তরুণীকে ফেরত পাঠাল কোর্ট

শাহরুখের প্রেমে সুরাত থেকে বেলদা

প্রেমের টানে রুপোলি পর্দার রাজ বিলেত থেকে ছুটে এসেছিলেন এ দেশে, সিমরনের কাছে। আর বাস্তবে বাড়ি থেকে পালিয়ে শাহরুখের কাছে এলেন তাঁর প্রেমিকা। অন্য দেশে অবশ্য নয়, ভিন্‌ রাজ্যে।

Advertisement

বরুণ দে ও দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ০৮:১৬
Share:

প্রেমের টানে রুপোলি পর্দার রাজ বিলেত থেকে ছুটে এসেছিলেন এ দেশে, সিমরনের কাছে। আর বাস্তবে বাড়ি থেকে পালিয়ে শাহরুখের কাছে এলেন তাঁর প্রেমিকা। অন্য দেশে অবশ্য নয়, ভিন্‌ রাজ্যে।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার এই শেখ শাহরুখের প্রেম কাহিনির সঙ্গে শাহরুখ-কাজলের ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’র গল্পের তেমন মিল নেই। তবে এই কাহিনিও সিনেমার মতোই।

বেলদা থানার সাবড়ায় বাড়ি একুশ বছরের শেখ শাহরুখের। পেশায় তিনি গ্যাসের পাইপ লাইনের মিস্ত্রি। সেই কাজের সূত্রেই ২০১১ সালে গুজরাতের সুরাতে গিয়েছিলেন শাহরুখ। সেখানে যাঁদের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, তাঁদের পরিবারের স্কুল পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁর। প্রথম ক’দিন গোপনেই চলছিল মন দেওয়া-নেওয়া। তবে মেয়েটির পরিবারের সে সব বুঝতে বিশেষ দেরি হয়নি। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই সম্পর্ক মানবেন না, মেয়েকে বকাঝকাও করেন। আর শাহরুখকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেন।

Advertisement

কিন্তু দু’জনে যে তখন ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছেন! তাই শাহরুখ ও তাঁর প্রেমিকা পালানোর পরিকল্পনা করেন। সিনেমার মতোই। সেটা ২০১৪। ট্রেনে চেপে বেলদা চলে আসবেন বলে দু’জনে সুরাত স্টেশনেও চলে এসেছিলেন। কিন্তু ট্রেনে ওঠার আগে মেয়েটির পরিচিত কয়েক জন দেখে ফেলায় পালানো আর হয়নি। অগত্যা একাই বেলদা ফিরে আসেন শাহরুখ।

মাঝের দু’টো বছর বিরহের। এই সময়টা দু’জনের কোনও যোগাযোগ ছিল না বলেই জানিয়েছেন শাহরুখ। তাঁর কথায়, ‘‘হঠাৎ সুরাত ছাড়তে হয়েছিল। তাই পরস্পর ফোন নম্বরটুকু দেওয়া-নেওয়া করতে পারিনি।’’

মাস ছয়েক আগে আচমকাই গল্পে নতুন মোড়। শাহরুখ দেখলেন, ফেসবুকে যোগাযোগ করেছে সুরাতের সেই মেয়েটি। আর সেই সূত্রে নতুন প্রাণ পায় তাঁদের সম্পর্ক। শুরু হয় মোবাইলে কথা। মেয়েটিকে শাহরুখকে সুরাত আসতে বলে। কিন্তু শাহরুখ জানান তাঁর আশঙ্কার কথা, ‘‘যদি আবার ধরা পড়ে যাই।’’ তখন মেয়েটি বলে, তেমন হলে সে-ই বেলদায় চলে আসবে। কী ভাবে বেলদা যেতে হয় ফোনে তাও জেনে নেয় শাহরুখের কাছে।

সেই কথা সত্যি করে গত ২৯ মে বেলদায় পৌঁছেও যায় সুরাতের ওই মেয়েটি। সে জানিয়েছিল, ২৯ তারিখ তার বয়স ১৭ বছর ১১ মাস ১৮ দিন। মেয়ে নাবালক। তাই শাহরুখের পরিজনেরা আলোচনা করে ঠিক করেন, মেয়েটিকে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। তারপর ১৮ বছর হয়ে গেলে পুলিশের থেকে তাকে ফিরিয়ে এনে বিয়ের ব্যবস্থা করবেন। সেই মতো দিব্যাকে বেলদা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

ইতিমধ্যে সুরাতের লিম্বায়েট থানায় মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করেন ওই কিশোরীর বাবা। গুজরাত পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে মেয়েচি বেলদায় রয়েছে। সেই মতো বেলদায় আসে গুজরাত পুলিশের একটি দল। গত ৬ জুন মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে ট্রানজিট রিমান্ডের আবেদন করা হয়। কিন্তু গুজরাত পুলিশের দলে মহিলা পুলিশ ছিল না। তাই মেদিনীপুর আদালত ট্রানজিট রিমান্ডের আবেদন খারিজ করে মেয়েটিকে হোমে পাঠায়।

সোমবার ফের আদালতে গুজরাত পুলিশের তরফে চার দিন ট্রানজিট রিমান্ডের আবেদন করা হয়। এ বার দলে মহিলা পুলিশ ছিল। ফলে, মেদিনীপুরের সিজেএম আবেদন মঞ্জুর করেন। সরকারি আইনজীবী সৈয়দ নাজিম হাবিব অবশ্য শুনানির সময় সওয়াল করতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, এ ক্ষেত্রে মেয়েটির সুরক্ষার দিকটি দেখা উচিত। কারণ, সে মনে করছে সুরাতে ফেরত গেলে তার জীবন বিপন্ন হতে পারে। তার উপর অত্যাচার শুরু হতে পারে। সে বেলদাতেই থাকতে চায়। তাছাড়া, এখন মেয়েটির বয়স ১৮ বছর ৩ দিন বলেও দাবি করেন সরকারি আইনজীবী। বয়সের প্রমাণপত্র হিসেবে স্কুলের শংসাপত্রও আদালতে জমা দেওয়া হয়।

তবে সব কিছু শুনে আদালত মেয়েটিকে গুজরাত পুলিশের হাতেই তুলে দেয়। সোমবার তাকে নিয়ে সুরাত রওনা দেয় সেখানকার পুলিশের দল।

ওই তরুণী সদ্য আঠারো পেরনো সত্ত্বেও কেন তার কথা আদালত গুরুত্ব দিল না, সেই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। অল ইন্ডিয়া ল’ইয়ার্স ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক রঘুনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তদন্তের স্বার্থে ভিন্‌ রাজ্যের পুলিশ কাউকে হেফাজতে চাইতেই পারে। কিন্তু মেয়েটি যেহেতু প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গিয়েছে, তাই আদালতের উচিত ছিল তার আবেদন গুরুত্ব দিয়ে দেখা।’’

শাহরুখ অবশ্য তাঁর প্রেম ফেরত পেতে মরিয়া। বেলদার এই যুবক বলছেন, “ওকেই বিয়ে করব। ওকে পাওয়ার জন্য যেখানে যেতে হয় যাবো।” আপাতত প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখার কথাও ভাবছেন শাহরুখের পরিবার। শাহরুখের দাদা শেখ আনোয়ার বলেন, “ওদের ভালবাসাটা সত্যি। সেই জন্যই তো মেয়েটা গুজরাত থেকে ছুটে এসেছিল। এই ভালবাসা নষ্ট হতে দিতে পারব না। প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেব। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতিকেও সব জানাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন