অতিথিনিবাস, উদ্যানে সেজে উঠবে গনগনি

একেবারে গা ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে শিলাবতী। পাশে ক্ষয়িষ্ণু ভূমি। সূর্য হেলে যখন নদীজলে খেলা করে তখন সেই ভূমি আরও লাল হয়ে ওঠে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গড়বেতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৮ ০২:৩৭
Share:

রূপসী: বাংলার ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ গনগনি। ফাইল চিত্র

জেলা সফরে এসে পর্যটনের উন্নয়নে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই তিনি জানিয়েছিলেন, গড়বেতার গনগনি সাজানো হবে। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “গনগনির কথা আমি বলে দিয়েছি।”

Advertisement

সেই মতো পদক্ষেপ শুরু হয়েছে জেলায়। পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কলকাতার এক সংস্থা কাজটি করছে। প্রাথমিক পরিকল্পনা জেলা প্রশাসনের কাছে জমাও পড়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, এ বার গনগনিতে অতিথিনিবাস, নজরমিনার, উদ্যান সবই গড়ে উঠবে। সেই মতো পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী বলেন, “গনগনির সৌন্দর্য্য দারুণ। এই এলাকা আরও সেজে উঠলে নিশ্চিত ভাবেই পর্যটকদের সুবিধে হবে। বছরভর পর্যটকদের যাতায়াত বাড়বে।”

এখন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দ অর্থে গনগনিতে কিছু কাজ চলছে। তবে এখনও এখানে পর্যটকদের জন্য বিশেষ কোনও ব্যবস্থা নেই। সেই ভাবে পর্যটন পরিকাঠামোও গড়ে ওঠেনি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এতদিনে সেই পরিকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ শুরু হল। পরিকল্পনা তৈরির আগে গনগনি পরিদর্শন করেছে ওই সংস্থার প্রতিনিধি দল। জেলা প্রশাসনের এক দলও একাধিকবার এলাকা পরিদর্শন করেছে। পর্যটনের প্রসারে কি কি করা সম্ভব তা দেখা হয়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মানছেন, “পর্যটনের প্রসারে বেশ কিছু কাজ হবে গনগনিতে।” এই এলাকায় পর্যটনের পরিকাঠামো গড়ে তোলার আর্জি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছিলেন বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীও। বিধায়কের আর্জি শুনে গনগনি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। কি আছে, কি করতে হবে, সেই ব্যাপারে খোঁজ নেন। এরপরই ফাইল নাড়াচাড়া শুরু হয়। রাজ্য ফের জেলার কাছে প্রস্তাব চেয়ে পাঠায়। জেলা প্রশাসনের এক সূত্র মনে করছে, গনগনির উন্নয়নে প্রায় দু’কোটি টাকা বরাদ্দ হতে পারে। সেই মতোই পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। বিধায়ক আশিসবাবু বলেন, “গনগনিকে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হলে পর্যটনেরই প্রসার হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে সেই কথাই বলেছিলাম। এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।”

Advertisement

একেবারে গা ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে শিলাবতী। পাশে ক্ষয়িষ্ণু ভূমি। সূর্য হেলে যখন নদীজলে খেলা করে তখন সেই ভূমি আরও লাল হয়ে ওঠে। অপরূপ সৌন্দর্য্য। এই সৌন্দর্য্যের টানেই এখানে পর্যটকেরা আসেন। বাংলার ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ বলে পরিচিত গনগনির এই পরিবেশের হাল ফেরানোর উদ্যোগও ছিল না এতদিন। নদীপাড় ক্ষয়ে মাঝে মাঝে তৈরি হয়েছে বিস্তৃত পাথুরে ভূমি। ক্ষয়িষ্ণু এই প্রস্তরেই সৌন্দর্য্য ঝলসে ওঠে। অনেকটা আমেরিকার ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’- এর মতোই দেখতে রূপসী বাংলার এই গনগনি। শিলাবতীর চরে প্রকৃতিই তৈরি করেছে এই ক্যানিয়ন। এখানে ভূমিক্ষয়ের প্রবণতা একটু বেশি। গনগনির সঙ্গে জুড়ে রয়েছে পুরাণ এবং ভৌগলিক ব্যাখা। যে ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে এক টুকরো মহাভারত। প্রকৃতির এই সৃষ্টির কাছে যেন মাথা নোয়ায় মানুষের সৃষ্টি। সেই দিক থেকে গনগনি আর পাঁচটা পর্যটনস্থলের থেকে একেবারে আলাদা। একেবারে অন্য রকম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন