অষ্টমীর সকালে বন্ধ গোন্দলপাড়া চটকল

পুজোর মুখে চটকল বন্ধ হওয়া নতুন নয় এ রাজ্যে। কিন্তু, পুজোর চার দিনের মধ্যে? এ বার অষ্টমীর সকালেই সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস পড়ে গেল হুগলির গোন্দলপাড়া চটকলের গেটে। এক ধাক্কায় কাজ হারালেন হাজার চারেক শ্রমিক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চন্দননগর শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৬ ০২:১০
Share:

বন্ধ জুটমিল। ছবি: তাপস ঘোষ

পুজোর মুখে চটকল বন্ধ হওয়া নতুন নয় এ রাজ্যে। কিন্তু, পুজোর চার দিনের মধ্যে? এ বার অষ্টমীর সকালেই সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস পড়ে গেল হুগলির গোন্দলপাড়া চটকলের গেটে। এক ধাক্কায় কাজ হারালেন হাজার চারেক শ্রমিক। এই ঘটনার পিছনে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের বিবাদই দায়ী বলে সূত্রের খবর।

Advertisement

শ্রমিকদের উপরে বাড়তি কাজের চাপ দেওয়ার অভিযোগকে ঘিরে সম্প্রতি দু’তরফে মনোমালিন্য চলছিল। শ্রমিকদের অভিযোগ, আগে দু’টি মেশিন দেখভালের দায়িত্ব থাকত এক জন শ্রমিকের উপরে। সম্প্রতি মিল কর্তৃপক্ষ তা বাড়িয়ে তিনটি মেশিন করেন। এই চাপ নেওয়া কোনও এক শ্রমিকের পক্ষে অসম্ভব। এতে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এই নিয়ে মিলে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। শনিবার মিল ম্যানেজার তন্ময় বেরার কাছে শ্রমিকেরা এই বাড়তি কাজের বোঝা কমানের আর্জি জানাতে গেলে তিনি রাজি না হওয়ায় উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ, কিছু শ্রমিকের তাড়ায় পড়ে জখম হন মিল ম্যানেজার। পুলিশ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে। শ্রমিকেরাও কাজে যোগ দেন।

কিন্তু, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মিল কর্তৃপক্ষ সাত শ্রমিকের বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ দায়ের করেন থানায়। শ্রমিক অসন্তোষের জেরে মিলের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণ দেখিয়ে রবিবার সকালে সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে। এ দিন সকালে বেশ কিছু শ্রমিক হাতে লোহার রড নিয়ে মিলের গেটে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা মিলের দরজা ভাঙার চেষ্টা চালান বলেও অভিযোগ। কিন্তু বিশাল পুলিশ বাহিনী থাকায় পরিস্থিতি হাতের বাইরে যায়নি।

Advertisement

শ্রমিকদের অভিযোগ, একে তাঁদের উপরে বাড়তি কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তার উপরে কাজ চলাকালীন জল খেতে বা শৌচাগারে পর্যন্ত যেতে দেওয়া হচ্ছে না। মিল কর্তৃপক্ষ এই নানা অজুহাত দেখিয়ে মিল বন্ধের পরিকল্পনা চালিয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষের পাল্টা দাবি, শ্রমিকেরা জল খাওয়ার নাম করে বেরিয়ে কাজে ফাঁকি দেন। তার ফলে মিলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মিলের পক্ষে সঞ্জয় কাজোরিয়া বলেন, ‘‘কিছু বহিরাগত ব্যক্তির ইন্ধনে শ্রমিকদের একাংশ ক্রমশই উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ছেন। কাজ বন্ধ করে তাঁরা অসামাজিক কাজ করছেন। ফলে উৎপাদন মার খাচ্ছে। বাধ্য হয়েই মিল বন্ধ করা হয়েছে।’’

চটকলে শ্রমিক অসন্তোষ বারবারই হয়। তারই জেরে ২০১৪ সালের ১৫ই জুন ভদ্রেশ্বরের নর্থব্রুক জুটমিলের সিইও-কে খুন হতে হয়েছিল। গোন্দলপাড়া চটকলেও শ্রমিক অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। ২০১২ সালে এখানে বন্ধের নোটিস পড়েছিল। শ্রমিকদের আন্দোলনের পরে মিল চালু হয়। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ২০১৩-র ২৮শে সেপ্টেম্বর ফের মিল বন্ধ হয়। ফের খুললেও দু’বছর পরে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আবারও মিল বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি মিল চালু হয়।

দশ মাসও কাটল না। শারদীয়ার মধ্যেই ঝাঁপ পড়ল মিলের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন