স্বাধিকার মানা উচিত, বলছেন সেই রাজ্যপালই

কিছু দিন আগে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য আচরণবিধি তৈরির পরামর্শ দিয়েছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তাঁর ওই পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপের পথ প্রশস্ত করেছিল, এই মর্মে বিতর্ক বেধেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৯
Share:

প্রেস ক্লাবে কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

কিছু দিন আগে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য আচরণবিধি তৈরির পরামর্শ দিয়েছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তাঁর ওই পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপের পথ প্রশস্ত করেছিল, এই মর্মে বিতর্ক বেধেছিল। সেই রাজ্যপালই আবার রবিবার সওয়াল করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে! শিশির মঞ্চে একটি অনুষ্ঠানের শেষে রাজ্যপাল নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘এখানে স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত আইন আছে। সেটাতে সকলের শ্রদ্ধা রাখা উচিত।’’

Advertisement

রাজ্যপালের এ দিনের মন্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে স্বাধিকার-প্রশ্নে তিনি ফের অবস্থান বদল করলেন? ঘটনাপ্রবাহে বিস্মিত রাজ্য সরকারও! শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যেমন প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘‘রাজ্যপাল নিজেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আচরণবিধি চেয়েছিলেন। সেটা লিখিত ভাবে আমাদের জানিয়েছিলেন। এখন আবার স্বাধিকার বলতে তিনি কী বোঝাচ্ছেন, জানি না!’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘আমরাও স্বাধিকার বিরোধী নই। তবে আমরা সব সময়েই বলে এসেছি, এক জন আর এক জনের অধিকার খর্ব করে কোনও স্বাধিকার হয় না!’’ কয়েক দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন অ্যাবুটার অনুষ্ঠানেও পার্থবাবু বলেছিলেন, ‘‘স্বাধিকারের নামে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হচ্ছে।’’ বরাবরই তিনি বলে এসেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং পঠনপাঠনের দিকটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখবেন। কিন্তু সরকার যে হেতু টাকা দেয়, আর্থিক ও প্রশাসনিক দিকে তাদের বক্তব্য থাকবেই। বস্তুত, বর্তমান জমানায় বারেবারেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। এমনকী, বিধানসভায় বিলও এসেছে সেই মর্মে। রাজ্যপালের এ দিনের মন্তব্যের জেরে গোটা বিষয়টি অবশ্য ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।

সম্প্রতি রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে তিনটি পুরসভার ভোটে আধা-সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। তা নিয়ে রাজ্য সরকার এবং রাজ্যপালের সম্পর্কে একটা অস্বস্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। প্রশাসনের একটি সূত্রের বক্তব্য, সেই তালিকায় এ দিন যুক্ত হল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার প্রসঙ্গ। তবে এ দিন এ রাজ্যের ভোটে আধা সেনার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজ্যপাল সতর্ক জবাব, ‘‘এটি নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের বিষয়। ওঁরাই বুঝবেন।’’

Advertisement

বিরোধী দলগুলি অবশ্য দু’টি পূর্ণ এবং একটি অর্ধেক পুর-নিগমের ভোটের মুখে স্বাধিকার-প্রশ্নে রাজ্যপালের অবস্থান বদল নিয়ে কটাক্ষ করে বিতর্ক বাড়াতে চায়নি। তারা শুধু জানিয়েছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারের পক্ষে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘শিক্ষা মানুষকে মুক্তমনা করে। বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত মনের কেন্দ্র। সেখানে স্বাধিকার রক্ষা না করা হলে সমাজজীবনকে ভুগতে হবে অনেক। রাজ্যপাল কেন, যে কোনও গণতান্ত্রিক, শিক্ষানুরাগী মানুষই এটা চাইবেন। চাইবে না একমাত্র আমাদের রাজ্য সরকার!’’ কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘দেশের সর্বত্রই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার রক্ষিত হয়। ব্যতিক্রম এখনকার পশ্চিবঙ্গ! এখানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তিনি মাইনে দেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করতেই পারেন! কিন্তু তিনি তো তাঁর আয় থেকে ওই মাইনে দেন না। জনগণের করের টাকা থেকেই তাঁরও মাইনে হয়। তার ফলে কি জনগণ ওঁর কান ধরে টানতে চায়?’’ রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার রক্ষায় সক্রিয় হলে তাঁরা খুশি হবেন বলে জানিয়েছেন মান্নান। বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, ‘‘বিধানসভায় সংখ্যাধিক্যের জোরে সরকার শিক্ষায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে নিশ্চিত করে ফেলেছে। এই সরকার সমালোচনা, স্বাধিকার এবং বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাস করে না। কিন্তু শিক্ষার সুস্থ পরিবেশের জন্য ওই তিনটিই দরকার।’’

রাজ্যপাল এ দিন কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টস’-এর অনুষ্ঠানের শেষে বেআইনি অস্ত্র নিষিদ্ধ করার পক্ষেও সওয়াল করেন। এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এই সব অস্ত্র নিষিদ্ধ করা উচিত। গ্রেফতার করতে হবে দোষীদের।’’ রাজ্যে দুষ্কৃতীদের সশস্ত্র তাণ্ডবের ঘটনার প্রেক্ষিতে বিরোধী দলগুলি শাসক দলের দিকে আঙুল তুলছে। সেই অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অবশ্য রাজ্যপাল বলেন, ‘‘এ সব বিতর্কিত প্রশ্নের জবাব দেব না।’’ তৃণমূলের মহাসচিব এবং মন্ত্রী পার্থবাবুর অবশ্য কৌশলী মম্তব্য, ‘‘বীরভূমে দুধকুমার মণ্ডলদের নেতৃত্বে বেআইনি অস্ত্র নিয়ে বিজেপি অনেক গোলমাল করেছে। তখন অনেকে আশা করেছিল, রাজ্যপাল হয়তো বিবৃতি দেবেন! আমাদের সরকার বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করতে পেরেছে বলেই রাজ্যে শান্তি ফিরেছে। তার পরেও রাজ্যপাল কী বলেছেন, সে বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলব। তার আগে মন্তব্য করতে চাই না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন