ছাত্র-বিক্ষোভের সামাল দিতে পুলিশ ডাকা নিয়ে প্রবল বিতর্কের পরেও তারা যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর পাশেই থাকছে, সেটা বৃহস্পতিবারেই পরিষ্কার করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। শুধু তা-ই নয়, আচার্য-রাজ্যপাল কোনও বিরূপ মত না-দিলে উপাচার্যের পদে অভিজিৎবাবুকে আরও ছ’মাসের জন্য রাখা হতে পারে বলেও শুক্রবার সরকারি সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।
যাঁকে ঘিরে এত বিতর্ক, তাঁকেই ফের বহাল রাখার উদ্যোগ কেন?
প্রশাসনের একাংশ মনে করছে, অভিজিৎবাবুকেই উপাচার্য-পদে বহাল রাখলে আন্দোলনকারীদের ‘অন্যায় দাবিদাওয়া’র বিরুদ্ধে সরকারের কড়া অবস্থানের বার্তা দেওয়া যাবে।
যাদবপুর কাণ্ডের পরে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন অব্যাহত। ছাত্রছাত্রীরা তো পথে নেমেছেনই। উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছেও দরবার করেছেন বিরোধীরা। এই চাপের মুখেও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার পর্যন্ত উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে আপত্তির কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। ছাত্র, শিক্ষকদের বড় অংশ এবং শিক্ষাকর্মী সংশ্লিষ্ট সব মহলের আস্থা হারিয়ে উপাচার্য কী ভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, সেই ব্যাপারেও এখনই চিন্তিত নন শিক্ষামন্ত্রী।
ছাত্র পরিষদের হয়ে আশুতোষ কলেজে প্রচারপত্র বিলি করতে গিয়ে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের (অর্থাৎ কংগ্রেসের জমানা) পুলিশের হাতে পার্থবাবুকেও গ্রেফতার হতে হয়েছিল। এই উদাহরণ দিয়েই পার্থবাবু বোঝাতে চেয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশি হস্তক্ষেপ আগেও হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রকৃত ছাত্রদের মতো আচরণ হলে পুলিশ যাওয়ারই প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যেখানে উপাচার্য এবং শিক্ষকদের অনেকের প্রাণসংশয় হচ্ছে বলে তাঁরা মনে করেন, সেখানে কী করা যাবে?” শিক্ষাকর্মীদের কাছ থেকে তিনি ইতিমধ্যেই রিপোর্ট নিয়েছেন বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। ঘেরাও আন্দোলনে না-গিয়ে যাদবপুরে অচলাবস্থা কাটানোর জন্য তিনি এ দিন বারেবারেই সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
কিন্তু অচলাবস্থার অন্যতম মুখ্য কারণ তো উপাচার্য নিজেই? সরকার এ ব্যাপারে কী ভাবছে?
শিক্ষামন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “উপাচার্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা আলোচনায় আসেননি।” শিক্ষা দফতর সূত্রের আরও বক্তব্য, এখন চাপের মুখে উপাচার্যকে সরিয়ে নিলে বিক্ষোভকারীদের কাছে নতিস্বীকার করে নেওয়া হবে। সেই পথে না-গিয়ে শিক্ষা দফতর তাই নজর রাখছে আচার্য-রাজ্যপালের পদক্ষেপের উপরে। শিক্ষা দফতরের এক শীর্ষ সূত্রে জানানো হয়, যাদবপুরের স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি এই উপাচার্যের নাম এক নম্বরে দিয়ে তালিকা পাঠিয়েছে। এখানে শিক্ষা দফতরের কিছু করার নেই। আচার্য যদি কোনও ভিন্ন মত জানিয়ে নোট দেন, তা হলে আলাদা ব্যাপার। নইলে অক্টোবরের শেষে অস্থায়ী উপাচার্যের মেয়াদ ফুরোলে আরও ছ’মাসের জন্য তাঁকেই বহাল রাখা যেতে পারে।
বিরোধীরা অবশ্য যাদবপুরের উপাচার্যকে নিয়ে সরকার তথা শিক্ষামন্ত্রীকেই নিশানা করছেন। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্যা বৃন্দা কারাট। আবার শহিদ মিনার ময়দানে কংগ্রেসের সমাবেশে দলের সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় যেমন এ দিন বলেন, “আমি যাদবপুরের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে বলছি, রাতের অন্ধকারে পুলিশ শান্তিপূর্ণ অবস্থানকারীদের উপরে হামলা করেছে। আসলে এটা একটা অদ্ভুত সমাপতন! যিনি এখন রাজ্যের শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী, তিনি শিল্প দফতরে থাকাকালীন ২০১২ সালের নভেম্বরে বোলপুরের লোবায় গুলি চলেছিল। এই লোকটি যেখানে যান, সেখানেই উৎপাত হয়!”
বিরোধী সাংসদের কটাক্ষের জবাবে কী বলছেন শিক্ষামন্ত্রী?
“বালখিল্যের মতো মন্তব্যের কী জবাব দেব,” বলছেন পার্থবাবু।