Train accident

Train Accident: লাইনেই কি ফাটল! ময়নাগুড়িতে উল্টে গেল বিকানের এক্সপ্রেস, এখনও পর্যন্ত মৃত ৮

পটনা থেকে গুয়াহাটিগামী ওই ট্রেনটি বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।

Advertisement

পার্থপ্রতিম দাস ও রকি চৌধুরী

ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:২৭
Share:

ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটল ময়নাগুড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।

ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটল এ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়িতে। লাইনচ্যুত হয়েছে পটনা থেকে গুয়াহাটিগামী ১৫৬৩৩ আপ বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস। বৃহস্পতিবার ময়নাগুড়ির দোমোহনি এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রেনটির বেশ কয়েকটি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এই দুর্ঘটনার জেরে অনেক যাত্রীর প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আট জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। আহত শতাধিক যাত্রী। তাঁদের উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। রেল এই ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

Advertisement

পটনা থেকে গুয়াহাটিগামী ওই ট্রেনটি বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। দুর্ঘটনার পর ট্রেনটির ৪-৫টি কামরা একেবারে দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে। একটি কামরার উপরে উঠে যায় আর একটি কামরা। একটি কামরা জলেও পড়ে যায়। হতাহতের বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার সময় ট্রেনটির গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, ট্রেনটির ইঞ্জিনের পর থেকে ১২টি কামরা দুর্ঘটনার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৭টি কামরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক বাবে জানা গিয়েছে, ওই ট্রেনটি ছাড়ার সময় তাতে প্রায় ৭০০ যাত্রী ছিলেন। পরে বিভিন্ন স্টেশন থেকে যাত্রীরা নামা-ওঠা করেন।

দুর্ঘটনার পরে রেললাইনের দু’পাশে ছড়িয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় যাত্রীদের। অনেকে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া কামরায় আটকেও পড়েন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। গ্যাস কাটার নিয়ে এসে কামরা কেটে যাত্রীদের বার করার চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আলিপুরদুয়ার থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় উদ্ধারকারী দল। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটি থেকে অনেকেই নিজেই বার হয়ে এসেছেন। বাকিদের উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে রেলের উদ্ধারকারী দলও। ইতিমধ্যেই আশপাশের সদর হাসপাতাল এবং অন্যান্য হাসপাতালের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। হাসপাতালগুলির শল্যচিকিৎসক এবং অস্থি বিশেষজ্ঞদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

Advertisement

দুর্ঘটনাগ্রস্থ ট্রেনে আটকে এক যাত্রী। নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

আহতদের নিয়ে যাওয়ার সময় সবুজ সঙ্কেত ট্রাফিক কর্মীদের। নিজস্ব চিত্র।

আহত যাত্রীদের প্রাথমিক ভাবে ময়নাগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে সেখানকার পরিকাঠামো উপযুক্ত না হওয়ায় সেখান থেকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে আহতদের স্থানান্তরিত করা হয়। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জলপাইগুড়ির বিভিন্ন ব্লক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক এবং নার্সদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৫০টিরও বেশি অ্যাম্বুল্যান্স রওনা দিয়েছে দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দেশে। দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক ভাবে জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু তিন জনের দেহ উদ্ধারের কথা জানান। ১০-১২ জন আহত যাত্রীকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। যদিও পরে সেই সংখ্যাটা বাড়ে। অন্ধকার নেমে যাওয়ায় উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় আলো এবং জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মেডিক্যাল কলেজের দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে।

দোমহনির বাসিন্দা সঞ্জীব নট্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘এখনও রেলের উদ্ধারকারী দল এসে পৌঁছয়নি। এলাকার লোকজন এবং স্থানীয় দমকলকর্মীরা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। ট্রেনের ১২টা কামরা পড়ে রয়েছে। ভিতরে প্রচুর যাত্রী আটকে। তাঁদের সকলেই চিৎকার করছেন। আমরা অত্যন্ত অসহায় বোধ করছি।’’

আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম দিলীপ সিংহ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘লাইনচ্যুত হয়েছে বিকানের এক্সপ্রেস। এখনও হতাহতের খবর নেই। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। আগে উদ্ধার কাজ। পরে অন্য কিছু। চারটে কামরা উল্টেছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছি।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জনসংযোগ আধিকারিক নীলাঞ্জন দেব আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ গুয়াহাটি-বিকানের এক্সপ্রেস লাইনমচ্যূত হয়েছে। আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের নিউ ময়নাগুড়ি এবং নিউ দোমোহনি সেকশনে এই ঘটনা ঘটেছে। রিলিফ ভ্যান যাচ্ছে। ডিআরএম-রাও যাচ্ছেন। বাকি তথ্য এখনও জানতে পারিনি। জানলেই জানাব।’’

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রেলের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে য়াচ্ছেন। এখন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য উদ্ধারকাজ।’’

দুর্ঘটনার সময় রেললাইনের কী অবস্থা ছিল, দুর্ঘটনার জেরে কামরাগুলিতে কী প্রভাব পড়েছে এবং সেগুলি কতটা দূরে ছিটকে পড়েছে তা প্রাথমিক ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি তৈরির প্রাথমিক কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে রেল সূত্রে খবর।

সিগন্যাল ব্যবস্থা ঠিক ছিল বলেই প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। রেলের আধিকারিকদের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, লাইনে ফাটল থেকেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন