নাতির দেহ আগলে অপেক্ষায় বাংলাদেশি দিদা

তেরাত্তির পার হয়ে গিয়েছে। এখনও তেইশ বছরের নাতির দেহ আগলে বসে আছেন দিদা। পরনে হলদে বেগুনি ছাপা শাড়ি, কপালে হিজাবের ঢঙে ঘোমটা টানা।

Advertisement

বিল্টু সূত্রধর

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০৪
Share:

জলপাইগুড়ি হাসপাতালে শাহাদতের দিদা। নিজস্ব চিত্র

তেরাত্তির পার হয়ে গিয়েছে। এখনও তেইশ বছরের নাতির দেহ আগলে বসে আছেন দিদা। পরনে হলদে বেগুনি ছাপা শাড়ি, কপালে হিজাবের ঢঙে ঘোমটা টানা। হিম ঠান্ডা রাতে গায়ে জড়িয়ে থাকার মতো একটা চাদরও নেই। শেষে হাসপাতালেরই অন্য রোগীর আত্মীয়রা তাঁকে একটা চাদর জোগাড় করে দিয়েছেন। এ সব কষ্টই এখন সয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার গোয়ালগছ গ্রামের বাসিন্দা সাকিনা খাতুনের। তিনি বসে আছেন একটা সরকারি কাগজের জন্য। সেটা হাতে এলে দেশে নিয়ে যেতে পারবেন নাতি শাহাদত হুসেনের দেহ।

Advertisement

গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ফুলবাড়ি সীমান্তের কাছ থেকে শাহাদতকে গ্রেফতার করে বিএসএফ। পরে তাঁকে রাজগঞ্জ থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর পর থেকে দীর্ঘদিন সংশোধনাগারে ছিলেন শাহাদত। মাঝেমধ্যে পরিবারের লোকেরা দেখাও করে যেতেন। পুলিশ সূত্রে খবর, গত মঙ্গলবার জেলে অসুস্থ হয়ে পড়েন শাহাদত। দ্রুত তাঁকে জেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরদিন পাঠানো হয় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। সেখানেই শাহাদত বৃহস্পতিবার ভোর রাতে মারা যান।

খবর পেয়ে দ্রুত এ দেশে আসেন দিদা সাকিনা। ময়না-তদন্তের পরে দেহ নিয়ে ফুলবাড়ি সীমান্তে পৌঁছেও যান তিনি। কিন্তু বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাগজ এসে না পৌঁছনোয় দেহ নিয়ে সীমান্ত পার হওয়া যায়নি। নাতির দেহ নিয়ে জলপাইগুড়ি হাসপাতালেই সেই থেকে অপেক্ষা করছেন তিনি। সাকিনার কথায়, ‘‘তিন দিন হয়ে গেল, এখনও নাতির দেহ নিয়ে বাংলাদেশ যেতে পারলাম না। ওর স্ত্রী, সন্তানরা অপেক্ষায়। জানি না কবে দেশে ফিরতে পারব।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘নিজেকে আবিষ্কার করতেই ঘর ছেড়েছিলাম’, বলল প্রীতম

পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের তরফে করণীয় সব কাজই হয়ে গিয়েছে। এখন বাংলাদেশ হাইকমিশনের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা। অন্য দিকে, কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, তাঁরা শাহাদতের মৃত্যুর কথা জানেন। ঢাকাকেও সবটা জানানো আছে। এর পরে ওই যুবকের পরিবারের তরফে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তবেই চূড়ান্ত ছাড়পত্র হাতে পাবেন তাঁরা।

গ্রাম্য দিদা সে কথা জানেন না। তিনি আজও অপেক্ষায়, কবে আসবে সেই কাগজ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন