বক্সার জঙ্গলে উদ্ধার হাতির মুন্ডুহীন দেহ

শুক্রবার বিকালে টিয়ামারি জঙ্গলে টহল দেওয়ার সময় রায়ডাক নদীতে ওই হাতিটির দেহ ভেসে থাকতে দেখেন বনকর্মীরা। কে বা কারা কেন ওই হাতিটির মুন্ডু কেটে নিয়েছেন তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি বনকর্তারা। হাতিটিকে ভূটানে মারা হয়েছে কি না উঠছে সে প্রশ্নও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০২:২৩
Share:

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে একটি মুন্ডু কাটা হাতির দেহ কে ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে।

Advertisement

শুক্রবার বিকালে টিয়ামারি জঙ্গলে টহল দেওয়ার সময় রায়ডাক নদীতে ওই হাতিটির দেহ ভেসে থাকতে দেখেন বনকর্মীরা। কে বা কারা কেন ওই হাতিটির মুন্ডু কেটে নিয়েছেন তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি বনকর্তারা। হাতিটিকে ভূটানে মারা হয়েছে কি না উঠছে সে প্রশ্নও।

চোরাশিকারিরা ওই হাতিটির দাঁত সহ মাথার অংশ সংগ্রহ করার জন্য মুন্ডু কেটে নিয়ে থাকতে পারে বলে বন কর্তারা প্রাথমিক তদন্তে মনে করছেন। তবে হাতিটি চোরা শিকারিদের লক্ষ্য হলে দাঁত দুটি না কেটে কেন তারা মুন্ডু কাটতে যাবে সেই প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারছেন না বনকর্তারা। হাতিটিকে দু-একদিনের মধ্যে মারা হয়েছে বলে বনকর্তারা জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে ভূটানে মেরে নদীতে ফেলে দিলে এত কম সময়ের হাতির বিশাল দেহ নদীতে ভেসে এতটা পথ চলে আসাটাও রহস্যজনক।

Advertisement

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপ ক্ষেত্র অধিকর্তা হরেকৃষ্ণান বলেন, ‘‘দাঁত ও দেহের অংশ সংগ্রহ করার জন্য হাতিটিকে মারা হয়ে থাকতে পারে। ভূটান থেকে ওই হাতিটির দেহ ভেসে আসতে পারে বলেও আমরা সন্দেহ করছি। দেহ দেখে মনে হচ্ছে হাতিটিকে দুই তিন দিনের মধ্যে মারা হয়েছে। ময়নাতদন্ত করার পর মৃত্যুর বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।

আলিপুরদুয়ারের বিশিষ্ট প্রকৃতিপ্রেমী জীবনকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘চোরাশিকারীরা শুধু দাঁত না কেটে গোটা মাথা কাটার হ্যাপা কেন পোহাতে যাবে তা পরিষ্কার নয়। শুনলাম হাতিটির শুড় খুঁজে পাওয়া যায়নি।’’

বনদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে এই প্রথম কোনও হাতির মুন্ডুকাটা দেহ উদ্ধার হল। এর আগে ২০০৯ সালে মহানন্দা অভয়ারণ্যে শিবচু বনাঞ্চলে মুন্ডকাটা অবস্থায় একটি হাতির দেহ উদ্ধার হয়েছিল। পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ, চোরাশিকার রুখতে স্পেশাল স্কোয়াড গঠনের প্রক্রিয়াও থমকে রয়েছে।

বনদফতর সুত্রে জানা গিয়েছে গত তিন বছরে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের(পূর্ব) বনাঞ্চলে চোরা শিকারির হাতে মোট সাতটি হাতির মৃত্যু হয়েছে। ২০১৩ সালের শেষে দক্ষিণ রায়ডাক রেঞ্জে পূর্ণ বয়স্ক একটি পুরুষ হাতিকে মেরে দাঁত তো বটেই, উপড়ে নেওয়া হয়েছিল তার পায়ের নখ, অন্ত্রের কিছুটা অংশও। শুড়ও কেটে নেওয়া হয়েছিল। হাতিটির শরীরে পাওয়া গিয়েছিল বিষ মেশানো সিসার গুলি। বিষ মাখানো গুলির সাহায্যে হাতিগুলিকে মেরে দাঁত ও দেহাংশ নিয়ে যায় চোরাশিকারিরা।

২০১৪ ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ ও ১৭ তারিখ বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের(পূর্ব)বিভাগের উত্তর রায়ডাকের ৬ নম্বর কম্পার্টমেন্টের জঙ্গল থেকে দুটি হাতির পঁচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। ওই বছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব রাজাভাতখাওয়ার পানবাড়ি জঙ্গল থেকে একটি হাতির মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তিনটি হাতিরই দাঁত কেটে নিয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতিরা। পরপর হাতি মৃত্যুর ঘটনায় যে অসমের চোরাশিকারিদের হাত রয়েছে সে কথা বনকর্তারা বারবার স্বীকারও করেছেন। অসমের চোরা শিকারিদের সঙ্গে ডুয়ার্সের চোরাশিকারিদের যোগ থাকার প্রমাণও মেলে। ফের হাতির মু্ন্ডুহীন ধর উদ্ধারের পর সেই ঘটনাগুলিই এখন ফিরে দেখছেন বনকর্তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement