আধাঁরে আলো/১

‘গ্রামের পুরুষরা সব মারামারিতে ব্যস্ত, পেটের বাচ্চাটা তো আগে বাঁচুক’

পাড়ে উঠে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলেন রমা। তাঁকে ধরাধরি করে তোলেন আশপাশের লোকজন। রমাকে নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ জায়গায়।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৭ ০৪:১৩
Share:

পাশে-আছি: বর্মা কলোনিতে খিচুড়ি রান্নার তোড়জোড় চলছে। ফাইল চিত্র।

আর মাত্র তিন দিন বাকি প্রসবের।

Advertisement

শ্যাওলা, পাঁক, পানায় ভরা জলাজমিতে হাঁটতে হাঁটতে সে কথাটাই বারবার মাথায় আসছিল রমা মণ্ডলের। ভাবছিলেন, কী ভাবে বাঁচাবেন অনাগত প্রথম সন্তানকে।

পাড়ে উঠে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলেন রমা। তাঁকে ধরাধরি করে তোলেন আশপাশের লোকজন। রমাকে নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ জায়গায়। রমার চোখে তখন জল। পরে বললেন, ‘‘এমন আতিথেয়তা পাব ভাবিনি। মনে হল, নিজের লোকজনের মাঝেই আছি।’’

Advertisement

রমার এই হঠাৎ পাওয়া ‘নিজের লোকজন’ মানে বসিরহাট গোয়ালপোতার বর্মা কলোনির বাসিন্দারা। বেশির ভাগই ‘দিন আনি দিন খাই’ পরিবার। রামের পুজো করেন কেউ, কেউ রহিমের ভক্ত। স্বপন চৌধুরী, মৃদুল দাস, মহম্মদ রফিক সর্দার, কওসর আলি মণ্ডলদের বক্তব্য, ‘‘সামান্য একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে যা সব হচ্ছে, মেনে নিতে পারছি না। রমার দেখভাল এখন আমাদেরই দায়িত্ব।’’

শুধু রমা নন। মঙ্গলবার রাত থেকে প্রায় ২৫০ জন আশ্রয় নিয়েছেন বর্মা কলোনিতে। তার উল্টো দিকে পশ্চিম দণ্ডিরহাট। সেখানেই মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হয়েছে বোমা-গুলির তড়পানি। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বহু বাড়িতে। দিশেহারা হতদরিদ্র পরিবারগুলো কোথায় যাবে, কী করবে ঠাহর করতে না পেরে জলা পেরিয়ে চলে এসেছে বর্মা কলোনিতে।

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল যুদ্ধং দেহি

সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা মমতা বৈদ্যও মঙ্গলবার রাতে এসেছেন বর্মা কলোনিতে। বললেন, ‘‘গ্রামের পুরুষ মানুষরা সব মারামারি করতে ব্যস্ত। ছেলেকে কাঁধে বসিয়ে এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি। আগে পেটের বাচ্চার প্রাণটা তো বাঁচুক।’’

বর্মা কলোনির সূর্য সেন স্মৃতি সঙ্ঘে এঁদের অনেকের ঠাঁই মিলেছে। কাছেই গোয়ালপোতা প্রাথমিক স্কুলে রাখা হয়েছে আরও অনেককে। চাঁদা তুলে বাচ্চাদের দুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চা-বিস্কুট দেওয়া হয়েছে বড়দের। জলখাবারে চিঁড়ে-মুড়ি। দুপুরে খিচুড়ি।

বর্মা কলোনির কওসর আলি, অসীম চৌধুরীরা বললেন, ‘‘ট্রেনে হকারি করি। কোনও মতে সংসার চলে। কিন্তু গ্রামে অশান্তি তো কখনও ছিল না। এই মানুষগুলো কোথাও ঠাঁই না পেয়ে আমাদের এখানে এসেছেন। ওঁদের দেখভাল করাই এখন আমাদের দায়িত্ব। যত দিন চান, ওঁরা থাকবেন আমাদের কাছে।’’

কথা বলতে বলতে শীর্ণকায় ঘামে-ভেজা চেহারাটা এগিয়ে যায় রসুইয়ের দেখভালে। কওসর চেঁচিয়ে বলেন, ‘‘অসীম, খিচুড়ির ডালটা ভাল করে ধোয়া হয়েছে তো?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন