কলেজের পরিচালন সমিতির মাথায় বসে কেন আরাবুল ইসলামের মতো নেতারা ছড়ি ঘোরাবেন, তৃণমূল জমানার প্রথম ইনিংসে তা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। সৌগত রায়ের মতো শাসক দলের নেতারাও এই রেওয়াজের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। অবশেষে এই প্রবণতায় রাশ টানতে উদ্যোগী হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিচালন বিধি ঢেলে সাজতে বিধানসভায় যে বিল আসছে, সেখানে বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাবিদদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
বিধানসভায় আজ, শুক্রবার দু’ঘণ্টা আলোচনা হওয়ার কথা ‘দ্য ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনিভার্সিটিস অ্যান্ড কলেজেস (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড রেগুলেশন) বিল, ২০১৬’ নিয়ে। হাজিরার উপরে নজরদারি চালিয়ে এবং নানা বিধি বসিয়ে শিক্ষকদের পায়ে আসলে রাজ্য সরকার বেড়ি পরাতে চাইছে, এই প্রশ্ন ঘিরেই বিতর্ক বেধেছে। কিন্তু সেই বিলেই বলা হয়েছে, পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে এখন থেকে নামী শিক্ষাবিদকেই গুরুত্ব দেওয়া
হবে। পরিচালন সমিতির মধ্যে যদি তেমন কেউ না থাকেন, তা হলে বাইরে থেকে কাউকে নিয়ে আসতে পারবে রাজ্য সরকার। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, শিক্ষাকে রাজনীতির নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার লক্ষ্য থেকেই সরকারের এই পদক্ষেপ। রাজনীতির লোকজনকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাথায় বসানো নিয়ে বিতর্কের পুনরাবৃত্তি তাঁরা চান না।
বিরোধীরা অবশ্য প্রশ্ন তুলছে, পেশাগত ভাবে শিক্ষাবিদকে পরিচালন সমিতির দায়িত্ব দিলেই রাজনীতির যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ খসে পড়বে, সেটাই বা ধরে নেওয়া যাবে কী করে? শাসক দলের অনুগত হয়ে বিদ্বজ্জন বা শিক্ষাবিদদের একাংশ গত কয়েক বছরে এমন কাণ্ড করেছেন, যা মোটেও উৎসাহজনক নয় বলে তাদের অভিযোগ। তা ছাড়া, জনপ্রতিনিধি হিসাবে সাংসদ বা বিধায়কেরা পরিচালন সমিতিতে থাকতে পারবেন না, এমন কোনও নিশ্চয়তাও বিলে নেই।
সরকার পক্ষের পাল্টা যুক্তি, সুগত বসুর মতো শিক্ষাবিদকে শুধু জনপ্রতিনিধি বলেই বাইরে রাখতে হবে, এটা কোনও কথা হতে পারে না! আর অনুগত শিক্ষাবিদ বসিয়ে নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবুর মন্তব্য, ‘‘তা হলে তো পুরনো ব্যবস্থাই রেখে দিতে হয়! আরাবুলরাই তা হলে ভাল?’’এই বিলের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থার উপরে সরকারি নিয়ন্ত্রণ জারির চেষ্টা হচ্ছে, এই অভিযোগে আজ বিধানসভায় সরব হতে চায় বিরোধীরা। তাদের দাবি, বিশদে মতামত নেওয়ার জন্য বিলটিকে স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হোক বা সিলেক্ট কমিটি গড়া হোক। সরকার পক্ষ অবশ্য পিছু হঠতে নারাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা-ও আজ ক্যাম্পাসের ভিতরে বিলের প্রতিলিপি পোড়াবে। সংগঠনের সহ-সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘সেভ অটোনমি, সেভ এডুকেশন স্লোগান তুলে ওই কালো বিল প্রত্যাহারের দাবি জানানো হবে।