষ কাণ্ডের সঙ্গে আমি কোনও ভাবেই জড়িত নই। তা সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধে কেন চার্জশিট দেওয়া হল, জানি না।’’

রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখা সূত্রের খবর, আদালতে জমা দেওয়া প্রায় ৫০ পাতার চার্জশিটে সিপিএম
নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে অভিযোগ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আছে ঘুষের ঘটনা জানা সত্ত্বেও তা ধামাচাপা দেওয়া এবং তাতে
মদত দেওয়ার অভিযোগ। প্রণবের সঙ্গে যড়যন্ত্রে তাঁর যুক্ত থাকার
কথাও বলা হয়েছে চার্জশিটে। গত ১৪ অগস্ট বালি পুরসভার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রণব অধিকারীর বাড়িতে হানা দিয়ে প্রায় ২১ কোটি টাকা উদ্ধার করে রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখা। গ্রেফতার করা
হয় প্রণব এবং তাঁর ছেলেকে। প্রণববাবুকে জেরা করার পরে উঠে আসে পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অরুণাভবাবুর নাম। প্রণবের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করা নথিপত্রে বেশ কিছু ঠিকাদার ও প্রোমোটারের নাম ছিল। তাঁদের জেরা করেও পুরো চক্রান্তে প্রাক্তন পুর চেয়ারম্যানের যুক্ত থাকার নানান তথ্যপ্রমাণ পান তদন্তকারীরা।

তদন্তে রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার অফিসারেরা আরও জেনেছিলেন, ১৯৯৫-’৯৬ নাগাদ বালি পুরসভায় কাজে যোগ দেন প্রণব। আর ২০০০ সালে প্রথম ভোটে জিতে বালি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান হন অরুণাভবাবু। তার পরে, ২০০৫ সালেও তিনি ওই পদে ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি চেয়ারম্যান হন। তখনকার বালি পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী ভাইস চেয়ারম্যানই বাড়ির নকশা অনুমোদন করতেন। অর্থাৎ টানা ১০ বছর ধরে প্রণবের বেআইনি কাজ সম্পর্কে সব জেনেও অরুণাভবাবু নীরব ছিলেন। কেন এই নীরবতা, সেই প্রশ্ন তোলেন তদন্তকারীরা। চেয়ারম্যান হওয়ার পরে অরুণাভবাবুর কাছে প্রণব সম্পর্কে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এসেছিল। কিন্তু তিনি কেন কোনও ব্যবস্থা নেননি, তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দেয় তদন্তকারীদের মধ্যে।

এই সমস্ত বিষয় ঘিরে তৈরি হওয়া ধোঁয়াশা কাটাতে গত ২২ অগস্ট অরুণাভবাবুকে দফতরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। সে-দিনই তাঁকে জানানো হয়েছিল, ২৫ অগস্টের মধ্যে সম্পত্তি এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত নথি জমা দিতে হবে রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখায়। সেই অনুযায়ী তিনি ২৫ অগস্ট রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার অফিসে নথিপত্র জমা দেন। ওই দিন তিনি দুর্নীতি দমন শাখার দফতরে থাকাকালীন তদন্তকারীরা হানা দেন অরুণাভবাবুর বালির বাদামতলার একটি ফ্ল্যাটে। তল্লাশি চলে তাঁর শ্বশুরবাড়িতেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন