নার্সিং স্কুলে জমি রাজ্যের, খোঁজ বেসরকারি পুঁজির 

ভাঁড়ারের অবস্থা সঙ্গিন। তার উপরে আছে বিপুল ঋণের ভার। এই অবস্থায় আর্থিক বোঝা কমাতে ২৭টি নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ার জন্য বেসরকারি লগ্নি চায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। এ ক্ষেত্রে জমি দেবে রাজ্য সরকার আর পুঁজি জোগাবে বেসরকারি সংস্থা।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০৩:৪৪
Share:

সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অন্তত এক শতাংশ রোগী ভিন্‌ রাজ্য বা ভিন্‌ দেশের।

ভাঁড়ারের অবস্থা সঙ্গিন। তার উপরে আছে বিপুল ঋণের ভার। এই অবস্থায় আর্থিক বোঝা কমাতে ২৭টি নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ার জন্য বেসরকারি লগ্নি চায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। এ ক্ষেত্রে জমি দেবে রাজ্য সরকার আর পুঁজি জোগাবে বেসরকারি সংস্থা।

Advertisement

ওই দফতর সূত্রের খবর, গত ২৩ জুলাই একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়, রাজ্য জুড়ে ১০,৩৫৭টি সাব সেন্টারকে স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রে উন্নীত করা হবে। ওই সব কেন্দ্রে কমিউনিটি হেল্‌থ অফিসার পদে প্রশিক্ষিত নার্স নিয়োগের জন্য ২৭টি নতুন জেনারেল নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি ট্রেনিং স্কুল গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আগের সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, ২৭টি নার্সিং স্কুল গড়তে রাজ্যের ভাঁড়ার থেকে আনুমানিক ৬০০ কোটি টাকা খরচ হত। স্কুলগুলি চালাতে প্রতি বছর আরও ১৪০ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছিল। এই বিপুল অর্থের বোঝা কমাতেই বেসরকারি পুঁজি চাইছে রাজ্য। নার্সিং স্কুল গড়তে ইতিমধ্যে কিছু বেসরকারি সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছে বলে সরকারের দাবি।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি উদ্যোগে ২৭টি নার্সিং স্কুল গড়ার কাজ অনেকটা এগিয়েছিল। সিদ্ধান্ত বদল না-হলে এত দিনে স্কুল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যেত বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের অভিমত। তাঁদের বক্তব্য, বেসরকারি সংস্থার হাতে জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়ার বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। কী কী শর্তে বেসরকারি পুঁজিকে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে স্বাগত জানানো হবে, তা চূড়ান্ত করতেও সময় লাগবে। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হল বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশ।

Advertisement

অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্‌থ সার্ভিস ডক্টরসের সম্পাদক চিকিৎসক মানস গুমটা জানান, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের দ্বিতীয় ভাগে সাব সেন্টারগুলিকে স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রে উন্নীত করার কথা ছিল। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনকে সেই দায়িত্ব দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। উন্নীত স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত নার্স, কর্মী নিয়োগের কথা রাজ্যের। ‘‘স্বাস্থ্য-শিক্ষার মতো নার্সিং শিক্ষা ব্যবস্থায় বেসরকারি পুঁজি ঢুকলে স্বাস্থ্য পরিষেবার কোনও লাভ হবে না। আসলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পরিকল্পনা করে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে,’’ অভিযোগ তুলছেন মানসবাবু। নার্সিং ইউনিটির সম্পাদক পার্বতী পাল বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য পরিষেবা মানুষের অধিকার। সেটা খর্ব করা হচ্ছে।’’

স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা অবশ্য বেসরকারি বিনিয়োগে কোনও আশঙ্কার কারণ দেখছেন না। তাঁদের বক্তব্য, বেসরকারি লগ্নি হলেও পুরো বিষয়টিতে রাজ্য সরকারেরই নিয়ন্ত্রণ থাকবে। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘নার্সিং স্কুল গড়তে যে-অর্থ খরচ হত, তা দিয়ে সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার

জন্য দামি যন্ত্র কিনতে পারবে স্বাস্থ্য দফতর। তা ছাড়া আরও কিছু পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনাও রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন