রাস্তায় পড়ে মা ও শিশু, ত্রাতা ত্রয়ী

অপরিচিত ‘অমানবিক মুখ’ তাঁকে সন্তান ধারণে বাধ্য করেছিল। আর অপরিচিত তিন ‘মানবিক মুখ’ শীতের ভোরে রাস্তার ধারের প্রতীক্ষালয় থেকে সদ্যোজাত-সহ মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে পৌঁছে দিল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

Advertisement

পীষূষ নন্দী

গোঘাট শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৩
Share:

অপরিচিত ‘অমানবিক মুখ’ তাঁকে সন্তান ধারণে বাধ্য করেছিল। আর অপরিচিত তিন ‘মানবিক মুখ’ শীতের ভোরে রাস্তার ধারের প্রতীক্ষালয় থেকে সদ্যোজাত-সহ মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে পৌঁছে দিল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

Advertisement

এই ঠান্ডায় গোঘাটের বেঙ্গাই কলেজ লাগোয়া প্রতীক্ষালয়ে ওই মহিলা কী ভাবে রাত কাটাবেন, এই ভেবে দিন কয়েক আগে তাঁকে চট এনে দিয়েছিলেন ভিলেজ পুলিশ মিলন মালিক। রবিবার ভোরে নাড়ি না-কাটা সদ্যোজাতকে নিয়ে সেই মহিলাকেই কাঁপতে দেখে ফের এগিয়ে আসেন মিলনবাবু। পাশে পান সিভিক ভলান্টিয়ার রাজীব সিংহ এবং আশাকর্মী কবিতা মুখোপাধ্যায়কে। তিন জনের তৎপরতায় মা ও নবজাতক স্থান পেল কামারপুকুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত মণ্ডল জানিয়েছেন, মা ও নবজাতক, দু’জনেই আপাতত সুস্থ অবস্থাতে রয়েছেন। তবে শিশুটিকে মা খাওয়াতে চাইছেন না। নবজাতকের যথাযথ পরিষেবা দেওয়ার আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে। মহিলা কী ভাষায় কথা বলছেন তা বোঝা যাচ্ছে না। থানা এবং প্রশাসনের কাছে খবর পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন পনেরো ধরে ওই মহিলা আরামবাগ-কোতুলপুর রাস্তার ধারের ওই প্রতীক্ষালয়েই রাত কাটাচ্ছিলেন। সারা দিন এ দিক-ও দিক ঘুরে ঘুরে রাস্তায় পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট কুড়িয়ে খেতেন। এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ চা খেতে বাইরে বেরিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা, সিভিক ভলান্টিয়ার রাজীব। মহিলার সঙ্গে সদ্যোজাতকে দেখে তিনিই ফোন করে ডাকেন মিলনকে। মহিলা তখন কাঁপছেন। কখনও শুয়ে পড়ছেন। কখনও আবার উঠে বসছেন। কাঁপছিল তাঁর কোলের শিশুটিও। মিলন ডেকে আনেন কবিতাদেবীকে। তাঁদের ফোন পেয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নার্স, মহিলা সাফাই কর্মী এবং অ্যাম্বুল্যান্স পাঠান ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক।

মিলন বলেছেন, ‘‘মহিলা যে গর্ভবতী, তা আগে খেয়াল করিনি। তা হলে তো আগেই চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে পারতাম।’’

কবিতাদেবী বলেছেন, ‘‘প্রথমে বাচ্চার কাছে যেতে বাধা দিলেও পরে আর মহিলা কিছু বলেনি। নিজের নাম-বাড়ি কিছুই বলতে পারছিল না। ওঁর রক্তমাখা পোশাক বদলে দিই। বাচ্চাটিকে কাপড়ে মুড়ে কোলে নিতে ধীরে ধীরে ওর কাঁপুনি কমে যায়।’’ তিন জনেই জানিয়েছেন, কর্তব্যের তাগিদেই তাঁরা ওই কাজ করেছেন।

ত্রয়ীর এই তৎপরতায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে, একই সঙ্গে তাঁদের বিস্ময়, এমন মহিলাকেও কেউ ধর্ষণ করে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন