বিজ্ঞান পড়ার হিড়িকের যুগে উচ্চ মাধ্যমিকে কলায় ষোলো কলা পূর্ণ

সিবিএসই দ্বাদশের পরে উচ্চ মাধ্যমিক। একই বছরে সিবিএসই-র মেঘনা শ্রীবাস্তবের পরে কলা বিভাগের পতাকা শীর্ষে তুলে ধরলেন উচ্চ মাধ্যমিকের গ্রন্থন সেনগুপ্ত। মোট ৫০০ নম্বরের মধ্যে মেঘনা পেয়েছিলেন ৪৯৯। গ্রন্থন ৪৯৬।

Advertisement

মধুমিতা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০৪:২৭
Share:

প্রথম: গ্রন্থনকে কাঁধে নিয়ে উচ্ছ্বাস সহপাঠীদের। ছবি: সন্দীপ পাল

সিবিএসই দ্বাদশের পরে উচ্চ মাধ্যমিক। একই বছরে সিবিএসই-র মেঘনা শ্রীবাস্তবের পরে কলা বিভাগের পতাকা শীর্ষে তুলে ধরলেন উচ্চ মাধ্যমিকের গ্রন্থন সেনগুপ্ত। মোট ৫০০ নম্বরের মধ্যে মেঘনা পেয়েছিলেন ৪৯৯। গ্রন্থন ৪৯৬।

Advertisement

বিজ্ঞান পড়ার হিড়িকের যুগে কলা বিভাগকে স্বমহিমায় ফিরিয়ে এনেছেন দুই বোর্ডের দুই পড়ুয়া। মেঘনার কৃতিত্বের খবর শুনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আফসোস করছিলেন, এ রাজ্যে মূল্যায়নে কৃপণতা আছে। এ দিন গ্রন্থনের সাফল্যের সংবাদে মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া: ‘‘কলা বিভাগে পড়েও এত নম্বর নিয়ে প্রথম হয়ে গ্রন্থন ইতিহাস গড়েছে।’’ সত্যিই ইতিহাস। পশ্চিমবঙ্গে ১০+২ পদ্ধতি চালু হওয়ার পরে উচ্চ মাধ্যমিকে এই প্রথম কেউ কলা বিভাগ থেকে প্রথম হলেন এবং এত নম্বর পেলেন।

জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের গ্রন্থন পেয়েছেন ৯৯.২% নম্বর। বাংলায় ৯৯। ইংরেজিতে ৯০। ভূগোলে ১০০। ইতিহাসে ৯৮। দর্শনে ১০০। ঐচ্ছিক বিষয় কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে ৯৯। সব থেকে বেশি পাওয়া পাঁচ বিষয়ের নম্বর ধরে তাঁর প্রাপ্তি ৪৯৬। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নম্বর বেশি ওঠা ভাল ব্যাপার। সিবিএসই, আইএসসি-তে বেশি নম্বর ওঠে। এখানেও বেশি নম্বর ওঠায় পড়ুয়ারা প্রতিযোগিতায় থাকতে পারবে।’’

Advertisement

১৯৬৮ সালে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ তখনকার উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞানে ৮২.৭% পেয়ে প্রথম হয়েছিলেন। তিনি জানান, তাঁরই সঙ্গে প্রথম হন কলা বিভাগের মালবিকা চক্রবর্তী। ১৯৭৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে প্রথম এবং সব মিলিয়ে দ্বিতীয় হন লেখিকা অনিতা অগ্নিহোত্রী। বিষয় ছিল বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, সংস্কৃত, গণিত এবং ঐচ্ছিক লজিক। বাংলায় পান ৭২.৫%। ইংরেজিতে ৬৫.০৫%। সর্বাধিক প্রাপ্তি গণিতে— ৮৮.০৫%। এ দিন অনিতাদেবী বলেন, ‘‘এমন নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় আর কলা বিভাগে প্রথম হয়েছিলাম শুনলে এখন সকলে হাসবে।’’ তাঁর মতে, মূল্যায়নে উদার হলে পড়ুয়ারা উৎসাহ পায়।

এ বার দ্বিতীয় হয়েছেন তমলুক হ্যামিল্টন হাইস্কুলের ঋত্বিককুমার সাহু (৯৮.৬%)। তৃতীয় দু’জন। বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের তিমিরবরণ দাস এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবনের শাশ্বত রায় (৯৮%)। প্রথম ১০টি স্থানে রয়েছেন ৮০ জন।

শিক্ষকদের মতে, উচ্চ মাধ্যমিকে এখন প্রশ্নের যা ধরন, তাতে নম্বর তোলা খুব কঠিন নয়। হুগলি ব্রাঞ্চ সরকারি স্কুলের ভূগোলের শিক্ষক ভাস্কর মৈত্র বলেন, ‘‘অবজেকটিভ, ছোট প্রশ্নই এখন বেশি। পাঠ্যবই মন দিয়ে পড়লে ১০০ পাওয়া অসম্ভব নয়।’’ উত্তরপাড়া সরকারি স্কুলের দর্শনের শিক্ষক মহম্মদ নাজিরুদ্দিন, বারাসত প্যারীচরণ সরকার সরকারি হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষক অশোককুমার সাঁতরার একই মত।

এ বার মাধ্যমিকের মেধা-তালিকায় কলকাতার মাত্র দু’জনের নাম ছিল। উচ্চ মাধ্যমিকে ১৩। পঞ্চম স্থানে আছেন যাদবপুর বিদ্যাপীঠের ছাত্রী অভ্রদীপ্তা। তিনি এবং বাঁকুড়ার রানিবাঁধ হাইস্কুলের অণিমা গড়াই মেয়েদের মধ্যে প্রথম (৯৭.২%)।

এ বছর পাশের হার ৮৩.৭৫%। গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। নিয়মিত পরীক্ষার্থী ৭,৪৪,৫৭৫। ছাত্রীরাই সংখ্যায় বেশি। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী-সহ বিভিন্ন প্রকল্প মেয়েদের স্কুলে আসতে উৎসাহ জোগাচ্ছে।’’ যে-সব জেলায় ছাত্রীরা পাশের হারে এগিয়ে, তার মধ্যে আছে কলকাতা, দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর। সব থেকে বেশি পাশের হার পূর্ব মেদিনীপুরে। তার পরেই নতুন জেলা কালিম্পং। এর পরে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং কলকাতা। ‘ও’ (৯০-১০০), ‘এ+’ (৮০-৮৯), ‘এ’ (৭০-৭৯), ‘বি+’ (৬০-৬৯), ‘বি’ (৫০-৫৯), ‘সি’ (৪০-৯০), ‘পি’ (৩০-৩৯)— সব গ্রেডেই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। ‘ও’ পেয়েছেন ৫২৪৮ জন। গত বার সংখ্যাটা ছিল ৩৩০২।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন