নবান্ন অডিটে যেতেই জিটিএ-র দফতরে আগুন

প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘সব মিলিয়ে ছ’শোর বেশি ফাইল উদ্ধার হয়েছে। তাতে বড়সড় গোলমাল তেমন কিছু নেই। যে ক্ষেত্রে সন্দেহ রয়েছে‌ তা সরেজমিন দেখা প্রয়োজন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সেটা সম্ভব নয়। ফলে বিশেষ অডিট করিয়েও লাভ হচ্ছে না।’’

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৫২
Share:

তাণ্ডব: দার্জিলিঙের পূর্ত দফতরের অফিসে। —ফাইল চিত্র।

পাহাড়ে লাগাতার বন্‌ধ চলছে ১২ জুন থেকে। তারও দিন কয়েক আগে জিটিএ-র বিভিন্ন দফতরে বিশেষ অডিটের দল পাঠিয়েছিল নবান্ন। গরমিল ধরা দূরের কথা, আড়াই মাসে সেই অডিট অফিসারেরা গুরুত্বপূর্ণ কোনও ফাইলের হদিসটুকুও করতে পারেনি। কারণ জিটিএ-র যাবতীয় কাজকর্মের দলিল-দস্তাবেজ যে যে জায়গায় রাখা ছিল, অডিটের দল খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছনোর ঠিক আগে আগে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়‌েছে। এমনকী জিটিএ-র ক্যাশবুকও উদ্ধার করা যায়নি। ফলে তাদের বিভিন্ন তহবিলে কত টাকা আছে তার হিসেবও মেলেনি।

Advertisement

প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘সব মিলিয়ে ছ’শোর বেশি ফাইল উদ্ধার হয়েছে। তাতে বড়সড় গোলমাল তেমন কিছু নেই। যে ক্ষেত্রে সন্দেহ রয়েছে‌ তা সরেজমিন দেখা প্রয়োজন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সেটা সম্ভব নয়। ফলে বিশেষ অডিট করিয়েও লাভ হচ্ছে না।’’

গত ৮ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে গোলমাল শুরুর পরই জিটিএ-র সচিবকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ১৯ জুন নতুন সচিব হিসাবে সি মুরুগন কাজে যোগ দেন। সূত্রের খবর, নতুন সচিব ভানু ভবনে গিয়ে দেখেন সমস্ত কিছু লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। ফাইলপত্র দূরের কথা, একটি কম্পিউটারও নেই। নেই ক্যাশবুক। ভল্টের টাকাও উধাও। পুরো অফিস তন্নতন্ন করে খুঁজে অডিট অফিসাররা ৫৫-৬০টি ফাইল পেয়েছিলেন। কিন্তু তা থেকে ‘অমূল্য রতন’ কিছুই মেলেনি।

Advertisement

আরও পড়ুন: পাঁচতারা হোটেল, অবৈধ সুযোগ-সুবিধা কেন? মন্ত্রীদের ধমক মোদীর

খবর মেলে শৈলাবাসে দার্জিলিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের যে দফতর আছে, সেখানেই যাবতীয় ফাইলপত্র রাখা আছে। সেই অফিসে অডিট দল পৌঁছনোর কথা কেয়ারটেকারকে আগের দিন সন্ধ্যায় জানানো হয়। কিন্তু রাতেই ওই অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর পর অডিট কর্তারা দার্জিলিং স্পেশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরে আচমকা হানা দিয়ে প্রায় ৪০০ ফাইল নিয়ে আসেন। খতিয়ে দেখে সেখান থেকেও বিশেষ কিছু মেলেনি। এর পরে জানা যায়, মিরিকের ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরে কিছু ফাইল সরিয়ে রাখা আছে। সেখানেও পরিদর্শনের ঠিক আগের দিন আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কার্শিয়াংয়ের একটি পর্যটন অফিসে থাকা ফাইল এবং নথিও।

এক কর্তার কথায়, ‘‘উন্নয়ন খাতে গত পাঁচ বছরে জিটিএ-তে অন্তত ১৫০০ কোটি টাকা এসেছিল। কিন্তু সেই টাকা খরচের কোনও হিসেব মিলছে না। চেষ্টা যে হয়নি তা নয়। কিন্তু হিসেব কষে সমস্ত নথিই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।’’

অডিট অফিসাররা তবে কী করছেন? জানা গিয়েছে, জিটিএ-র সব অফিস বন্ধ। ফলে ১৮ হাজার কর্মী দু’মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। সুতরাং পাহাড়ে থেকেও অডিট দলের কাজ করার উপায় নেই। নবান্নের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘খালি হাতে ফেরা ছাড়া অফিসারদের কী-ই বা করার আছে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন