মমতার মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে লাগাতার তোপ, নিজেই ‘লক্ষ্মণরেখা-বিতর্ক’ উস্কে দিলেন রাজ্যপাল

রাজ্যপালের এ বারের মন্তব্য, তাঁকে নিয়ে রাজ্যের একের পর এক মন্ত্রীর বক্তব্যে তিনি ‘ব্যথিত’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৪৬
Share:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য জগদীপ ধনখড়কে অভ্যর্থনা উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের। শুক্রবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

তাঁর প্রিয় শব্দ ‘লক্ষ্মণরেখা’। যে কোনও সুযোগে তিনি স্মরণ করিয়ে দিতে ভোলেন না, সকলেরই ‘লক্ষ্মণরেখা’ মেনে কাজ করা উচিত এবং তিনি সেটাই করছেন। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট-বৈঠকে আচার্য হিসেবে যোগ দিতে গিয়ে আচমকাই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার তোপ দেগে ‘লক্ষ্মণরেখা-বিতর্ক’ নিজেই উস্কে দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।

Advertisement

রাজ্যপালের এ বারের মন্তব্য, তাঁকে নিয়ে রাজ্যের একের পর এক মন্ত্রীর বক্তব্যে তিনি ‘ব্যথিত’। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে কী ভাবে মন্ত্রীরা ‘পর্যটক’ বলছেন, কী ভাবে তাঁর পদক্ষেপকে ‘গিমিক’ বলা হচ্ছে, তা নিয়ে শুক্রবার প্রকাশ্যেই উষ্মা ব্যক্ত করে রাজ্যপাল বললেন, ‘‘মন্ত্রীরা এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কথা বলছেন। মুখ্যমন্ত্রীকেই তাঁর মন্ত্রীদের বক্তব্য খতিয়ে দেখতে হবে। মন্ত্রীদের উনি কী ভাবে সামলাবেন, তা ওঁকেই ঠিক করতে হবে।’’

প্রথম দিকে সংঘাতে জড়ালেও শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য আপাতত রাজ্যপালের পাল্টা মুখ না খোলার কৌশল নিয়েছেন। তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন যেমন ধনখড়ের কথার প্রতিক্রিয়া দেননি। আর এক মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় নির্দিষ্ট প্রশ্নে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন। রাজ্যপালের ভূমিকা দেখে বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেসও তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। বিজেপি অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই রাজভবনের পক্ষে মত দিয়েছে।

Advertisement

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র বিক্ষোভে ঘেরাও হয়ে থাকা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ‘উদ্ধার’ করতে ক্যাম্পাসে গিয়ে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছিলেন রাজ্যপাল। পরে ব্যক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করলেও কখনও শিলিগুড়ি সফর, কখনও রেড রোডের কার্নিভাল নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বারংবার মুখ খুলেছেন রাজ্যপাল। সর্বশেষ বিতর্ক রাজ্যপালের জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা ঘিরে। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রতবাবু বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ‘‘বাংলায় কি পুলিশের অভাব যে, রাজ্যপালকে দিল্লির কাছে নিরাপত্তা চাইতে হল?’’ এতেই ফের উষ্মার বাঁধ ভেঙেছে ধনখড়ের।

যাদবপুরে কোর্ট-বৈঠকের পরে মন্ত্রী সুব্রতবাবুর নাম করেই রাজ্যপাল অভিযোগ করেন, ‘‘সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল। তা ওঁর জানা উচিত। উনি যে মন্তব্য করেছেন, তা ভুল। আমি আশা করব, উনি ওঁর বক্তব্য পুনর্বিবেচনা করবেন।’’

সুব্রতবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কিছু তো ভুল বলিনি! এটা তো ওঁরই সরকার। উনি এই সরকারের সাংবিধানিক অভিভাবক। নিরাপত্তা সংক্রান্ত যা দরকার, তা নিজের সরকারের থেকেই চাইতে পারতেন। আবার এই কথাই বলছি ও বলব!’’ কলকাতায় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও বলেছেন, ‘‘রাজ্যপালের নিরাপত্তা বা অন্য প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসতে পারে রাজ্যের সম্মতিসাপেক্ষে। রাজ্য যদি সম্মতি না দিয়ে থাকে, তা হলে কেন্দ্রের তরফে সেটা রাজ্যের এক্তিয়ারে ঢুকে পড়া হয়।’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল শুরুতেই বিতর্কে ইতি টানলে মন্ত্রীরা আর সাহস পেতেন না তাঁকে নিয়ে এত কিছু বলতে। এ সব সংবিধানসম্মত নয়।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘নীতিগত কোনও বিরোধ আছে কি? ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাজ্যপাল এবং মন্ত্রীরা যা করছেন, তাতে কার কী লাভ হচ্ছে?’’ আর রাজ্যপালের বক্তব্যে সায় দিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘মন্ত্রীদের কাজ কি শুধু রাজ্যপালের সমালোচনা? এটা সরকার না সার্কাস!’’

রাজ্যপাল এ দিন অবশ্য ফের ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘আমার সাংবিধানিক এক্তিয়ারের মধ্যেই কাজ করছি। রাজ্যপাল হিসেবে আমি কোনও কথা বলতে পারব না, তা তো নয়! আমি মানুষের সঙ্গে দেখা করতে পারি, যে কোনও বিষয়ে বলতে পারি, সরকারকে প্রয়োজনে পরামর্শও দিতে পারি।’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘আমার শিলিগুড়ি সফরকে এক মন্ত্রী গিমিক বলেছেন। কোনও মন্ত্রী আমাকে পর্যটক বলছেন! এটা কি তামাশা হচ্ছে? মন্ত্রীরা কী করে এ সব কথা বলতে পারেন!’’

কার্নিভ্যাল-প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যপালের আরও মন্তব্য, ‘‘সংবাদমাধ্যমকে বলা হয়েছিল সাড়ে ৪ ঘণ্টা আমাকে অন্ধকারে রাখার জন্য। প্রচার পাওয়াটা আমার কাজ নয়। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকা উচিত। সে দিন উৎসবের কালো দিকটাও বেরিয়ে পড়েছিল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন